Barak UpdatesSportsBreaking News
বাড়ি বাড়ি গ্যাস সরবরাহ করছেন রাজ্য দলের ক্রিকেটার রাজু দাস!
ওয়েটুবরাক, ৩০ জুন: গত কয়েক বছর ধরে কাঁধের চোটে ভুগছেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন অস্ত্রোপচার করতে হবে। তাতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা দরকার। জীবিকা নির্বাহ করা যেখানে কঠিন , সেখানে অস্ত্রোপচারের কথা ভাবা বিলাসিতার নামান্তর। তাই বলে বসে থাকতে নারাজ। জীবনের এক কঠিন ইনিংসের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্য দলে খেলা ক্রিকেটার রাজু দাস। সরকারি চাকরি না পেয়ে হতাশ এই ক্রিকেটার। নিরুপায় হয়ে একটি গ্যাস এজেন্সির ‘ ডেলিভারি বয়’-এর কাজ করছেন ডানহাতি এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান।
রাজ্য দলে খেলার পরেও একটি চাকরি পাননি। কিছুটা হতাশ বত্রিশ বছর বয়সী রাজু। খেলার পাশাপাশি জীবন ধারণের জন্য কোচিঙের কথা ভেবেছিলেন তিনি। কোচিং করানো শুরুও করেছিলেন। কিন্তু তাতে নিজের খেলায় সমস্যা হচ্ছিল। তাই কোচিং ছেড়ে দেন। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতে গেলেও একই সমস্যা। জীবন তো চালাতে হবে। তাই একটি গ্যাস এজেন্সির ‘ ডেলিভারি বয়’-এর চাকরি বেছে নিলেন রাজু।
রাজু বললেন, “২০১৭ সালে গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে গিয়ে কাঁধে চোট পেয়েছিলাম। তখন খেলোয়াড় জীবন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছিল। চিকিৎসার জন্য আসাম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দ্বারস্থ হই। এসিএ আমাকে পাঠিয়েছিল গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালে রেফার করা হয়। দিল্লিতে চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে অর্থের সমস্যা হয়। তখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিজেন্দ্রপ্রসাদ সিং ও শিলচরের তৎকালীন বিধায়ক দিলীপ পাল।” দিলীপবাবু দিয়েছিলেন পনেরো হাজার টাকা। সঙ্গে দিয়েছিলেন একজন চিকিৎসককে লেখা একটি চিঠি। সেই চিঠি নিয়ে এইমস হাসপাতালে গেলে চিকিতসাও হয়। তাঁর কথায়, “ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত ফিজিও করতে থাকলাম। খেলাও শুরু করলাম। রানও পাচ্ছি। কথা হলো কাঁধের চোট সারেনি। ব্যাটিং করতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ফিল্ডিং করতে গিয়েই নানারকম সমস্যা।”
রাজুর কথাতেই জানা যায়, ২০১৯ সালে গুয়াহাটিতে শোলডার স্পেশালিস্ট ডাঃ দীপক ভাটিয়াকে দেখিয়েছিলেন। তিনি অস্ত্রোপচারের কথা বললেন। এতে দুই লক্ষ টাকা খরচ হবে বলেও জানিয়েছিলেন।
গত বছর রাজু গিয়েছিলেন দিল্লি । ফেরার পথে পাটনায় নেমেছিলেন । পারস হাসপাতালে চিকিৎসা করালেন। সেখানেও চিকিৎসকেরা জানান, ‘অস্ত্রোপচার লাগবে। এতে খরচ হবে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা । সঙ্গে থাকতে হবে একজন অ্যাটেনডেন্ট’। অস্ত্রোপচারে দেড় লক্ষ টাকা লাগলেও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে আরওকিছু অর্থ লাগবে তাঁর। সবকিছু মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষ টাকা দরকার। মোটামুটি ঠিক করে নিয়েছেন অস্ত্রোপচার করাবেন। ইচ্ছে ছিল মে -জুন মাসেই পাটনা যাওয়ার। কিন্তু করোনার জন্য সেটা হলো না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অস্ত্রোপচার করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা দাঁড়িয়েছে অর্থ।
রাজু বললেন, ‘ ক্রিকেট ছাড়া আমি চলতে পারব না। খেলতে হলে আমার অস্ত্রোপচার করাতে হবে। আগামী দুটি মরশুমের জন্য একটি ক্লাবের সঙ্গে এক লক্ষ টাকার একটি চুক্তি হয়েছে। অবশ্য কাগজে কলমে এখনও কিছু হয়নি। পুরো বিষয়টি মুখে মুখে। তারা পাটনায় যাওয়ার সময় এক লক্ষ দেবে বলে জানিয়েছে।” বাকি অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছেন রাজু। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চিঠি দিয়েছেন। ডিএসএ তাঁর ব্যাপারে একটি ই-মেল পাঠিয়েছে এসিএ-র কাছে। আশা করা হচ্ছে, কিছু সাহায্য মিলবে।
উল্লেখ্য, গত দশকের প্রথম দিকে স্কুল ক্রিকেট দিয়ে ক্রিকেট মাঠ আত্মপ্রকাশ ঘটে রাজু দাসের। কিছুদিনের মধ্যে নিজের প্রতিভার পরিচয় দেন। স্থানীয় ক্রিকেটে ক্রমাগত পারফরম্যান্স করতে থাকেন। সুযোগ পেলেন জেলা দলে। পারফরম্যান্স অব্যাহত থাকে সেখানেও। জেলা দলের হয়ে পারফরম্যান্স করার সুবাদে ২০০৪- ০৫ সালে অনূর্ধ্ব ১৭ রাজ্য দলে সুযোগ পেলেন রাজু। একটানা তিন মরশুম অনূর্ধ্ব ১৭ রাজ্য দলে খেলেন তিনি। পরবর্তীতে খেলেন রাজ্যের অনূর্ধ্ব ১৯ দলেও। ২০১৪ -১৫ সালে আর এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। পেলেন রাজ্যের অনূর্ধ্ব ২৩ দলে সুযোগ। পারফরম্যান্স ভালো ছিল। ২০১৫ সালে গেলেন রনজি ট্রায়ালে। অবশ্য ট্রায়ালের ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে রনজি দলে সুযোগ আর পাননি। রঞ্জি না খেলতে পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে চলছেন দাপিয়ে।