AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/৪ঃ নেহরুই বলেছিলেন, দেশ বিভাজনে বিচ্ছিন্নদের ভালোমন্দে শরিক হবোCitizenship/4: Nehru said that if the country is partitioned, nation will stand beside the migrants
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনা হয়নি। তবে সংসদে আর সুযোগ না থাকলেও সংসদের বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর চতুর্থ কিস্তি।)
১৩ ফেব্রুয়ারিঃ ১.৩ ভারতীয় সংবিধানের দ্বিতীয় খণ্ড নাগরিকত্ব সংশ্লিষ্ট। সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময়ে কাদের দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে, তা এর পঞ্চম থেকে নবম অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদে প্রণীত আইনের মাধ্যমে কাদের নাগরিকত্ব থাকবে, দশম অনুচ্ছেদে তা বলা হয়েছে। ১১ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের অধিকার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়ে সংসদের ক্ষমতা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। অন্যভাবে বললে, ১১ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমেই সংবিধান নাগরিকত্ব প্রদান, বাতিল এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অনুচ্ছেদ ১১-কে এ ভাবে উদ্ধৃত করা যায়, ‘সংবিধানের এই খণ্ডে নাগরিকত্ব প্রদান, বাতিল এবং নাগরিকত্ব সম্পর্কীত যে কোনও বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা সংসদকেই প্রদান করা হয়েছে।’
১.৪ গণপরিষদে ৫ ও ৬ নং অনুচ্ছেদের ওপর বিতর্কে ১৯৪৯ সালের ১০ আগস্ট ভারতের সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ড. বি আর আম্বেদকর ৫ নং অনুচ্ছেদের খসড়া তৈরির সময় কতটা সতর্ক ছিলেন, তা তুলে ধরেনঃ
‘এই অনুচ্ছেদে নাগরিকত্ব কোনও সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়নি, এখানে সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিনে যারা এ দেশের নাগরিক, তাদের কথাই বোঝানো হয়েছে। দেশের নাগরিকত্ব বিষয়ে কোনও স্থায়ী আইন রচনা এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য নয়। বরং নাগরিকত্ব বিষয়ক স্থায়ী আইন তৈরির দায়িত্ব সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হল। আমার প্রস্তাবিত ৬ নং অনুচ্ছেদের (বর্তমানে ১১ নং) শব্দবন্ধ থেকেও সদস্যরা দেখতে পাবেন, নাগরিকত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিষয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেমনটা ঠিক মনে করবেন, তেমন করেই আইন প্রণয়ন করবেন।’
১.৫ ড. আম্বেদকর এ-ও বলেন,
‘সংসদ নতুন নীতি প্রণয়নের জন্য নতুন আইন তৈরি করতে পারে। এ কথাই আমার প্রথমে মনে হয়েছে। এবং এ কথাও উল্লেখ করছি, তারা যেন এমনটা মনে না করেন যে, আমরা সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিন থেকে যে নাগরিকত্ব বেঁধে দিয়েছি, তা কোনও স্থায়ী, অপরিবর্তনীয় বিষয়। আমরা যা-ই করেছি, তা শুধু এই সময়ের জন্য এবং অ্যাডহক ভিত্তিতে গৃহীত।’
ড. আম্বেদকর আরও উল্লেখ করেন,
‘সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিনকে ধরে নাগরিকত্ব প্রদানের মতো সীমিত উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমস্ত বিষয়কে এর আওতায় আনা সম্ভব নয়। তাই যদি কোনও অংশের মানুষ বাদ পড়ে যান, তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংসদকেই ক্ষমতা দেওয়া হল।’
নাগরিকত্ব ইস্যুতে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা এইভাবে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন,
১৯৪৭ সালের ২৯ এপ্রিল গণপরিষদে ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি অন্য কোনও দেশের ধারাকে অনুকরণের পক্ষপাতী নই। আমরা আমাদের নিজস্ব নাগরিকত্ব-ভাবনা তৈরি করব এবং সেই হিসেবে সংজ্ঞা স্থির হবে।’
১৯৪৭ সালের ২৯ এপ্রিল গণপরিষদে জাতীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বলেন, ‘এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের নাগরিকত্ব ব্যবস্থা বিশ্ব জুড়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হবে। আমরা কী করি, সবাই সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে।’
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘ট্রাইস্ট উইথ ডেসটিনি’-র ওপর এইভাবে বক্তৃতা করেন, ‘যে সব ভাই-বোন রাজনৈতিক সীমান্তের জন্য আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন, যারা এই স্বাধীনতার শরিক হতে পারছে না বলে বর্তমানে অখুশি, তাদের কথাও ভাবতে হবে আমাদের। তারা আমাদের রয়েছেন। আমাদেরই থাকবেন, তাঁদের ভালো-মন্দে আমরা শরিক হবো।’