India & World UpdatesAnalyticsBreaking News
মণিপুর সুরক্ষা আইন ঘিরে তপ্ত জিরিবাম, পুলিশের লাঠি, শূন্যে গুলি
মণিপুর সুরক্ষা আইন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জিরিবাম। আজ লালপানিতে নাগরিক মঞ্চের আহ্বানে মহিলারা ধরনায় বসলে পুলিশ তাদের হটিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করে। প্রতিবাদে পুরুষরা এগিয়ে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। উভয়পক্ষে ঢিল ছোঁড়াছুড়ি হয় বেশ কিছুক্ষণ। পরে শূন্যে গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের অন্তত ১০ জন জখম হয়েছেন। ৬জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢিলে জখম হয়েছেন পুলিশ সুপার আইরম্বা মুবি সিংহ সহ ৪ পুলিশ কর্মীও।
এই নাগরিক মঞ্চ আসলে জিরিবামের অমণিপুরিদের সংগঠন। গত সোমবার পাশ হওয়া মণিপুর সুরক্ষা বিলের বিরোধিতায় জোটবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। আজকের আন্দোলন বানচালের ঘটনায় তাঁরা ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। বলেন, বুধবার নতুন আইনের বিরোধিতায় জিরিবামে বিশাল মিছিল হয়। সেদিনেই মহিলা-ধরনার কথা পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ সকালে তাঁরা লালপানি বাজারে ১৪৪ ধারা জারি করে। ক্ষুব্ধ মহিলারা একে উপেক্ষা করে বেলা দেড়টায় ধরনায় বসলে আচমকা পুলিশ গিয়ে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
পুলিশের বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই জেলাশাসক আগামী দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। একে লঙ্ঘন করা বেআইনি। এর ওপর তারা পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন, ঢিল ছুঁড়ে পুলিশকে আহত করেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও শুনিয়ে দিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
মণিপুর সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে আসলে অসমের মতোই বাঙালিদের টার্গেট করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় এখন তাঁদের গায়ে বিদেশি ছাপ মারা হবে। এই লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ সোমবার বিধানসভায় এটি পেশ করেন এবং তা পাশও হয়ে যায়।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ১৯৫১ সালের আগে থেকে যে সব অ-মণিপুরি মণিপুরে বসবাস করছেন, একমাত্র তাঁরাই মণিপুরের বাসিন্দা। ভারতীয় কোনও আইনে তাঁরা দেশের নাগরিক হলেও ১৯৫১-র আগের নথিপত্র না থাকলে তাঁদের মণিপুরের বাসিন্দা বলে গণ্য করা হবে না। অমণিপুরিদের চিহ্নিত করার জন্য সরকারকে একটি ডাটাবেস তৈরির জন্য আইনে বলা হয়েছে। সেজন্য এক মাসের মধ্যে ১৯৫১-র পরে আসা অমণিপুরিদের জেলাশাসকের অফিসের গিয়ে নাম লেখাতে হবে। পরে তাঁদের নামে নির্দিষ্টে মেয়াদের পাস বের হবে। ওই পাস ছাড়া মণিপুরের কোথাও কেউ থাকতে পারবেন না।
অমণিপুরিদের বক্তব্য, মণিপুর ভারতীয় রাজ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি। আর ভিত্তিবর্ষ স্থির করা হয়েছে ১৯৫১ সাল। বিষয়টি অসঙ্গতিপূর্ণ। মণিপুর সুরক্ষা আইনে শুধু মণিপুরিদের জন্য কোনও ভিত্তিবর্ষের ব্যাপার নেই। অথচ প্রচুর বাঙালি, নেপালি, বিহারী, পঞ্জাবি দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্যে বসবাস করছেন। তাঁদের যদি মণিপুরের বাসিন্দা বলা না হয়, তবে ভারতীয় নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। মঞ্চের সভাপতি মহম্মদ ফয়েজ আহমদ ও সম্পাদক মহম্মদ তাজ উদ্দিন রাজ্যপাল নাজমা হেপতুল্লাকে চিঠি পাঠিয়ে বলেন, ভারতের নাগরিক হলেও ৫১-র শর্ত পূরণ করতে না পারলে মণিপুরের বাসিন্দা হতে পারবেন না, এ কেমন কথা। তা যে ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর বিরোধী। কারণ এখানে কোনও দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া, আইনে ৫১-র পরে আসা অমণিপুরিদের পাস নিয়ে বসবাস করতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। তাতেও ভারতীয় নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ যে কোনও ভারতীয় নাগরিকের দেশের যে কোনও প্রান্তে থাকার অধিকার রয়েছে। তাঁদের কথায়, এই বিলটিকে ইনার লাইন পারমিটের ধাঁচেই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া কোথাও ইনার লাইন পারমিট ব্যবস্থা চালু হতে পারে না। ফলে মণিপুরের মতো সমতলীয় উপত্যকায় এই বিলকে মেনে নেওয়া যায় না। তাঁরা রাজ্যপালের কাছে অনুরোধ করেছেন, বিলটি বিধানসভায় পাস হলেও তিনি যেন তাতে অনুমোদন না জানান।