NE UpdatesBarak UpdatesIndia & World UpdatesBusinessBreaking News
মজুরি-কয়লা-বিদ্যুতে খরচ বাড়ছে ১০ শতাংশ, চায়ের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ, উদ্বেগে টাইExpenditure on labour-coal-power increased by 10%, rate of tea increased by 3%, concern expressed by TAI
৮ নভেম্বরঃ শুধু বরাক উপত্যকার চায়ের বাজারে হতাশাজনক চিত্র, এমন নয়। দেশজুড়ে চা শিল্পে হতাশার ছাপ তীব্রতর। এ নিয়ে টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (টাই) উদ্বেগে। কলকাতায় চা শিল্পপতিদের বার্ষিক অধিবেশনে বৃহস্পতিবার এ নিয়েই চর্চা চলে।
টাই-র সভাপতি মুদিত কুমারের ভাষণেও বিষয়টি গুরুত্ব সহ আলোচিত হয়। তাঁর কথায়, গত এক দশকে বিদ্যুত-কয়লা-মজুরি বাবদ খরচ নিত্য বেড়ে চলেছে। মজুরি বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে ১২.১৯ শতাংশ এবং অসমে ১২.৩৬শতাংশ। বিদ্যুতও একই হারে বাড়ছে।
পশ্চিমবঙ্গে ৭.০৯ শতাংশ হারে বিদ্যুতের মাশুল বেড়েছে। অসমে বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.৩৯ শতাংশ। কয়লার দাম বেড়েছে গড়ে ৯.০১ শতাংশ। কিন্তু লাভ-লোকসানের হিসেব টানলে মুশকিলে পড়ে যান তারা। গত এক দশকে নিলাম বাজারে চায়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ২.৯৫ শতাংশ হারে।
টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রভাত বেজবরুয়া, ডেপুটি চেয়ারম্যান অরুণকুমার রায়, টি বক্সের প্রতিষ্ঠাতা সিইও কৌশল দুগ্গর এ বারের অধিবেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন টাই-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজ বনসাল, প্রধান সম্পাদক পিকে ভট্টাচার্যও। বরাক ভ্যালি শাখার প্রতিনিধিত্ব করেন সম্পাদক শরদিন্দু ভট্টাচার্য।
বার্ষিক অধিবেশনে পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুদিত কুমার জানান, ২০০৩ সালে দেশে চায়ের উতপাদন ছিল ৮৭৮ মিলিয়ন কেজি। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৩৮ মিলিয়ন কেজি। অর্থাত ১৫ বছরে চায়ের উতপাদন বেড়েছে ৫১ শতাংশ। তা দেখে অনেকের মনে হতে পারে, উতপাদন বাড়লে আবার সঙ্কট কীসের! এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছোটখাটো উতপাদকরা এসে এই শিল্পে যোগ দিয়ে উতপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকেন। তাতে বাগানমালিকদের কোনও লাভ নেই। ২০০৩ সালে ছোট উতপাদকদের কাছ থেকে এসেছিল ১৯৯ মিলিয়ন কেজি। গত বছর আসে ৬৪৬ মিলিয়ন কেজি। ১৫ বছর আগে তাদের অংশ ছিল মোট উতপাদনের ২২ শতাংশ, গত বছর তা হয় ৪৮ শতাংশ। ফলে বাগান ঘিরে যারা এস্টেট তৈরি করেছেন, তাদের উতপাদন দেড় দশকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে।
এই অবস্থায় তাঁর পরামর্শ, বাগানগুলি সিটিলি পদ্ধতির চেয়ে অর্থডক্স বা পুরনো পদ্ধতিতে চায়ের উতপাদনেই বেশি গুরুত্ব দিক। এ ছাড়া, যাদের প্রয়োজন তাদের সরকারি সহযোহিতা করা হোক। তাঁর আক্ষেপ, বহুক্ষেত্রে সরকার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির আগেই তাদের উপর সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে তাদের নাকানিচোবানি খেতে হয়। উদাহরণ দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের মজুরি থেকে শুরু করে সবকিছু ডিজিট্যাল পেমেন্টের সিদ্ধান্ত হল। কিন্তু সব জায়গায় ডিজিটাল সিস্টেম কাজ করার উপযোগী নেটওয়ার্ক আজও তৈরি হয়নি। অথচ বছরে ১ কোটি টাকার তোলা হলেই ২ শতাংশ হারে টিডিএস কেটে রাখা হচ্ছে। মুদিত জানান, শ্রমিকদের মজুরিটা ডিজিটালি দেওয়া গেলে তাদের এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হতো না। তাঁর দাবি, শ্রমিক কল্যাণের বিষয়টি শুধু মালিকদের ওপর না ছেড়ে সরকারও তাদের ঘিরে উন্নয়নমূলক কাজ করুন, যে ভাবে অন্য ভোটার বা জনতার জন্য সরকারই এ সব ব্যাপারে পাশে দাঁড়ায়।
শ্রমিক অনুপস্থিতি নিয়ে যে বরাকের বাগান-মালিকরা প্রতিটি সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তা সর্বভারতীয় অধিবেশনেও শোনা গেল। মুদিতকুমারও তাঁর ভাষণে এ জায়গায় গুরুত্ব দেন। বলেন, স্থায়ী কর্মীদের কোনওভাবে কাজে অনুপস্থিত থাকা চলবে না। পাতা তোলার সময় বরং কাজের সময় বাড়াতে হবে। সে জন্য মজুরি ছাড়াও কাজের নিরিখে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে।
এতসব সমস্যার মুখে বাগানগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁর পরামর্শ, প্রতি হেক্টর বাগানে রাজস্ব বাড়াতে হবে। যেমন উতপাদনের পরিমাণে, তেমনি দাম বাড়ানোর মাধ্যমে। টি টুরিজমেও গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।
টাই এ বার ছোট চা উতপাদকদেরও সঙ্গে নিতে প্রস্তাব দিয়েছে। মুদিতকুমারের কথায়, তাদের এলাকা ক্রমে বাড়ছে। বাড়ছে ছোট উতপাদকদের সংখ্যাও। তাই তাদের সঙ্গে নিয়ে কীভাবে চা শিল্পের উন্নতি করা যায়, তা ভাবতে হবে।