AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/১৭ঃ জেপিসি এসে শুনল, অসমে শান্তি ছিল, উন্নয়নও হচ্ছিলCitizenshp/17: JPC came & heard, Assam was peaceful, there was development also
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর সপ্তদশ কিস্তি।) ১ মার্চঃ গুয়াহাটি, শিলচর ও শিলঙে যে সব বিষয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে: ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী অসমের আদি বাসিন্দাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থে এই সংশোধনী অনুমোদিত না হওয়া উচিত। দেশভাগের সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে অসমের মানুষ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। অসমের মানুষের স্বার্থে এই বিল যেন পাস না হয় । ২. আসাম চুক্তি হুবহু মেনে চলতে হবে। বিদেশিদের চিহ্নিত ও বহিষ্কার করাই উচিত। অন্য দেশে গিয়ে ভারতের মানুষ নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করলে ভারত সরকারের উচিত বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা। ৩. ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তির পরে রাজ্যে শান্তি বিরাজ করছিল। উন্নয়নও হচ্ছিল। ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত জাতি, বর্ণের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছিলেন। বর্তমানে প্রস্তাবিত বিল বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিভাজন সৃষ্টি করেছে, যা রাজ্যের জন্য বড় বিপজ্জনক। ৪. অসমে তফশিলি জাতির মানুষের কাছে বড় সমস্যা হল,৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষিত আসন বাংলাদেশিদের দখলে। ৫. তাই জনজাতি তাদের অধিকারের প্রশ্নে লড়াই করছে। এই সময়ে অসম বাংলাদেশি বা অন্য কোনও বিদেশির বোঝা নিতে পারবে না। সম্ভব হলে তাদের অন্য রাজ্যে পাঠানো হোক। এমনিতেই আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭১ সালের আগে আসাদের গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরে যারা এসেছে তাদের কোনোমতে নয়। ৬. অসমিয়াদের অস্তিত্বের কাছে এই বিল বিপজ্জনক। বরাক উপত্যকার জনজাতি মানুষ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। মুসলমানরা বাংলাদেশ থেকে আসছেই। আপার অসমেও বহু জেলায় অসমিয়ারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। সরকারের উচিত, অসমের আদি বাসিন্দাদের সাহায্য করা। তাই বিলটি প্রত্যাহার করা হোক। ৭. এই বিল অসমের ভূমিপুত্রদের স্বার্থের বিরুদ্ধে। বহু দশক ধরে অসম অনুপ্রবেশ সমস্যায় ভুগছে। ভোগাচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতিকেও। এ বিল পাস হলে অসম চুক্তি বাতিল হবে। তাতে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধ্বংস হবে। সুস্পষ্ট শরণার্থী নীতি ছাড়া শুধু ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে কাউকে শরণার্থী বলা যায় না। ৮. সংবিধানের মূল কাঠামো লঙ্ঘন করে এমন বিল সংসদে পাস না করাই উচিত। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত গঠন করা হয়নি। একইভাবে অসমও ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি, উঠেছে ভাষার ভিত্তিতে। এই কারণেই ১৯৫৩ সালে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরি হয়েছিল। তাদের সুপারিশ মেনেই ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন প্রণীত হয়। তাতেই বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্য পুনর্গঠন বা সীমা চূড়ান্ত হবে ভাষার ভিত্তিতে। এ ছাড়া, অনুপ্রবেশকারীরা তো ভারতের অন্য জায়গায়ও যেতে পারে, অসমে তাদের জন্য আর জায়গা নেই। ৯. অবৈধ অনুপ্রবেশ অসমের এক বড় সমস্যা। ব্রিটিশ আমল থেকেই ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্য থেকে কৃষিকাজের জন্য শ্রমিকরা এসে আপার অসমের জনসংখ্যাগত চিত্র বদলে দিয়েছে। আবার পাট চাষের জন্য নিম্ন অসমে বাঙালি মুসলমানদের আনা হয় আর সেই অঞ্চলের জনসংখ্যাগত চিত্র পাল্টে যায়। এই বিল আইনে পরিণত হলে সমস্ত অসমের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে এসে পড়বে। ১০. এনআরসি অসমিয়াদের স্বপ্ন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি নবায়ন হচ্ছে। প্রথম খসড়া এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় খসড়া প্রকাশ হতে চলেছে। এ সময় বিল পাস হলে এনআরসি নবায়নের উদ্দেশ্য অর্থহীন হয়ে যাবে। তাই অসম ও সমস্ত দেশের স্বার্থে এই বিল পাস হওয়া উচিত নয়।