Barak UpdatesBreaking News
ব্যাঙ্ক একত্রীকরণের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল ফেডারেশন, ধর্মঘট বরাকেওBank unions opposes merger, protest movement at Silchar
২২ অক্টোবর:দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অল ইণ্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন ও ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অফ ইণ্ডিয়া’র আহ্বানে ১০ টি ব্যাঙ্ক একত্রিকরণের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাছাড়েও ব্যাঙ্ক ধর্মঘট পালিত হয় মঙ্গলবার। ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা নিজ নিজ ব্যাঙ্কের শাখায় ধর্মঘট আয়োজন করেন।পরে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও কানাডা ব্যাঙ্কের শিলচর আঞ্চলিক শাখার সামনে সমবেত ধর্না দেন।
ধীরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিনের ধর্মঘটের কারণ ব্যাখ্যা করেন। বলেন, যে এখন দেশজুড়ে ব্যাঙ্কগুলোতে যেখানে অনাদায়ী ঋণের পাহাড় জমে আছে সেদিকে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে জনগণের দৃষ্টি সরাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এর ফলে নতুন যে চারটি ব্যাঙ্কের সৃষ্টি হবে সেগুলোর মূলধন বাড়বে ঠিকই, কিন্তু অনাদায়ী ঋণ কোনও অবস্থায়ই কমবে না । সরকার মূলধন বাড়ার কথা বহুল ভাবে প্রচার করলেও অনাদায়ী ঋণের ব্যাপারে নীরব থাকছে । বাস্তবে এই নতুন সিদ্ধান্তে বর্দ্ধিত মূলধন নিয়ে ব্যাঙ্কগুলো আরও বড় বড় কর্পোরেট ঋণ প্রদান করতে পারবে । ঋণের আকার যত বাড়ে সেগুলোতে ঝুঁকিও বাড়তে থাকে । সেই চাপ সরাসরি এসে পড়বে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে । মহারাষ্ট্রের পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মারাত্মক অবস্থা আজ আমাদের সামনে । সরকারিএই নীতির ফলে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হবে না বলে জানিয়ে দেন ধীরঞ্জন। হাতগোনা কিছু কর্পোরেট পরিবারকে সুবিধা করে দিতেই সরকার এই চরম জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন মন্তব্য সংগঠনের এই অন্যতম কর্মকর্তা।
রাহুল রায় সরকারের এই নীতির সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, ২০১৭ সনে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়া ও তাঁর সহযোগী ব্যাঙ্কগুলোর একত্রিকরণে দেশের অর্থনীতি খুব খারাপ অবস্থায় চলে যায়। সেখানে অনাদায়ী ঋণ কমা তো দূরের কথা, বরং অনেকটাই বেড়ে যায়। ১.৬১ লক্ষ কোটির থেকে বেড়ে তো ২.২ লক্ষ কোটি হয়ে যায় । এ দিকে, এই সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের সংসদে দেওয়া তথ্যের মতে প্রায় ১০৫০০ জন কর্মচারীর চাকরি যায় এবং ৬৯৫০টি শাখা বন্ধ হয় । ভারতের মতো দেশে যেখানে আজও লক্ষাধিক গ্রামে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই। মানুষ ঋণের জন্য রক্তচোষা মহাজনদের ওপর নির্ভর করেন সেখানে ব্যাঙ্কের শাখা বৃদ্ধির প্রয়োজন, সংকোচনের সিদ্ধান্ত সেখানে চরম হতশাজনক । রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবস্থা ফেরাতে একত্রিকরণ কখনোই মাধ্যম হতে পারে না ।
প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যেও সরকারি নীতির কড়া সমালোচনা করেন । বাস্তবে বাজারে আটকে থাকা অনাদায়ী ঋণের মধ্যে ৭০ শতাংশ টাকাই মুষ্টিমেয় কিছু পরিবারের কাছে আটকে আছে, সেই টাকা উদ্ধারের কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না । এমনকী সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের তিন বছর পুরনো আদেশ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নাম পর্যন্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করা হচ্ছে না । আর ব্যাঙ্ক একত্রিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কগুলোর হাল ফেরানোর মেকি দাবি করা হচ্ছে।
তরুণ নন্দী বলেন, যে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই করতেই সরকার এরকম যুক্তিহীন পদক্ষেপ নিচ্ছে । সরকার এই সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর মধ্যে ‘অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা কমবে’ বলে প্রচার করলেও বাস্তবে এই প্রতিযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । প্রতিযোগিতা থাকার জন্যই রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো জনস্বার্থে উন্নততর পরিষেবা দিতে একরকম বাধ্য । কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা না থাকলে জনবিরোধী নীতি নেওয়ার ক্ষেত্রে তার আর কোনও বাধা থাকবে না । সরকার একদিকে বড় ব্যাঙ্কের কথা বলছে, অন্যদিক ছোট প্যামেন্টে ব্যাঙ্কগুলোকে অনুমতি দিচ্ছে । সরকারি নীতির দ্বিচারিতা ও দূরদৃষ্টিতার অভাব এখানে অত্যন্ত স্পষ্ট।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেণুধর শর্মা, মোহিত দাস, সাগর রবিদাস, সুরজ বণিক, দীপ চৌধুরী, রঘু রবিদাস, হিল্লোল দে, অঙ্কুর চন্দ প্রমূখ । বরাক উপত্যকা জুড়েই এই ব্যাঙ্ক ধর্মঘট পালিত হয়।