CultureBreaking News
ভিডিও সিডি ‘সময়’ উন্মোচিত, সাংস্কৃতিক আয়োজনের সাক্ষী বিশিষ্টজনেরা
২ অক্টোবর : সৃষ্টিশীলতা এবং সৃজনশীলতার শ্রীবৃদ্ধির প্রয়াস যেখানে, শিলচরের নাট্যদল ভাবীকালকে খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে। এ কারণেই বোধহয় সেদিন উপচে পড়া ভিড়ের মাঝখানে সগৌরবে দীপ্তকন্ঠে বারবার ভাবীকাল নাট্যদলকে উপত্যকার ব্যতিক্রমী নাট্যদল হিসেবে আখ্যায়িত করলেন তৈমুর রাজা চৌধুরী। এ দিন অনুষ্ঠান শুরু হলো সন্ধ্যা ঠিক ৭.১৫ মিনিটে। মধ্যশহর সাংস্কৃতিক সমিতির প্রেক্ষাগৃহে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
দিনটি ৩০ সেপ্টেম্বর, সোমবার। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্নস্বাদের বাংলা গানের এক ভিডিও সিডি সংকলনের শুভ উম্মোচন। অ্যালবামের নাম ‘সময়’। শিল্পী বিধান লস্করের সঙ্গীত পরিচালনায় সংকলিত গানের অ্যালবামে গান গেয়েছেন কন্ঠশিল্পী মঞ্জুশ্রী দাস, উদীয়মান শিশুশিল্পী অক্ষরা রায় এবং উপত্যকার খ্যাতনামা লোকশিল্পী বিধান লস্কর।
সম্পূর্ণ উম্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল শিলচরের ব্যতিক্রমী নাট্যদল ভাবীকাল। যাইহোক, অনুষ্ঠানের প্রথমেই ভাবীকালের নাট্যকর্মী সুব্রত রায় সেদিন সঞ্চালকের ভূমিকায় অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য এবং ভাবীকালের সঙ্গে সেইসব শিল্পীদের সঙ্গে যে এক নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, তা ইতিহাসের পাতা টেনে যথার্থভাবে ব্যখ্যা করেন।
তারপর অস্থায়ী মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়ে এক এক করে ভাবীকালের সদস্যার পুস্পস্তবক ও উওরীয় দিয়ে বরণ করে নিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশিস ভট্টাচার্য, তৈমুর রাজা চৌধুরী, ভাবীকালের সভাপতি রঞ্জন কুমার দাস, নাট্যব্যক্তিত্ব রাহুল দাসগুপ্ত, সাহিত্যিক ঝুমুর পান্ডে, বিধান লস্কর ও বিশিষ্ট শিল্পী সুজিত কুমার দাসকে। তাদের হাত ধরেই উম্মোচিত হয় ভিডিও গানের অ্যালবাম ‘সময়’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এতদঞ্চলের অগণিত সাংস্কৃতিক কর্মী।
এরপর কন্ঠশিল্পী মঞ্জুশ্রী দাসের জনা ১৫ জন ছাত্রছাত্রী সমবেত কন্ঠে পর পর তিনটি গান পরিবেশন করলেন। সেই মুহূর্তে উপস্থিত প্রতিজন দর্শক গানের তালে তালে ধামাইল নৃত্যে মেতে উঠলেন। ক্ষণিকের জন্য মনে হলো শারদীয় উৎসবের প্রাক মুহূর্তে এ যেন এক পরিবারের সদস্যদের এক আত্মিক মহামিলন। তারপর উম্মোচিত ভিডিও গানের অংশবিশেষ প্রদর্শিত হল।
অনুষ্ঠান চলাকালীন উপস্থিত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী ও অতিথিরা ক্রমে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য তুলে ধরেন। তৈমুর রাজা চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্যে উঠে এল, বর্তমান সময়ে এই উপত্যকা এক খারাপ সময়ের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে এবং সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই উপত্যকার ঐতিহ্যপূর্ণ প্রাচীন বাংলা গানকে নব প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া সত্যিই এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
অধ্যাপক ড. দেবাশিস ভট্টাচার্য প্রাচীন বাংলা লোকসঙ্গীতের ইতিহাস এবং বর্তমান সময়ে তার প্রয়োজনীয়তার উপর তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। বিধান লস্কর অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বললেন, এই উপত্যকায় যন্ত্রসংগীত শিল্পীর অভাব আছে। যন্ত্রসংগীত শিল্পীরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পাওয়ার জন্য সৃষ্টিশীল রচনা অনেকটাই ইদানীংকালে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই উপত্যকার মানুষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রাখেন শিল্পী নিজে। তাছাড়াও সাহিত্যিক ঝুমুর পান্ডেও অনুষ্ঠানে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন। তিনি স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করেন, বর্তমানের নব প্রজন্ম দিশাহীন, সুতরাং এই ঐতিহ্যবাহী বরাক উপত্যকার সাংস্কৃতিক দিক সমন্ধে তারা অজ্ঞ। সেই পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষার চর্চার পাশাপাশি প্রত্যেক অভিভাবকদেরও উপযুক্ত দায়িত্ব নিতে হবে।
অনুষ্ঠান চলাকালীন ভাবীকালের নির্দেশক শান্তনু পাল ও শিল্পী বিধান লস্করকে সম্মাননা পত্র প্রদান করে শারদ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বদরুদ্দিন বড়ভুইয়া। পরিশেষে ভাবীকালের নির্দেশক শান্তনু পাল ধন্যবাদসুচক বক্তব্যের মাধ্যমে অ্যালবামের সাফল্য কামনা করে সবাইকে শারদ শুভেচ্ছা জানান। সব মিলিয়ে সেদিন এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাক্ষী ছিলেন সবাই।