NE UpdatesHappeningsCultureBreaking News

বাংলার মনীষীদের পথেই এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত আদর্শের বিকাশ হতে পারে : রাজ্যপাল

অসমের রাজভবনের উদ্যোগে "পশ্চিমবঙ্গ দিবস", ব্যবস্থাপনায় বাংলা সাহিত্য সভা

ওয়ে টু বরাক, ২০ জুন : অসমের রাজভবনের উদ্যোগে গত বছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় ২০ জুন বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হল “পশ্চিমবঙ্গ দিবস”। গুয়াহাটি মহানগরীর অভিজাত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়্যাল গ্লোবাল স্কুলের প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত জমকালো এই অনুষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল অসমের সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক সংস্থা বাংলা সাহিত্য সভা অসম।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রহে ও পরামর্শে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে জনসংযোগ ও সাংস্কৃতিক ভাব মিনিময়ের জন্য সারা দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যের রাজভবনগুলোর উদ্যোগে রাজ্য-দিবস পালনের একটি সুন্দর পরম্পরা শুরু হয়েছে। অসমের রাজভবন গত এক বছর ধরে দেশের সমস্ত “রাজ্য দিবস” পালন করেছে। তার মধ্যে বিশালভাবে “পশ্চিমবঙ্গ দিবস”ও ছিল। গতবার উন্নতমানের অনুষ্ঠান পরিবেশন করার পর এ বারও বাংলা সাহিত্য সভাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানান অসমের রাজভবনের প্রধান আধিকারিক মীনাক্ষি সুন্দরম। এবারের এই মহতী অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিবসটির তাৎপর্য বিষয়ে বিশেষ বক্তৃতা করেন কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা বাংলা সাহিত্য সভার সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী। তিনি রামায়ণ-মহাভারতের যুগ থেকে আহোম আমল মধ্য যুগ ধরে উনিশ শতক পর্যন্ত বঙ্গ-অসম সম্পর্কের নানা দিক তথ্য সহ তুলে ধরেন।

এরপর অসমের পর্যটন মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া অসমের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক নিয়ে বাংলায় সুন্দর বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, অসমের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক সুপ্রাচীন কালের। সেটা সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, প্রীতির সম্পর্ক। তিনি বলেন, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত আন্দোলনের এই বিস্তারের ক্ষেত্রে অসম ও বাংলার সম্পর্ক আরও কাছাকাছি আসা দরকার।

অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হিসেবে মূল বক্তব্য প্রদান করেন রাজ্যপাল গোলাবচান্দ কাটারিয়া। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত আদর্শকে সামনে নিয়ে রাজভবন ভারতের সব রাজ্য দিবসই পালন করে আসছে। পশ্চিমবঙ্গ দিবস তারই অন্তর্গত। একসময় সমগ্র ভারতকে শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিয়েছিল বঙ্গ দেশ। তিনি ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, ঋষি অরবিন্দ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বা ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সহ বঙ্গীয় মনীষীগণের অবদান, চিন্তা, মননকে স্মরণ করে বলেন, নতুন ভারত জাগছে, এই নবজাগরণে বঙ্গীয় নবজাগরণের পথিকৃৎদের মার্গদর্শন আমাদের পাথেয় হতে পারে। তিনি অসম ও বঙ্গের সৌভ্রাতৃত্ব ও প্রীতি সৌহার্দ্য এবং সাংস্কৃতিক ভাববিনিময়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।তিনি আরও বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল অভিকেন্দ্র ছিল কলকাতা। বঙ্গই প্রথম বিপ্লব শুরু করেছিল।

এ দিন অসমের অসমিয়া ও বাঙালি উভয় গোষ্ঠীর বহু কৃতবিদ্য মানুষদের গৌরবময় উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড অমলেন্দু চক্রবর্তী। ছিলেন কটন বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ। সব শেষে ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভোজনপর্ব। এ দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর রমেশচন্দ্র ডেকা বেহালাতে ভূপেন হাজরিকার গান বাজিয়ে শোনান। সঙ্গে ছিলেন তাঁরই ছাত্র তরুণ উদ্যোগী তথা বাংলা সাহিত্য সভার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তুহিন কাশ্যপ দেব।

এরপর বাংলা সাহিত্য সভার শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত হয় বাংলা ও হিন্দিতে “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে”। এ দিন ছিল অসমের পবিত্র রাভা দিবস। কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভাকে স্মরণ করে পরিবেশন করা হয় “সুররে দেউলরে”। অসম-বঙ্গ মৈত্রীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ড. ভূপেন হাজরিকার অমর সংগীত “মানুষ মানুষের জন্যে” ছিল বাড়তি পাওনা। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বাউল শিল্পী তথা কর্মসূত্রে অসমের বাসিন্দা কার্তিক বাউলের “গোলেমালে গোলেমালে পিরিত কইরো না” অনুষ্ঠানকে চরমে নিয়ে যায়। বাঙালিরা শেষ পাতে পায়েস খায়। তাই এদিন শেষ পর্বে ছিল “শ্যামের বাঁশি” দলের ধামাইল নাচ।

সব হবে, আর বাঙালির ভোজন হবে না? অনুষ্ঠানের শেষে গুয়াহাটির প্রসিদ্ধ খাদ্যপরিবেশক সোনা দত্তের নেতৃত্বে ছিল ঝাল মুড়ি, মোচার চপ, পাটিসাপটা, পায়েশ, বাসন্তী পোলাও, ছানার ডালনা, বুটের ডাল সহযোগে ষোল আনা বাঙালিয়ানার আয়োজন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker