Barak UpdatesHappeningsBreaking News

আত্মহত্যার পর হামলা, দুই তদন্ত কমিটি গড়ল এনআইটি, স্যুমটো মামলা পুলিশের

ওয়েটুবরাক, 16 সেপ্টেম্বরঃ শিলচর এনআইটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র কজো বোকেরের আত্মহত্যার পর শুক্রবার রাতে ছাত্ররা দল বেঁধে বেরিয়ে ডিন অ্যাকাডেমিকস বিনয়কৃষ্ণ রায়ের সরকারি আবাসনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তাঁর গাড়ি, স্কুটার এমন ভাবে ভাঙে যে, মনে হতে পারে, ভয়াবহ কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। ঘরের ভেতরের অবস্থা তথৈবচ। কোনও কিছু অক্ষত নেই। স্ত্রী-পুত্র সহ শৌচাগারে ঢুকে তিনি প্রাণ বাঁচিয়েছেন। পুলিশ সুপার দলবল নিয়ে লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের তাড়িয়ে তাঁদের উদ্ধার করে আনেন। লাঠিচার্জে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী জখম হন। বিনয়বাবুর গাড়ি ছাড়াও তাঁর প্রতিবেশী শিক্ষকের একটি গাড়ি পুরো উল্টে দেয়।

ছাত্রদের বক্তব্য, বিনয়বাবুর জন্যই কজোকে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত জিরো এলাকায় বাড়ি তাঁর। ইন্টারনেটের সংযোগ পাওয়া কষ্টকর। তাই করোনার সময় অনলাইনে ঠিকঠাক ক্লাশ করতে পারেনি। ফলে বেশ কয়েকটি পেপারে তাঁর ব্যাক রয়েছে। বিনয়বাবুর কাছে সেসব ব্যাপারে পরামর্শ চাইতে গিয়ে বারবার কজো প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাঁদের কথায়, শুক্রবার দুপুরেও ওই ছাত্র তাঁর অফিসে গিয়েছিলেন। বিনয়বাবু তাচ্ছিল্য করেই তাকে তাড়িয়ে দেন। এর পরেই কজো আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

বিনয়বাবু ছাত্রদের এইসব অভিযোগ অসত্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, শুক্রবার কজো তাঁর কাছে মোটেও যাননি। ব্যাক পেপার প্রকাশের কথাও ইদানীংকার ঘটনা নয়। দুইমাস আগে এ নিয়ে তাঁদের কথা নয়। তখন তিনি বুঝিয়ে সব বলে দেন। ফলে এই কারণে আত্মহত্যা করলে তখনই করার কথা ছিল। তাতক্ষণিক প্রতিক্রিয়াতেই মানুষ এমন সিদ্ধান্ত নেন। দুমাস পরে তা করার কথা নয়।

এনআইটি কর্তৃপক্ষ শনিবার এ নিয়েই সভা-সমিতি করে। শিক্ষকদের বৈঠকে ডেকে কথা বলেন ডিরেক্টর-রেজিস্ট্রার। ব্যাপক ভাঙচুর, ডিনকে প্রাণে মারার চেষ্টা ইত্যাদি ঘটনায় জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি দাবি করেন শিক্ষকরা।  এমন নিরাপত্তাহীনতায় ক্লাশ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন একাংশ শিক্ষক। ডিরেক্টর-রেজিস্ট্রার তাঁদের ক্ষোভের কথা মেনে নিয়েও বলেন, পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং এনআইটি-ও দুটি তদন্ত কমিটি গড়ে দিয়েছে। ফলে দোষীদের শাস্তি হবে। এনআইটিতেপঠনপাঠন নিয়মিত করার জন্য তাঁরা শিক্ষকদের উদ্দেশে আহ্বান জানান।

রেজিস্ট্রার কেএল বৈষ্ণব জানান, কজো বোকেরের আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান এবং এর পেছনে প্রকৃতই কেউ দায়ী কিনা, তা খতিয়ে দেখবে এক কমিটি, অ্ন্য কমিটি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত করবে।

এ দিকে, কজোর বাবা অরুণা্চল প্রদেশ থেকে এসে শনিবার ছেলের মৃতদেহ সমঝে নিয়েছেন। মাতৃহারা ছেলের দেহের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারও সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। ছাত্রছাত্রীরা এ দিন সন্ধ্যায় এনআইটি চত্বরে মোমবাতি মিছিল করে। পুলিশ-সিআরপিতে ছয়লাপ গোটা এলাকা। পুুলিশ সুপার নোমল মাহাত্তা জানান, ডিনকে উদ্ধার করতে এলে ছাত্ররা তাঁদের ওপরও হামলা করে। পাথর, ফাঁকা বোতল ছুঁড়ে মারে। এসপিও গায়েও লাগে একটি বোতল। এর পরই পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের তাড়িয়ে দেয়। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তারা একটি স্যুমটো মামলা নিয়েছেন। সংবাদকর্মীদের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাতেও একটি মামলা হয়েছে। এজাহার দিচ্ছে এনআইটি কর্তৃপক্ষও। এ দিন এনআইটির একদল ছাত্র পুলিশ সুপার মাহাত্তার সঙ্গে দেখা করে। তারা তাঁর কাছে মাফ চেয়েছেন বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker