India & World UpdatesHappeningsCulture

আবেগ, ভালবাসা, শ্রদ্ধায় চিরবিদায় সৌমিত্রকে

১৬ নভেম্বর: রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের৷ এর চেয়ে বড় কথা, চোখের জলে বিলীন হলেন অভিনেতা সৌমিত্র। তাঁর বিদায়বেলায় মিলেমিশে একাকার হল সব রঙ। নীতি ও মতের উর্ধ্বে উঠে প্রাধান্য পেল আবেগ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।

রবিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর ঘোষণা করে বেলভিউ ক্লিনিক। হাসপাতাল থেকে গল্ফগ্রিনের বাড়ির পথে এগোয় মরদেহবাহী শকট। অগণিত মানুষ রাস্তায় ভিড় জমাতে শুরু করেন। টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে রবীন্দ্র সদনে পৌঁছয় ফেলুদার নিথর দেহ। কোভিড আতঙ্ক দূরে ঠেলে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন বাংলার মানুষ।

দুই ঘণ্টা রবীন্দ্র সদনে শায়িত থাকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নিষ্প্রাণ দেহ। একে একে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রীরা। অপু-কে শেষ বিদায় জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। কিংবদন্তি অভিনেতাকে ফুল-মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলার চলচ্চিত্র তারকারা। শেষ যাত্রা সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পথে অগ্রসর হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শবদেহবাহী শকট। ততক্ষণে রাস্তার দখল নিয়েছেন শহরবাসী। কারও হাতে ফুল, কারও হাতে মোমবাতি, ছবি, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। গান, কবিতায় শিল্পীকে নিয়ে এগিয়ে চলে শোকযাত্রা। নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গী অভিনেতা তথা সাংসদ দেব, নাট্য পরিচালক তথা অভিনেতা কৌশিক সেন প্রমুখ। একটু পিছনে থেকে মিছিলে পা মেলান বাম নেতারাও। মুখে তাঁদের জয়ধ্বনি ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অমর রহে’।

No description available.মানুষের ভিড় ঠেলে শবদেহবাহী শকট পৌঁছয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। এককোণায় বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর চোখেমুখে হতাশা ও ক্লান্তি। দূরে দাঁড়িয়ে পড়ে বাকরুদ্ধ ভিড়। অকৃত্রিম নিস্তব্ধতা ভেদ করে গর্জে ওঠে রাইফেল। গ্যান স্যালুটে প্রিয় অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানায় রাজ্য। কিছু পরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে বাবাকে শেষ বিদায় জানান কন্যা পৌলমী বসু।

দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি পরিবার কৃতজ্ঞ, এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন পৌলমী। তিনি আরও বলেছেন, তাঁর বাবার যে সম্মান প্রাপ্য ছিল তার থেকেও বেশি তিনি পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজের পরিবারের মতো তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যে তাঁর শোকবার্তায় বলেছেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু এক গভীর দুঃখজনক ঘটনা। বাংলা চলচ্চিত্র চিরকাল তাঁর কাছে ঋণ স্বীকার করবে। তিনি তাঁর পরিবার পরিজনকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। প্রসঙ্গত রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার আগে বাম শাসনে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছের লোক বলেই পরিচিত ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লিখেছেন, “প্রতিভাবান এই শিল্পীর প্রয়াণে অভিনয় জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হল। তবে তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়জুড়ে চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁর পরিবার পরিজনদেরও গভীর সমবেদনা জানাই।”

বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় শিলাইদহের কাছে কয়া নামে একটি গ্রামে আদিবাড়ি ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষদের। পরবর্তীতে তাঁর দাদুর আমল থেকেই নদীয়ার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন তারা। কৃষ্ণনগরেই ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি তাঁর জন্ম হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker