AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/৯ঃ কোনও নথি যাদের নেই, তাদের সুবিধের জন্যই বিলCitizenship/9: The Bill is for those who doesn’t have any document
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর নবম কিস্তি।)
২০ ফেব্রুয়ারিঃ ১.১৪— আবার ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৭ (ডি) ধারা অনুসারে ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া কার্ড যাদের রয়েছে, তাদের রেজিস্ট্রেশনও বাতিল করার ক্ষমতা ভারত সরকারের রয়েছে। ভুল তথ্য প্রদান বা প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন করা, জালিয়াতির সাহায্যে ওই কার্ড সংগ্রহ করা, ভারতের সংবিধানের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ বা ভারতবিরোধী কার্যকলাপে মদত দিলে এই ধারা কার্যকর হয়।
১.১৫—– ১৯৫০ সালের পাসপোর্ট (এন্ট্রি ইনটু ইন্ডিয়া) রুলস-এর সংশোধনী এবং ১৯৪৮ সালের ফরেনার্স অর্ডারের প্রেক্ষিতে সরকার ১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ আইনের ২(১)(বি) ধারা, তৃতীয় অনুচ্ছেদের ক্লজ ডি এবং ৭ (ডি) ধারার সংশোধনের জন্য সরকার এ বার প্রস্তাব দিচ্ছে।
ক. ২(১)(বি) ধারা শোধরে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যে সব সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্য ধর্মীয় নির্যাতনের দরুন বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া যেতে পারে।
খ. ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬(১) ধারা অনুসারে সাত বছর বসবাসের পরই তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারেন।
গ. ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়ার কার্ডহোল্ডারদের এই আইন বা ভারতে কার্যকর রয়েছে যে কোনও আইন উল্লঙ্ঘনের দরুন রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিধান রাখা হোক।
১.১৬— ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের যে ধারা বা ক্লজে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং কী কারণে এমন প্রস্তাব, নীচে এর বিবরণ দেওয়া হলঃ
প্রথমে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ২(১)(বি) ধারায় সংশোধন চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই ধারায় বলা হয়েছে—-বৈধ পাসপোর্ট বা আইনসিদ্ধ অন্য কোনও ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ছাড়া কোনও বিদেশি ভারতে প্রবেশ করলেই তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হবে। এমনকী, বৈধ পাসপোর্ট বা আইনসিদ্ধ অন্য কোনও ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ঢুকে তার নির্দিষ্ট মেয়াদ পেরনোর পরও ভারতে থেকে গেলে তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হবে।
এ বার সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে কোনও হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি বা খ্রিস্টান যদি প্রবেশ করে, অথবা ১৯২০ সালের পাসপোর্ট (এন্ট্রি ইনটু ইন্ডিয়া) অ্যাক্ট ৩(২)(সি) ধারায় বা ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টে বা অন্য কোনও নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকার যাদের ছাড় দিয়েছে, তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন না। এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য হল, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যে সব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি বা খ্রিস্টান ধর্মীয় নির্যাতনের দরুন বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, তারা নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
৭ (ডি)-তেও সংশোধন চাওয়া হয়েছে। এই ধারায় বর্তমানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার ৭(এ)(১) ধারা অনুসারে যে সব ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রেশন মঞ্জুর করেছে তা বাতিল করে দিতে পারে যদি ওই মঞ্জুরির ৫ বছরের মধ্যে ওই ব্যক্তি দুই বছর বা এর বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করেন।
এ বার সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, নতুন করে ৭ (ডি)(এ) যুক্ত হবে। তাতে বলা হবে, এই আইন বা বর্তমানে কার্যকর রয়েছে, এমন যে কোনও আইন ভঙ্গ করলে তার নাগরিকত্ব মঞ্জুরি বাতিল হয়ে যাবে। এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য হল, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন বা অন্য যে কোনও আইন ভঙ্গ করলে ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রেশন যেন বাতিল করা যায়।
তৃতীয় অনুচ্ছেদের ক্লজ ডি-তেও সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে রয়েছে — আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভের যোগ্যতা হল, আবেদনের আগের ১২ মাস তো নাগাড়ে ভারতে থাকতেই হবে, এ ছাড়াও এর আগের ১৪ বছরের মধ্যে অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকতে হবে বা ভারত সরকারের অধীনে চাকরি করতে হবে, বা দুটো মিলিয়ে ১১ বছর হতে হবে। এখন সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ ছাড়াও যোগ করতে হবে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের কোনও হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি, খ্রিস্টান আবেদন করতে চাইলে প্রচলিত আইনের ১১ বছরের জায়গায় তার জন্য হবে ৬ বছর। এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য হল, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, কিন্তু ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে নথিপত্র দেখাতে পারছেন না, তাদের নাগরিকত্ব পেতে যেন সুবিধে হয়।