Barak UpdatesAnalyticsBreaking News

ডিটেনশন ক্যাম্প : আমেরিকার ভয়াবহ ছবিই তো আসামে, লিখেছেন রাহুল রায়
The heart rendering scene of Detention Camps in the USA duplicated in Assam, writes Rahul Roy

রাহুল রায়

২৮ আগস্ট : দেশের ডিটেশন ক্যাম্পগুলো কি হিটলার সৌজন্যে ইতিহাস কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত হয়ে পড়েছে? এই প্রশ্ন নিয়ে গত প্রায় কিছুদিন থেকে বিতর্ক চলছে। তবে দেশটির নাম ভারত নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকা। আদতে আমেরিকার এই শরণার্থী শিবির বা ডিটেনশন ক্যাম্পের ব্যবস্থা নতুন নয়। প্রতি বছরই সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলো থেকে মানুষ বিনা অনুমতিতে আমেরিকায় আসেন। তাঁদের শনাক্ত করে নিজেদের দেশে পাঠানো পর্যন্ত এই ডিটেনশন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মূলত, এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় আমেরিকার রাজনৈতিক ও সমাজসেবী আলেক্সাণ্ড্রিয়া অকাসিও কর্টেজের ডিটেনশন ক্যাম্প পরিদর্শন ও তার পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পের দুরবস্থা নিয়ে তাঁর সরব হওয়ার পর। আলেক্সাণ্ড্রিয়া বহিরাগত এই সহায় সম্বলহীন মানুষগুলোর ওপর রাষ্ট্র পরিচালিত অত্যাচারের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতেই তাঁর পাশে দাঁড়ায় সেদেশের সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ। তাঁদের প্রতিবাদী কণ্ঠের তীক্ষ্ণতায় নড়েচড়ে বসে আমেরিকা সরকার। স্বয়ং দেশের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পর্যন্ত নিজের সরকার পরিচালিত ক্যাম্পগুলোর অব্যবস্থাকে একরকম মেনে নিয়ে মন্তব্য করতে হয় যে, ক্যাম্পগুলো পরিষ্কার হলেও তাদের ধারণক্ষমতার তুলনায় অত্যধিক জনাকীর্ণ। রাষ্ট্রসংঘও ইতিমধ্যে আমেরিকার ক্যাম্পগুলোর অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে সেখানে যে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে মানবাধিকার উলঙ্ঘনের সমূহ সম্ভাবনা তারা দেখতে পাচ্ছেন।

কী হচ্ছে আদতে সেখানে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য গড়ে তোলা ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে বিরাট সংখ্যক মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ক্যাম্পগুলোর আকারের তুলনায় আটক করা শরণার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। এই বন্দিদের মধ্যে আবার একটি বিরাট অংশ বিনা বিচারে আটক করে রাখা। ক্যাম্পে বন্দি শরণার্থীদের জন্য মানব অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উলঙ্ঘন করা হচ্ছে, শীত-গ্রীষ্ম নির্বিশেষ একই রকম অবস্থায় তাদের থাকতে হয়। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, পরিশুদ্ধ পানীয়জল, খাদ্য প্রায় কিছুই নেই। দিনের পর দিন শিবিরগুলো পরিষ্কার করা হয় না। বন্দিদের চরম অপরিষ্কার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই অমানবিক ব্যবস্থা থেকে বাদ যাচ্ছেন না মহিলা-শিশু-বয়স্ক মানুষেরা। সকলের জন্যই সেখানে এই ‘নরকসম আয়োজন’। এই ‘আয়োজনের বহরে’ অনেক মানুষ সেখানে গুরুতর শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত, অনেকেই আবার সবরকম অনুভূতির পরিধি ছাড়িয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বন্দি মানুষদের এককথায় সেখানে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করা হচ্ছে।

হ্যাঁ, এখন আসা যাক ভারতবর্ষের কথায়। ভারতে ডিটেনশন ক্যাম্প এখন অবধি শুধুমাত্র অসমেই আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের রাখার জন্য এখন অবধি রাজ্যে ৬টি ক্যাম্প রয়েছে। গোয়ালপাড়া, ডিব্রুগড়, শিলচর, তেজপুর, যোরহাট ও কোকড়াঝাড়ে কারাগারগুলোকে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ রাজ্য বিধানসভায় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৯০০ জন মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

এদিকে রাজ্যজুড়ে চলা রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ প্রক্রিয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে বাড়তে চলা শরণার্থীদের জন্য রাজ্যে আরও দশটি ক্যাম্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩০০০ মানুষ রাখার জন্য গোয়ালপাড়াতে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সর্ববৃহৎ ক্যাম্পটি গড়ে তোলা হবে। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি দেশজুড়েই করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই দেশজুড়ে অনুরূপভাবে ডিটেশনশন ক্যাম্প গড়ে তোলা হবে। ভারতের এই ক্যাম্পগুলোর অবস্থা আমেরিকা থেকে ভালো হবে? না কি সেখানেও মানুষের জন্য ‘রাষ্ট্র পরিচালিত নরক’ গড়ে তোলা হবে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেখতে হবে অসমের অবস্থা। সেখানে মানুষ কি ভালো আছেন? উত্তরটা নেতিবাচক, আমেরিকার থেকে এখানে অবস্থা কোনও দিকেই ভালো নয়, বরং অবস্থা আরও অমানবিক, নারকীয়।

বারবার রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সেখানে বন্দি মানুষদের অবস্থা এতই মারাত্মক যে, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসলে সব ডিটেনশন ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি পালন সম্ভব তো হয়নি, এমনকী এগুলোর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কোনও পদক্ষেপ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, আত্মহত্যা, গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা সেখানে দিন দিন বাড়ছে। আগামী দিনে এই ব্যবস্থা দেশজুড়ে শুরু করা হবে। অবস্থার পরিবর্তন কী তখন হবে? বড় প্রশ্ন এখানেই। আমেরিকার মতো এ দেশের সাধারণ মানুষও এই চরম অমানবিক অবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে এগিয়ে না আসলে সেই পরিবর্তনের আশা যে খুবই কম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনিশ্চয়তার আবহ বললেও মনে হয় ভুল হবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker