Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News
কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন সুস্মিতা দেব
সাক্ষাৎকার...প্রথম পর্ব
ওয়েটুবরাক, ২০ আগস্টঃ ১৬ আগস্ট থেকে তিনিই বরাক উপত্যকায় রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রে। আর ঠিক ১৬ তারিখের কথা বললে, শুধু বরাক উপত্যকা কেন, জাতীয় রাজনীতিতে সেদিন একটিই বিষয়, মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। একে মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি, দ্বিতীয়ত তিনি তৃণমূল কংগ্রেস যোগ দিয়েছেন। তাই প্রশ্নের শেষ নেই। ঝুলি ভরে প্রশ্ন নিয়েই ওয়েটুবরাক কথা বলে প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেবের সঙ্গে।
ওয়েটুবরাকঃ আচমকা দলত্যাগ! কী কারণ?
সুস্মিতাঃ হ্যাঁ, আচমকাই। সত্যি বললে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা আমি ১৪ আগস্ট রাতে নিয়েছি। পরদিন রাত সাড়ে নয়টায় সোনিয়া গান্ধীর কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠাই।
ওয়েটুবরাকঃ কারণটা কী?
সুস্মিতাঃ আসলে কংগ্রেস ছাড়ার জন্য ২০১৫ থেকেই আমার কাছে অফার আসছিল। কিন্তু তখন এ নিয়ে চিন্তাই করিনি। কখনও সেভাবে ভাবিইনি। তবে একটা বিষয়ে আমি নিজের কাছে পরিষ্কার ছিলাম, যাই করি না কেন, বিজেপিতে যাব না। পদত্যাগের কারণ নিয়ে অনেক অনুমাননির্ভর কথা হচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয় বলে রাখি, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মহাজোট গঠন কিংবা টিকিট বণ্টন নিয়ে আমার ক্ষোভ হলেও কেউ বলতে পারবেন না, কম কাজ করেছি। পনেরো আসনে নয়টিতে জিতেছে জোট, এ কম কথা নয়। অন্য কোথাও এমন ফল হয়নি। এর কৃতিত্ব শুধুই আমার, এ দাবি করব না।
ওয়েটুবরাকঃ তবে কারণটা কী?
সুস্মিতাঃ বয়স তো কম হয়নি। ৪৯-এ পড়ছি। পঞ্চাশ হলো তো জীবনেরই অর্ধেক শেষ। একটা বয়সে চিন্তা করতে হয়, কী করছি, তাতে কী হবে। আমিও তা ভাবছিলাম। বরাক উপত্যকার সঙ্গে দলের অবস্থানও নিজে নিজেই বিশ্লেষণ করি। সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছিলাম না। ২০২৪-এর ভোটে কী হবে, যোগ-বিয়োগ করি। এমপি থাকার সময়েই তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল। মমতাদি দিল্লি গেলে দেখা করতাম। এ বার কে কাকে প্রস্তাব দিয়েছে, সে বড় কথা নয়। আমি কলকাতায় গিয়ে কথা বলেছি, এ তো ঠিক। ইস্তফা না দিয়েও এই কথাবার্তাটা করতে পারতাম। কিন্তু রাজনীতিতে মর্যাদা বলে তো একটা ব্যাপার রয়েছে। তাই আগে ইস্তফা পাঠিয়েছি। পরে ওই রাতেই ডেরেক ও-ব্রায়েনের পরামর্শে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলি। তাঁর ফোনেই মমতাদির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করছিলেন।
আমি বলি, কাল এলে আমার মার সঙ্গে একবার কথা বলবেন। পরদিন কলকাতায় গিয়ে প্রথমে অভিষেকের সঙ্গে কথা হয়। পরে তাঁদের সচিবালয়ে গিয়ে মমতাদির সঙ্গে দেখা করি। মনেই হয়নি, একজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি। সেখানেও বাবার কথাই বেশি হয়। বলছিলেন, একবার নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিতে যান। বাবা সেখানে ফোন করে জানালেন, পূজো দিয়ে আর কী হবে! ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে গিয়েছে।
ওয়েটুবরাকঃ হ্যাঁ, ১৯৮৮ সালে একবার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছিল।
সুস্মিতাঃ কথার মাঝেই আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছিলেন মমতাদি৷ বললেন, আমিও ৩০ বছর কংগ্রেস করেছি। রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কাজ করেছি। জানি, তোমার মনের অবস্থা। আর ২৪-এতো একসঙ্গেই কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মাকে ফোন লাগালেন। বললেন, চিন্তা করবেন না, আমি তাঁর দায়িত্ব নিলাম। শুধু একটু পরিশ্রম করতে হবে। মা জানালেন, সেটা ও পারবে। পরিশ্রমী মেয়ে।
ওয়েটুবরাকঃ পরবর্তী তিনদিনের কী অভিজ্ঞতা…
সুস্মিতাঃ তৃণমূল কংগ্রেস এখন আর পশ্চিমবঙ্গ বা বাঙালির দল থাকেনি। প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয়। গত তিনদিনে কত যে ফোন এসেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা থেকেও। আসামেরও বহু জায়গা থেকে ফোন পেয়েছি। সবাই বলছেন, ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ওয়েটুবরাকঃ কংগ্রেসের সঙ্গে তো পারিবারিক সম্পর্ক ছিল..
সুস্মিতাঃ হ্যাঁ, তিন-চার প্রজন্মের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক ছাড়াটা খুবই কঠিন ছিল। (চশমা খুলে একবার চোখদুটো মুছে নিলেন।) তিন-চারদিন ঘুমোতে পারিনি। মনে পড়ে, শিলচর পুরসভার সভাপতি পদে আস্থা ভোটে আমার হেরে যাওয়া এবং পরে ফিরে আসার নানা কথা। (চশমাটা খুলে টেবিলের ওপর রাখলেন। দু চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। ) কিন্তু আমি তো একা নই। সেই সময় থেকে আমার সঙ্গে বহু কর্মী। কিন্তু কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারছি না, তোরা কী করবি। তাহলে এও এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়ে যায়। তাঁরা আমার জন্য কেন দল ছাড়বে! তৃণমূল কংগ্রেসকে এখানে দাঁড় করাতে কত বছর লাগবে কে জানে! এ বড় ঝুঁকির ব্যাপার।
ওয়েটুবরাকঃ এখন তো দেখছি, আপনার সঙ্গের সবাই রয়েই গিয়েছেন।
সুস্মিতাঃ হ্যাঁ, দলত্যাগের খবর প্রকাশের পর অনেকে যোগাযোগ করেন। বলেন, আমরাও তৃণমূলে যাব। আমি বলেছি, দুই নৌকায় পা দিয়ে হবে না। কংগ্রেস ছাড়তে বলছি না, কিন্তু তৃণমূলে আসার সিদ্ধান্ত নিলে ইস্তফা দিয়ে আসতে হবে। এরা তাই করেছেন। বিমানবন্দরে কাল সবাইকে দেখে আমি বিস্মিত। ভেবেছিলাম, ১৫-২০ জন মানুষ আসবেন স্বাগত জানাতে। আবারও বলি, এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে, বিজেপি নয়, তৃণমূল কংগ্রেসে যাওয়া বলে কথা!
ওয়েটুবরাকঃ অভিযোগ, বিজেপি-তে যেতে চাইছিলেন, স্থানীয় নেতৃত্বের আপত্তিতে হয়ে ওঠেনি।
সুস্মিতাঃ কৌশিক রায় বলেছেন তো ! আমি কৌশিকদাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আপনার বক্তব্যের প্রমাণ দিন, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। শুধু হিমন্তদা নন, তাঁর চেয়ে বড় বড় নেতা তাদের দলে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি সবাইকেই বিনয়ের সঙ্গে জানিয়েছি, আদর্শগত সংঘাতের জন্য আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে না।
ওয়েটুবরাকঃ দল ছাডার পর কংগ্রেস নেতাদের কী প্রতিক্রিয়া, কেউ যোগাযোগ করেছিলেন?
সুস্মিতাঃ কেসি বেণুগোপাল ফোন করেছিলেন। শশী তারুর, পৃথ্বীরাজও ফোন করেছেন। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংহ আমার দিল্লির বাড়ি গিয়েছিলেন। তখন আমি ফ্লাইটে। আমার দিদি বাড়িতে ছিলেন।
ওয়েটুবরাকঃ তাহলে কংগ্রেসের ভুলটা কী ছিল?
সুস্মিতাঃ এটা ঠিক হবে না, আমি যদি বলি, সোনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে সময় পাইনি। এটা ঠিক হবে না, আমি যদি বলি, তাঁরা আমার এসএমএসের রেসপন্স করেন না। গান্ধী পরিবারের প্রতি আমার কোন রাগ-ক্ষোভ নেই। তবে নিশ্চিতভাবেই আমার কিছু ইস্যু ছিল, এ কথা তো স্বীকার করতে হবে। তাই বলে রাহুল গান্ধীর কুকুরকে বিস্কুট খাওয়ানোর গল্প শোনাতে পারব না।
ওয়েটুবরাকঃ কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়াতেই কি তৃণমূলে গিয়েছেন?
সুস্মিতাঃ দেখলাম, অনেকে এমনটাও বলছেন। আমি বলি, বোঝাপড়ার প্রশ্ন ওঠে না। এমন বোঝাপড়া করলে এটাও এক ধরনের হটকারিতা। এ আমার কাছে পাবেন না। এমন কথা সকল অনুমানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।
ওয়েটুবরাকঃ ত্রিপুরায় যাওয়া নিয়ে কোনও মতবিরোধ…
সু্স্মিতাঃ মতবিরোধ নয়। সোনিয়া গান্ধী একদিন ডেকে বললেন, তুমি ত্রিপুরার পর্যবেক্ষক হয়ে যাও। তখন আসাম নির্বাচনের পাঁচ মাস বাকি। আমি ভাবি, এ দিকে তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। ম্যাডামকে বুঝিয়ে বলি। সে চাপ্টার ওখানেই শেষ। আসামের সে ভোটের পরে তিনি আর ও নিয়ে কথা বলেননি।
(দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব আগামীকাল)