NE UpdatesBarak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভোটের কাজে কেন, হাইকোর্টে আউটা
AUTA files writ in High Court for detailing Assam Univ teachers in election work

ওয়েটুবরাক, ২৫ এপ্রিলঃ বারবার আপত্তির পরও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করায় গৌহাটি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করল আসাম ইউনিভার্সিটি টিচারস অ্যাসোসিয়েশন (আউটা)। একে বেআইনি বলে উল্লেখ করে অভিযুক্ত করা হয়েছে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, অসমের মুখ্য নির্বাচন অফিসার, অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, কাছাড়ের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন অফিসার, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি, কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকারকে।

আউটা আদালতকে জানিয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হতেই জেলা নির্বাচন অফিসার তথা জেলাশাসক ৩জন সহকারী অধ্যাপককে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মাস্টার ট্রেনার হিসেবে নিযুক্ত করেন। জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৯ জন সহকারী অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট অফিসার ও শিক্ষককে ‘অ্যাসেম্বলি লেভেল মাস্টার ট্রেনারে’র দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এর কিছুদিন পর ২৫৬ জনের একটি তালিকা পাঠিয়ে তাঁদের পোলিং অফিসারের প্রশিক্ষণের জন্য উপাচার্যের কাছে কললেটার পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্য থেকে ২৪৮জনকে ভোটের দিনে নিযুক্ত করা হয়। শেষপর্যন্ত ডিউটি পড়ে ২২৭ জনের। এ ছাড়া আরও ১৯জনকে ডেকে নেওয়া হয় অশীতিপর বা প্রতিবন্ধী ভোটারদের বাড়িঘর থেকে ভোট সংগ্রহ করে আনার জন্য। অ্যাসেম্বলি লেভেল মাস্টার ট্রেনারদের মধ্যে ৩৩জন একমাস ধরে নির্বাচনী কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। এখন আবার ৭০জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ভোটগণনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আউটার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সেনগুপ্ত বলেন, এই অনৈতিক কাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চলে আসছে। গত কয়েকটি নির্বাচনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১১ সালে মোট ২৫০ শিক্ষকের মধ্য থেকে ১৬৮কে, ২০১৪ সালে ২৯৭ শিক্ষকের মধ্যে ২০৬জনকে, ২০১৬ সালে ২৮৫-র মধ্যে ১৯৭ এবং ২০১৮ সালে ২৯৮ শিক্ষকের মধ্যে ১৯৭জনকে প্রিসাইডিং অফিসার ও মাইক্রো অবজারভার নিয়োগ করা হয়েছিল।

দেবাশিসবাবুর কথায়, প্রায় প্রতি বছর ভোট হয়। প্রতিটিতে তাঁদের নির্বাচনী কাজে সময় দিতে হয়। বিশেষ করে, মাস্টার ট্রেনারদের মাসভর এ নিয়েই ব্যস্ততা। ফলে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বা গবেষণায় মনোযোগ দিতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৈক্ষিক দিক ওই সময় প্রায় পুরো পঙ্গু হয়ে পড়ে। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ শতাধিক পিএইচডি স্কলার রয়েছেন। ৪৩জন করছেন এমফিল।

করোনা অতিমারির উল্লেখ করে আউটা সাধারণ সম্পাদক বলেন, এমনিতেই এ জন্য গবেষণার বিরাট ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এক পর যখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছিল, তখনই নির্বাচনের ডাক পড়ে। গবেষকদের থিসিস জমার সময় বেঁধে দেওয়া থাকে, শিক্ষকদের অনুপস্থিতির দরুন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা জমা করতে না পারলে তাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।

ন্যাকের পর্যবেক্ষণও যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সে কথা জানিয়ে আউটা জানায়, শিক্ষকদের লম্বা অনুপস্থিতি তাদের পর্যবেক্ষণে প্রভাব ফেলতে পারে। সে ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, তেমনি লোকসানে পড়বেন শিক্ষকরাও। অ্যাকাডেমিক পারফরমেন্স ইন্ডিকেটরের স্কোর দেখে যে তাঁদের পদোন্নতি মেলে! নির্দিষ্ট সময়ে রেঙ্ক-গ্রেড না মিললে বিরাট আর্থিক ক্ষতিরও আশঙ্কা থাকে। আর ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতির কথা তো বলেই লাভ নেই। এখন সেমিস্টার সিস্টেমে এত সিলেবাস যে পড়ে বা পড়়িয়ে শেষ করা যায় না, বলেন দেবাশিসবাবু৷ তিনি জানান, দেশে এই সময়ে ৫৪টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। খুব কম সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হয়। যাদের লাগানো হয়, তাঁদেরও মাত্র কয়েকজনকে মাইক্রো অবজারভার পদে নিযুক্ত করা হয়। এমনকী  গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়কেও এ বারের নির্বাচনে মাত্র ৩৬জন শিক্ষককে ছাড়তে হয়েছিল।

একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একেকরকম আচরণ করা হলে কি রেঙ্কিংয়ের জন্য সম-লড়াই হচ্ছে? ক্লাশের সংখ্যার এত ব্যবধান হলে তো আসাম বিশ্ববিদ্যালয় রেঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়বেই, বললেন দেবাশিস সেনগুপ্ত। তিনি জেলা নির্বাচন অফিসারের এ ভাবে নির্বাচনী কাজের জন্য ডেকে নেওয়ার ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সঙ্গে এও বলেন, তাঁদের যোগ্যতারও অপচয় করা হয়। আরও কম যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মচারীদের দিয়ে যে কাজ করানো যায়, সেইসব কাজে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা এ সব ব্যাপারে হাইকোর্টের কাছে সুবিচার প্রার্থনা করেন৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker