AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/২১ঃ বিলে ছয় ধর্মের উল্লেখে আপত্তি ছিল সংবিধান বিশেষজ্ঞেরCitizenship/21: The Constitution experts had objection about inclusion of 6 religions in the Bill
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ২১-তম কিস্তি।)
৫ মার্চঃ ২.৪ প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আফগানিস্তানের নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ ও স্বার্থসংশ্লিষ্টরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কমিটি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তান যুক্ত হওয়ার কারণ অনু্সন্ধান করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, লস্কর-ই-তৈবা, হক্কানি নেটওয়ার্ক, তালিবানের মদতে বিভিন্ন পাক সংস্থা আফগানিস্তানে ভারতীয় স্বার্থের পরিপন্থী বহু আক্রমণ করেছে। এ ছাড়া, স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান অঞ্চল থেকে বহু সংখ্যালঘু আফগানিস্তানে অনু্প্রবেশ করেছে, তারা ভারতীয় মূলের বলে আজও নানা রকমের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
২.৫ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আরও জানায়, আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে ভারতে এসেছে। তাই ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এবং ২০১৬ সালের ১৮ জুলাইর বিজ্ঞপ্তিতে আফগানিস্তানকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২.৬ তাহলে শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার প্রভৃতি দেশগুলিকে বাইরে রাখা হল কেন, এই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্টীকরণ দেয়, ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভারত সরকার বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে কাদের শরণার্থী বলা হবে, এর একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি করে। সেই নীতিনির্দেশিকা শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার প্রভৃতি দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
২.৭ এই সংশোধনী আনার কারণ জানাতে গিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধি জানিয়েছে, এই সংশোধনীর প্রথম লক্ষ্য হল, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে যে সব সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষ বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছে, কিন্তু ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে ফিরে যেতে পারেননি, তাদের সমস্যার যেন সমাধান হয়। তারা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি বা দীর্ঘকালীন ভিসার জন্য আর্জি জানাচ্ছেন। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হয়ে গিয়েছে এবং সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে, যা মূলত ২০১৫ সালের পাসপোর্ট (এন্ট্রি ইনটু ইন্ডিয়া)অ্যামেন্ডমেন্ট রুলস এবং ২০১৫ সালের ফরেনার্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডার। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা এর আগে যারা এসেছে, তাদের নিয়মিত বসবাসের সুযোগ মিলবে। সংখ্যালঘুদের প্রতি এটি একবারের জন্য সুবিধে প্রদান বা অ্যামনেস্টি বলা যেতে পারে। এই সংশোধনী আসলে ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের সেই বিজ্ঞপ্তিরই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
২.৮ প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে সংখ্যালঘু শব্দের দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে, তা এক সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, প্রথমত সংবিধানে সংখ্যালঘু শব্দের কোনও সংজ্ঞা নেই। তাই আমি বলতে চাই, সংখ্যালঘু বলতে যেন শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে না বোঝায়। এর অন্য অর্থ হয়ে যাবে। যদি বলা যায়, নির্যাতনের শিকার হওয়া সংখ্যালঘু, তবে যাদের লক্ষ্যে এই সংশোধনী, তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
২.৯ সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, নিরাপদ থাকতে হলে বিলে যে হিন্দু, শিখ, পার্সি ইত্যাদি কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি তুলে দেওয়া হোক। আমি আবারও বলছি, নির্যাতনের শিকার বললেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যায়। আইনি ও সাংবিধানিক জায়গা থেকে শুধু সংখ্যালঘু শব্দের প্রয়োগই তুলনামূলক ভাল।
২.১০ সংবিধান বিশেষজ্ঞের এই মতামতের প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি আইন ও বিচার মন্ত্রকের কাছে জানতে চায়, যদি আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ না করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বলা হয়, তাতে কী প্রভাব পড়বে। পরিষদীয় বিভাগ জবাবে জানায়, শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বললে বিলের যে উদ্দেশ্য তা পূরণ হবে না। এ নিয়ে ব্যাখ্যার একটা বৃহত্তর ক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনা থেকে যায়। ধর্মীয় বা অন্য সংখ্যালঘুরাও তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, বিষয়টি যে ধর্মীয় নির্যাতন, তা বাদ পড়ে যাবে।