AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/২৮ঃ বাংলাদেশকে বাইরে রাখলে বিলই অর্থহীন, বলেছিল জেপিসিCitizenship/28: If Bangladesh kept outside the purview, the Bill becomes meaningless, opines JPC
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ২৮-তম কিস্তি।)
১৩ মার্চঃ ২.৩৯ যৌথ সংসদীয় কমিটি বুঝতে পারে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ২(১)(বি)-র উদ্দেশ্য হল আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব প্রদান। কমিটির নজরে আসে ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানেরও উল্লেখ রয়েছে। পরে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাইর দুই বিজ্ঞপ্তিও তথৈবচ। বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মত অবিভক্ত ভারতের অংশ না হলেও আফগানিস্তানকে কেন যুক্ত করা হল, এর উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, হক্কানি নেটওয়ার্ক, তালিবান প্রভৃতি পাক মদতপুষ্ট সংগঠন বহুবার আফগানিস্তানে ভারত-সংশ্লিষ্টদের ওপর হামলা করেছে। ফলে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে অনেক সংখ্যালঘু মানুষ ভারতে এসেছেন। তাহলে শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের মত প্রতিবেশীদের যোগ করা হল না কেন, এরও জবাব দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। জানায়, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার সহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী বা শরণার্থীদের কথা ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইস্যু করা স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর (এসওপি)-তে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটি সরকারের বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে বলেই মনে করে এবং ২(১)(বি) ধারার সংশোধনীতে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানকে যুক্ত করার প্রস্তাবে সায় জানায়।
২.৪০ কমিটি লক্ষ্য করে, সরকার ১৯৫০ সালের পাসপোর্ট (এন্ট্রি ইনটু ইন্ডিয়া) রুলস এবং ১৯৪৮ সালের ফরেনার্স অর্ডার সংশোধন করে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ছয় নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষদের প্রবেশ এবং এখানে থাকার ব্যাপারে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। সে জন্য ১৯২০ সালের ফরেনার্স অ্যাক্ট, বা ১৯২০ সালের পাসপোর্ট (এনট্রি ইনটু ইন্ডিয়া) অ্যাক্ট এবং ততপরবর্তী রুলসের শাস্তি কার্যকর হবে না। সরকার এ কথাও জানায় যে, বাংলাদেশ এই সংশোধনীতে সাড়া না দিলে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ছাড়া যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বা ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে এলেও এর মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে, তারা ২ নং ধারায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে থেকে যাবেন। শুধু ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন না। কিন্তু যৌথ সংসদীয় কমিটি মনে করে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে বাংলাদেশ থেকে যারা কোনও ধরনের ডকুমেন্ট ছাড়া বা কোনও অসম্পূর্ণ বা মেয়াদ ফুরনো ডকুমেন্ট নিয়ে ভারতে এসেছেন, তাদের যদি নাগরিকত্বের আবেদন করতে দেওয়া না হয়, বা বাংলাদেশকে যদি বিলের আওতায় না রাখা হয়, তাহলে বিল আনার কারণ বা উদ্দেশ্যটাই অর্থহীন হয়ে পড়বে। তাই বাংলাদেশকে বিলের বাইরে রাখার জন্য যে প্রস্তাব এসেছে, কমিটি তাতে সম্মত নয়। বরং সরকারের প্রস্তাবেই সায় জানায়।
২.৪১ বিল বা মূল আইনটির কোথাও ধর্মীয় নির্যাতন শব্দবন্ধের উল্লেখ নেই। পরিষদীয় বিভাগ স্পষ্টীকরণে জানায়, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এবং ২০১৬ সালের ১৮ জুলাইর বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই বিলের খসড়া তৈরি করা হয়েছে এবং বিজ্ঞপ্তিতে ধর্মীয় নির্যাতনের কথার উল্লেখ রয়েছে। বিদেশের মাটিতে কীভাবে ধর্মীয় নির্যাতনের প্রমাণ মিলবে, তাও জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বলে, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য এবং নানা মুদ্রিত বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সংবাদ থেকে বিদেশের মাটিতে ধর্মীয় নির্যাতনের ব্যাপারটি নিশ্চিত করা যাবে। এ ছাড়াও, ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে ভারতে আসার দাবির যথার্থতা এফআরআরও বা এফআরও এবং আইবি পরীক্ষা করে দেখবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও বিভাগগুলির বক্তব্যে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ের সত্যতা মেলে এবং তা তিন দেশেই সাংঘাতিক পরিমাণে ছিল। তাই আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে নির্দিষ্ট ছয় জনগোষ্ঠীর যে সব মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছে, কমিটি তাতে সায় জানায়।
চোখ রাখুন, নাগরিকত্ব/২৯ঃ বিদেশি মামলা ঝুলে থাকলেও নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ মিলত!