AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/৫ঃ পাকিস্তান-বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা রাষ্ট্রসঙ্ঘে তুলেছিল ভারতCitizenship/5: India raised the issue of persecution of religious minority in Pakistan-Bangladesh
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনা হয়নি। তবে সংসদে আর সুযোগ না থাকলেও সংসদের বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর পঞ্চম কিস্তি।)
১৫ ফেব্রুয়ারিঃ ১৯৫০ সালের ১৯ এপ্রিল ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সংসদে বলেছেন, পাকিস্তানে বিশেষ করে পূর্ববাংলায় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তার প্রতিবাদেই আমাকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে। ভুললে চলবে না যে, শুধু মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নয়, তাঁরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, আত্মবলিদান দিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও বৌদ্ধিক প্রগতির বুনিয়াদ গড়ে তোলার জন্য নিজের স্বার্থ ভুলে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আনন্দের সঙ্গে এগিয়ে দিয়েছেন, সে জন্য পূর্ববাংলার হিন্দুরা ভারতের কাছ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।
অন্যদিকে, এককভাবে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হল হিন্দু ও শিখদের পরিকল্পিতভাবে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া। এর দরুন পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের জীবন হয়ে উঠেছে ঝঞ্ঝাটবহুল, সংক্ষিপ্ত।
আবার ১৯৫৫ সালের ৫ আগস্ট পণ্ডিত বল্লভভাই পন্থ লোকসভায় বলেন, এই আইন প্রণয়নে আমরা উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি, যাতে কারও পিতা এই দেশের নাগরিক না হলেও, এমনকী তার জন্ম এখানে না হলেও নাগরিকত্বের অধিকার ভোগ করতে পারে। তবে দ্বৈত নাগরিকত্ব কোনও মতেই হবে না। আমরা একটা এমন আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছি, যার মাধ্যমে অন্যরাও রেজিস্ট্রেশন বা ন্যাচারাইজেশনের মাধ্যমে একই অধিকার ভোগ করতে পারে। তবে যেখানে রেজিস্ট্রেশন বা ন্যাচারাইজেশনের কথা রয়েছে, সেখানে সবটাই হতে হবে রাষ্ট্রের অনুমোদনসাপেক্ষে।
১.৬ ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে, যেখানে নাগরিকদের কোনও দোষত্রুটি বা দায়দায়িত্ব ছিল না। আর দেশভাগের পর ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে। পাকিস্তান, এবং পরে বাংলাদেশও ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। সে জন্যই সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্মীয় নির্যাতনের ব্যাপারটা আসে। সংগঠিতভাবে ওই নির্যাতন আজও অব্যাহত।
সংখ্যালঘুরা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এত যন্ত্রণা ভুগছে যে নিজের জন্মভূমি ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন তাঁরা। তাদের বিশাল সংখ্যায় অনুপ্রবেশের দরুন আমাদের দেশের, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যাগত চিত্রে বেশ প্রভাব ফেলেছে। ১৯৯৭ সালে ততকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিত গুপ্তও সংসদে বলেছিলেন, চল্লিশ লক্ষ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী অসমের জনসংখ্যা-কাঠামোকে বদলে দিয়েছে। আসলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সমস্যাটা বিশ্বের অন্য সংখ্যালঘুদের সমস্যার চেয়ে পৃথক। এই কথা ভেবেই নেহরু-লিয়াকত চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তান কথা রাখেনি। সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্মীয় নির্যাতন তারা চালিয়েই যায়। ভারত এই জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের কথা রাষ্ট্রসঙ্ঘেও তুলেছিল কিন্তু স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এইসব বিষয় মাথায় রেখেই আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি, খ্রিস্টান—-এই ছয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য ভারত সরকার নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন চেয়ে বিল এনেছে।