AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/২৬ঃ সমান অধিকারের কথা বলে ভৌগোলিক বিভাজনকে অস্বীকার করা যায় নাCitizenship/26: In the name of equal rights, geographical division cannot be ignored
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ২৬-তম কিস্তি।)
১০ মার্চঃ ঙ. সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্নে আদালত সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ রিপোর্ট, সেই সময়ের ইতিহাস এবং মূল ঘটনা বিচার করে দেখতে পারে আইন প্রণয়নের সময়টা কেমন ছিল।
চ. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও জ্ঞানমতে কথাটা আজও প্রচলিত রয়েছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থাও আদালতে বিচার্য হয়। সে সব বিবেচনা করে বিভাজনেরও ভিত্তি মেলে। কেউ বিরুদ্ধ কিছু করতে পারে, সব সময় তা ভেবে অজানা বা অজ্ঞাত কারণে সর্বত্র সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্ন তোলা যায় না।
উপরের এই কথা আদালত সবসময় মনে রাখে। কোনওভাবে কারও প্রতি বৈষম্য হয় কিনা বা সমান অধিকার সুরক্ষার ব্যাপারটি লঙ্ঘিত হয় কিনা তাও খেয়াল রাখতে হয়। এ ছাড়া, কোনও বাতিল বিজ্ঞপ্তিকে ভিত্তি করে বিভাজন টানা যায় না। শুধু বিশেষ বিষয়েই তা হতে পারে।
অন্যান্য মামলাকেও উদাহরণ হিসেবে আনা যেতে পারে, যেখানে ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক বা অন্য কোনও কারণে আইনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বিভাজন মেনে নিতে হয়। পেরেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বনাম ভারত সরকার (২০০০-২ এসসিসি ৬৫৭) মামলায় আন্দামান নিকোবরে ১৯৪২ সালের আগে এবং পরে আসাদের মধ্যে বিভাজন টানে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে কেন্দ্র এই বিভাজন টানে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্তে আদালত সায় জানায়। যুক্তি দেখানো হয়, তারা সামাজিক, ঐতিহাসিক ও শৈক্ষিক দিকে পশ্চাদপদ ছিলেন এবং লাগাতার জীবনসংগ্রাম করে গিয়েছেন, দুর্ভোগে ভুগেছেন। তাই তাদের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদ বা অন্য কোনও অংশ লঙ্ঘন হয়েছে বলা যায় না।
জাভেদ বনাম হরিয়ানা সরকার মামলায় (২০০৩-৮এসসিসি৩৬৯) হরিয়ানা পঞ্চায়েত রাজ আইনের ১৭৫(১)(কিউ) ও ১৭৭(১) ধারাকে সর্বোচ্চ আদালত বৈষম্যমূলক নয় বলে রায় দেয়। এই আইনে সরপঞ্চ, আপ-সরপঞ্চ, পঞ্চ ও গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ সদস্যপদে প্রার্থীর দুই সন্তানের বেশি জীবিত থাকলে তার প্রার্থিত্ব অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এই আইনকে মেনে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তাতে দুই সন্তান নীতিকে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয় যে, যখন কোনও কৌশলের ফল পেতে অনেকটা সময় লাগবে কিন্তু গতিশীল, তার পর্যায়ক্রমের অগ্রগতিকে স্বাগতই জানানো হয়। ধীরে ধীরে কোনও পরিবর্তিত বিষয়কে মেনে নেওয়া যায়।
আবার ক্লেরেন্স পাইস বনাম ভারত সরকার (২০০১-৪ এসসিসি ৩২৫) মামলায় ইন্ডিয়ান সাকসেশন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের ২১৩(২) ধারাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। যদিও ধারাটি কেবল খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বলা হয়েছে, এখানে শুধু ধর্মের কথা নয়, ব্রিটিশ আমলেই সম্পত্তির অধিকারী বা একজিকিউটর প্রমাণের জন্য ইচ্ছাপত্র দেখানোর প্রচলন ছিল। কিন্তু বি বা সি ভুক্ত রাজ্যগুলিতে এমনটা ছিল না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ঐতিহাসিক কারণে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের বৈষম্য করা যায় এবং তা মান্যও, শুধু এর মধ্যে যুক্তি থাকতে হবে। দীর্ঘদিনের সমস্যা হলেও আইনের সমতাকে মেনে চলতে হবে। নিঃসন্দেহে কেন্দ্র এবং রাজ্যকে এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে। শুধুমাত্র কোনও এক রাজ্য বা অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে মেলে না, এই কারণে একে আইনের লঙ্ঘন বা বাতিল বলা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এই ধরনের পার্থক্য থাকবেই। পৃথক শ্রেণি হিসেবে আগে তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হতো। সমতার কথায় ভৌগোলিক বিভাজনে আপত্তি করা হয়নি। ভিন্ন ব্যবস্থা সংবিধানের ১৪ নং ধারাকে টানতে হব, ও কেমন কথা!
প্যারিসন অ্যাগ্রোটেক প্রাইভেট লিমিটেড বনাম ভারত সরকার (২১০৫-৯ এসসিসি১৫৭) মামলায় বলা হয়েছে, কোনও কৌশল নিরূপণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্যপাতি থাকলেও একে সংবিধানের ১৪ নং ধারা দিয়ে বিচার করলে কৌশলের যথার্থতা বা এর চেয়ে ভাল কোনও ব্যবস্থা রয়ে গিয়েছে কিনা তা বের করা বিচারব্যবস্থার পক্ষে সম্ভব হয় না। সমতার কথা বলতে গিয়ে ভৌগোলিক বিভাজনকে অস্বীকার করা যায় না।
তাই আইন প্রণেতারা নিজেদের ইচ্ছেমত বিভাজন টানতে পারেন। ভিন্ন ভাবে দেখা মানেই ১৪ নং ধারাকে লঙ্ঘন করা নয়। আদালতই বিভিন্ন আইনের ক্ষেত্রে বিভাজনকে মেনে নেয়। ফলে আইনি ব্যবস্থাতেই কোনও বৈষম্য বা ১৪ নং ধারার লঙ্ঘনকে মেনে নেওয়া হয়। এই বিলেও দেখা যাচ্ছে, বিভাজন টানতেই হয়, যেহেতু শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ই ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে নির্দিষ্ট দেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে এবং তাদের হাতে বৈধ ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নেই। কোনও ধরনের বৈষম্য ছাড়াই সমস্ত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে সুবিধে দেওয়াই এই বিলের উদ্দেশ্য। এই কথাটি অবশ্য বিলে অক্ষরে অক্ষরে লেখা হয়নি। কিন্তু ক্যাবিনেট নোটে বিল পেশের অনুমোদনের ক্ষেত্রে এর উল্লেখ রয়েছে।
সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অবাধে উপাসনা বা ধর্মপ্রচারের অধিকার থাকবে। বিশেষ ক্ষেত্রের আপত্তিগুলো অবশ্য আলাদা ব্যাপার। এই অনুচ্ছেদে শুধু সকল মানুষ বা একই ধর্মের সকল মানুষের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। তাতে কোনও পক্ষপাতিত্ব বা বৈষম্য চলবে না। এই বিলেও যে বিশেষ শ্রেণির মানুষ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাবেন, তাদের মধ্যে কোনও বৈষম্য হবে না।