Barak UpdatesAnalytics

আর কতবার নাগরিকত্বের পরীক্ষা দেব, প্রশ্ন মানিক দাসের
How many times more shall I have to give test of my citizenship, questions Manik Das

The attitude of a welfare state towards its citizens!

৭ সেপ্টেম্বরঃ এনআরসিতে নাম উঠেছে মানিক দাস ও তার ছেলেমেয়েদের। তবু তাঁকে তাড়া করে বেড়ায় সেই প্রশ্ন, এ দেশ কি সত্যিই আমার? তবে কেন বারবার নাগরিকত্বের পরীক্ষা?

উধারবন্দের টিকলপারের বাসিন্দা, কলা বিক্রেতা মানিক দাসের নাগরিকত্বের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ট্রাইব্যুনালের একতরফা রায়ের কথা বলে পুলিশ বাজার থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। তিনদিনের মধ্যে মারতে মারতে সীমান্ত পার করে দিয়েছিলেন। চরম পিটুনিকেই সাধারণত গরুপেটা বলা হয়।মানিকবাবু বললেন, মহীশাসন সীমান্ত দিয়ে আমাকে তাড়ানোর আগে মাটিতে ফেলে এমন মেরেছে, গরুকেও এতটা নির্মমভাবে পেটায় না কেউ।

ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছিল। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরনের শার্ট-প্যান্টের বাইরে তো কিছুই সঙ্গে নেই। এই পোশাক বৃষ্টিতে ভিজলে যে অসুখ হয়ে যাবে। তিনদিন ধরে মুখে কিছু তোলেননি। অনুকূল ঠাকুরের শিষ্য মানিকবাবু নিরামিষাশী। তাই পুলিশের এনে দেওয়া খাবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন? এতসব ভাবনা-চিন্তার মধ্যেই বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরীর নজরে পড়ে যান। তারাই তাকে ভারতে ঢোকার আরেক রাস্তা দেখিয়ে দেন। কোথায় ঢুকেছেন, কাকে কী বলবেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। পরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়। তারাই বাড়িতে খবর দেন।

ও দিকে, একতরফাভাবে বিদেশি ঘোষণার রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা শুরু হয় আদালতে। এর রায় না হওয়া পর্যন্ত আত্মগোপনেই থাকতে হয় তাকে। ১১ মাস পরে রায়ে ভারতীয় ঘোষণা করা হলে প্রকাশ্যে এসে সব কথা সংবাদ মাধ্যমে খুলে বলেন। ভাবছিলেন, সব কষ্টের অবসান হল। আর কেউ নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। কিন্তু এনআরসিতে নাম তোলার আবেদন করে ফের ভোগান্তিতে পড়তে হয় ৬২ বছরের মানিকবাবুকে। একই অবস্থা চার ছেলেমেয়ের। খসড়ায় নাম ওঠেনি।

টিকলপারের আগে তাঁরা বিহাড়ায় থাকতেন। ছোটখাটো ব্যবসা ছিল তাঁর বাবা গবেন্দ্রচন্দ্র দাসের। ১৯৭১-র আগে সেখানে তিনি ভোটও দিয়েছেন। সেই লিগ্যাসিই জমা করেছিলেন এনআরসি-তে। পরে নথি পুনঃপরীক্ষার জন্য ডেকে আর কী নথি রয়েছে, জানতে চাওয়া হয় এনআরসি সেবাকেন্দ্র থেকে। তিনি নিয়ে দেন আদালতের রায়ের কপি। তাঁরা তা নিতে নারাজ। যুক্তি দেন, এ তো ১৯৭১-র আগের কাগজ নয়! প্রচণ্ড রাগ হয় মানিকবাবুর। ক্ষিপ্ত হয়েই আদালতের কপি গ্রাহ্য নয় বলে লিখে দিতে বলেন। এ বার তাদের সকলের নাম এসেছে এনআরসিতে।

বাড়িতে বসে একান্ত সাক্ষাতকারে ওয়েটুবরাককে বলেন, বার বার নাগরিকত্বের পরীক্ষা! এ কেমন কথা! পুরনো কথা মনে হলে বড় কষ্ট পাই। পুশ ব্যাকের আগে কোনওদিন বাংলাদেশে একবারের জন্য যাইনি পর্যন্ত। আমিই কিনা বাংলাদেশি!

এখন অবশ্য এনআরসি কর্তৃপক্ষও মানিকবাবুকে ভারতীয় বলে মেনে নিয়েছে। তাঁর সমস্ত কাগজপত্র পোক্ত এখন। তবে কি একবার পাসপোর্ট করে বাংলাদেশটা দেখে আসবেন? দুই হাত নেড়ে মানিকবাবু দ্রুত জবাব দেন, সে দেশে যেতে চাই না। কক্ষনো না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker