Barak UpdatesAnalyticsBreaking NewsFeature Story

বিমল-অংশু তিনি, উজ্জ্বল আজও হৃদয়াকাশে, লিখেছেন তমাল চক্রবর্তী
A tribute to Bimolangshu Roy, writes Tamal Chakraborty

8 জুলাইঃ সেদিনও ছিল অঝোর বৃষ্টি। সেই সকাল থেকে। পথ-প্রান্তর, চোখের কোণ, সব ভিজে একসা। একে একে শহর, উপত্যকার নানা মানুষের ভিড় মিলেছে এসে আমাদের পাশের পাড়ায়। লোচন বৈরাগী রোডের “বাণী দীপ”-এ।

সন্ধে হল, বৃষ্টির তবু কোনও ক্লান্তি নেই। ভেজা পথ আর চোখের ধারাস্রোতে ভেসে শহরের নানা সরণি ঘুরে শকট পৌঁছলো লোচন বৈরাগী রোডে। পারিবারিক আচার-বিধি শেষে ফের শুরু যাত্রা। শোকমিছিল থেকে শেষযাত্রা।

বৃষ্টি তখন আরও জোরালো। সাতটা বাজে, তবে পথ প্রায় ফাঁকা। সব ভিড় ওই শকটটাকে ঘিরে। খোলের ভারী বোল, হরি-ধ্বনি আর অনুগামীদের আকুল কণ্ঠে সংকীর্তন গায়ে জড়িয়ে এগিয়ে চললেন জননেতা বিমলাংশু রায়। তবে জীবনপথে অভয়বাণীর সাথি নির্ভীক এই পথিকের সেদিনটার সে যাত্রা ছিল পুরো অন্য বেশে। পরপারের পথে।

কয়েক বছর আগের আগস্টেও ছিল একই আবহ শহরজুড়ে। তফাৎটা শুধু দিনের সাজে। বৃষ্টি নয়, সেদিন ছিল কাঠফাটা রোদ। চড়া রোদ সত্ত্বেও হাজার মানুষের চোখ সেদিনও সিক্ত বৃষ্টিভেজা দিনের মতো। স্তব্ধ শহরের ভিড়ের স্রোত সেদিন মিলল স্টেশন লাগোয়া কালীমোহন রোডে। নির্বাপিত এক অগ্নিশিখা— শেষযাত্রার পথে সেদিন জননেতা সন্তোষ মোহন দেব।

রোদ হোক বা বৃষ্টি। যাবার বেলায় চলে যান সবাই নিজের মতো করে। পড়ে থাকে কিছু স্মৃতি জাগানিয়া কথা, এঁদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর বিদায়ের একরাশ বিষন্নতা। এ বিষন্নতা এঁদের কায়িক উপস্থিতিটা হারানোর জন্য না যতটুকু, তার চেয়ে বেশি এই ভেবে যে, পাবো কি আবার কেউ ? এঁদের মতো ?

Bimolangshu Roy with his better half Bani Roy

একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে যদি বলি তবে বলতে হয় — না। পাইনি। আজও ফিরে ফিরে আসে মনে সেদিনের টুকরো স্মৃতি — বিমলাংশু রায় যেদিন “বিজয়ী”। জয়-বিজয় বা ইলেকশন, এ সব তখন কতটুকুই বা বুঝি। তবে, এটুকু ঠিক বুঝতে পারছিলাম যে, আজ একটা মিছিল হবে । বিজয় মিছিল।

বিজয় মিছিল ! নামেই যেন কেমন উৎসব ; কৌতূহল জাগে মনে। স্কুল সেরে বাড়ি ফিরতেই মায়ের হাত ধরে দৌড়। বিজয় মিছিল আসছে যে! বুঝতে হবে তো, কী ব্যাপার ! কী করেন এঁরা এই মিছিলে ?

বিকেল তিনটে। গোপীনাথ পয়েন্ট পৌঁছল বিজয় মিছিল। পুজোর সময় ছাড়া এই প্রথম দেখলাম এত ভিড়। এত্ত লোক !
“এটাই কি সেই মিছিল?” জিজ্ঞেস করতেই মা আঙুল দেখিয়ে দিলেন একটি ছোট ট্রাকের দিকে —- “ওই দ্যাখ “। জনতার স্রোতে ভেসে মিনি ট্রাকে দাঁড়িয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরা বিজয়ী নেতা “বিমলাংশু রায়” । গলায় ত্রিবর্ণ উত্তরীয়, গাঁদা ফুলের মালা, কপালে আবিরের তিলক। অঞ্জলিবদ্ধ দুটি হাত, জনতার উদ্দেশে।

ভিড়টা পেরিয়ে একটু এগোতেই চলে গেলাম একদম গাড়ির কাছে। পাটের সুতোয় বাঁধা হলুদ ছিটের পাতাবাহার আর কাগুজে ফুলের তোড়াটা তুলে ধরলাম। দেখেই তিনি এগিয়ে এলেন গাড়ির এদিকটায়। একরাশ হাসিতে বেশ খানিকটা ঝুঁকে আবিরে মাখা হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। কাগুজে ফুল, আর পাতাবাহারের তোড়াটা আমার হাত থেকে নিলেন সযত্নে, স্বহস্তে। সে এক মিছিল ছিল বটে !

মিছিল তো অনেকেই দেখেছি ; দেখছি। ভোট আসে, ভোট যায় ; আন্দোলন, উন্নয়ন সবই হয়। কিন্তু ওই রাঙাহাতের পরশ মেলে কই ? আবিরমাখা হাতগুলো যে এমনি করেই মিলিয়ে যায় সূর্যাস্তের প্রান্তে — সে রোদ হোক বা বৃষ্টি।

দিন ফিরে আসে, সময়টা ঠিক আসে না। “নেতা”রা আসেন, কিন্তু এঁদের মতো কেউ আসেন না। এঁদের মতো কেউ হাসেনও না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker