Barak UpdatesCultureBreaking News
সম্মিলিত সঙ্কট! কোথায় গলদ … ১Crisis in Sammilito Mancha! Where is the fault?…Pt.1
ওয়ে টু বরাকের অনুসন্ধান।Investigation by way2barak
১৬ অক্টোবর : সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ। শিলচরের বলিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির এক যৌথমঞ্চ। ঝাঁকে ঝাঁকে গুণী শিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা এই সংগঠনের প্রাণ, সংগঠনের চালিকাশক্তি। এই শহরে সম্মিলিতর গ্রহণযোগ্যতা সত্যি অতুলনীয়। তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের একটা সর্বজন-গ্রহণযোগ্যতা ছিল, এখনও আছে। বহু সুস্থ আন্দোলনকে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, মূল স্রোতের রাজনীতিকে সেসব আন্দোলনে ঢুকতে না দিয়ে।
জন্মলগ্ন থেকেই মঞ্চে বামপন্থী, কংগ্রেসি, গেরুয়াপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী লোকেরা ছিলেন; এখনও আছেন। কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতির ছায়া কোনওদিন পড়েনি মঞ্চের কাজকর্মে, পড়েনি তাদের অনুষ্ঠানে। সময় বদলেছে, সরকার পাল্টেছে, কিন্তু সম্মিলিত তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। বলা যায়, এমনটা হতে দেননি সংগঠনের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক যোদ্ধারাই। এবং এ কারণেই শুধু শিলচর নয়, গোটা বরাকজুড়েই সম্মিলিত মঞ্চ একটি আস্থার নাম, একটি শক্তিশালী অরাজনৈতিক সংগঠনের নাম; যে সংগঠনকে মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। তাদের কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে ভালোবাসেন।
এ বার প্রশ্ন হল, এমন একটা শক্তিশালী সংগঠনে ভাঙন কেন? কী এমন হয়ে গেলো যে একে একে গণসুর, রূপম, দশরূপক, পূবালীর মতো প্রথম সারির সংস্থা মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেল। শুধু তাই নয়, বেরিয়ে গেল চেতনা ও ব্যক্তি সদস্য রাজীব কর। শোনা যাচ্ছে, এই তালিকা নাকি আরও দীর্ঘ হতে পারে। কিন্তু এটা কি কাঙ্খিত ছিল? মঞ্চের প্রগতিশীল ও সুস্থ সংস্কৃতির বার্তাবাহী সংস্থাগুলি তো মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে শিখিয়েছে, লড়াই করে হক আদায়ের গান করতে শিখিয়েছে, তারাই শিখিয়েছে সিস্টেম-এ থেকে, সিস্টেম ঠিক করার কৌশল। হঠাৎ তারাই সরে দাঁড়ানোর এই পথে কেন?
মঞ্চের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দুই সংস্কৃতিকর্মীর বাৰ্তালাপকে ঘিরে কি এতো বড় ফাটল ধরে গেল? বিভিন্ন সূত্র ঘেটে যতদূর জানা গেছে, তাতে ওই বার্তালাপ ছিল নিতান্তই ব্যক্তিগত। মঞ্চের গ্রুপে সেসব আলোচনা অনেকের কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। প্রত্যাশিত ছিল না সেসব আলোচনাকে অন্যদের দ্বারা প্রশ্রয় দেওয়ারও।
জানা গেছে, যিনি আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন, তিনি অন্য এক শিল্পীকে অভিযুক্ত করে একটা নিতান্ত ব্যক্তিগত বিষয়কে গ্রুপে সার্বিক করে দিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি পাল্টা আক্রমণ করেন। এবং তীব্র আক্রমণের পাশাপাশি কুরুচিকর মন্তব্যও করেন। দুটোই ভুল, এবং ব্যক্তিগত আলোচনা বলে মঞ্চেরই সদস্যরা জানিয়েছেন। এবং এই আলোচনা তৎক্ষনাৎ থামাতে কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি মঞ্চ নেতৃত্ব, যা বিভিন্ন ইস্তফাপত্রে প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু সামান্য এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জল এতো দূর গড়িয়ে গেল কীভাবে? কেন একটি ব্যক্তি আলোচনাকে কেন্দ্র করে ইস্তফা দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেল মঞ্চে? সত্যি কথা বলতে, ক্ষোভের বারুদ জমেছিল দীর্ঘদিন ধরেই, আর এতে স্রেফ দেশলাই জ্বালানোর কাজ করেছে গ্রুপে ওই দুই শিল্পীর ব্যক্তিগত আলাপন। অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে বোঝা গেল, এমনটা হওয়ার-ই ছিল। হয়তো এই ঘটনা না হয়ে, অন্য কোনও ঘটনার ছুতো ধরে হতো, কিন্তু হতো নিশ্চয়ই। মঞ্চে মতানৈক্য বা ফাটলের ঘটনা যে আগে ঘটেনি, তা নয়। অতীতেও এমন অনেক ড্যামেজ হয়েছিল, যা সামাল দিয়েছেন এই বলিষ্ঠ সংস্কৃতিকর্মীরাই। কিন্তু এবার তারাই কেন সমস্যা না মিটিয়ে বাইরের পথ ধরলেন? (চলবে)