Barak UpdatesHappeningsBreaking News
আইনজীবী অজয় দেবলস্কর প্রয়াত
ওয়েটুবরাক, ২৮ জুন: বিশিষ্ট আইনজীবী, সঙ্গীত-বাদ্যের বোদ্ধা ব্যক্তিত্ব অজয় দেবলস্করের জীবনাবসান ঘটেছে৷ বৃহস্পতিবার রাত একটায় তাঁর ইটখোলাস্থিত বাসভবনে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন৷ আটমাস ছিলেন একেবারে শয্যাশায়ী৷ বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর৷ অজয়বাবু রেখে গিয়েছেন একমাত্র পুত্র, দুই নাতি, পুত্রবধূ সহ অগণিত আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের৷ তাঁর স্ত্রী মালুগ্রাম বালিকা মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা অনুরাধা দেবলস্কর আগেই প্রয়াত হয়েছেন৷ পুত্র অনিন্দ্য দেবলস্কর পাওয়ার গ্রিড করপোরেশনের ডেপুটি ম্যানেজার৷ বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর তাঁর অনুজ৷
শুক্রবার বেলা বারোটায় অজয়বাবুর দেহ নিয়ে শ্মশানে পৌঁছালে শহরের বিশিষ্টজনেরা তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত, ড. জয়ন্ত দেবরায়, সুপ্রদীপ দত্তরায়, সুশান্ত সেন, শৈবাল গুপ্ত, আইনজীবী রাতুল দাস, আইনজীবী শুদ্ধস্বত্ব চৌধুরী প্রমুখ৷
স্বাধীনতা সংগ্রামী, আসাম বিধান পরিষদের সদস্য প্রয়াত যতীন্দ্রমোহন দেবলস্করের চতুর্থ পুত্র অজয় দেবলস্কর বড়খলা রাজা গোবিন্দচন্দ্র মেমোরিয়াল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে মাধ্যমিক পাশ করেন৷ জিসি কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন৷ পরে চাকরির সন্ধানে চলে যান শিলিগুড়ি, বোনের বাড়িতে৷ কিন্তু তাঁর বোন-ভগ্নীপতি তাঁকে ভর্তি করে দেন শিলিগুড়ি কলেজে৷ সেখান থেকেই তিনি স্নাতক হন৷ শিলিগুড়ি কলেজ ছাত্র সংসদে সাংস্কৃতিক সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ পরে চাকরির চিন্তা ছেড়ে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন৷ ভর্তি হন একে চন্দ আইন মহাবিদ্যালয়ে৷ ১৯৭৫ সালে অজয়বাবু এলএলবি ডিগ্রি নেন৷ ১৯৭৬ সালে হয় স্বপ্নপূরণ, শিলচর বার অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন তিনি৷ এরপর আইনজীবী হিসাবে যথেষ্ট মর্যাদা অর্জন করেন৷ একবার ছিলেন শিলচর আদালতের অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর, একবার ফরেনার্স ট্রাইবুনালের অ্যাসিস্ট্যান্ট গভর্নমেন্ট প্লিডার৷ কোভিডের সময় সেই যে আদালতে যাওয়া বন্ধ হয়েছিল, পরে একে আর নিয়মিত করেননি৷ ডিমাপুর আদালতের কিছুদিনের কথা বাদ দিলে তিনি প্রায় ৪৫ বছর শিলচর আদালতেই কাটিয়েছেন৷ ২০১২-১৩ সালে তিনি শিলচর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন৷
পেশার বাইরেও অজয়বাবু বিশাল কৃতিত্বের ছাপ রেখে গিয়েছেন৷ তিনি ছিলেন যন্ত্রশিল্পী৷ খুব ভাল তবলা বাজাতেন৷ ছিলেন সুরকার, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতাও৷ সঙ্গীতচক্র ও জয়দেব সঙ্গীত সম্মেলনের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা কর্মকর্তা৷ বিখ্যাত শিল্পী বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে ছিল তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক৷ কয়েকবার বুদ্ধদেববাবু দেবলস্কর বাড়িতে রাত কাটান৷
তাঁর প্রয়াণে শোক ব্যক্ত করে বিধায়ক কৌশিক রায় বলেন, তিনি শুধু একজন বর্ষীয়ান আইনজীবীই ছিলেন না, ছিলেন একজন ভালো মনের মানুষ৷
শিলচর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুলাল মিত্র জানান, আগামীকাল শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় প্রাক্তন সভাপতি অজয় দেবলস্করের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে৷