NE UpdatesAnalytics

বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের নিন্দা-প্রতিবাদ বাংলা সাহিত্য সভা অসম-এর

গুয়াহাটি, ১৭ আগস্ট : সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ইসলামি মৌলবাদী শক্তির সে-দেশের সংখ্যালঘু, হিন্দু ও অন্যান্য মানুষদের ওপর বর্বরোচিত হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া সহ নানা অপরাধমূলক কাজের প্রেক্ষিতে বাংলা সাহিত্য সভা অসম তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। সভার রাজ্য সমিতি ও গুয়াহাটি শাখার উদ্যোগে এক প্রতিবাদ কর্মসূচি রূপায়ণ করা হয়। শুক্রবার গুয়াহাটির বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ সাব্যস্ত করেন। সভার এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন রাজ্য সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য কার্যকরী সভাপতি রবিশংকর দত্ত, রাজ্য মূল সমিতির পক্ষে তুষারকান্তি সাহা, চন্দন ভাদুড়ি এবং গুয়াহাটি শাখার পক্ষে অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়া নাথ, মোনালিসা ভট্টাচার্য, সংঘমিত্রা দেব ও নবনীতা দত্ত।

এ দিন বাংলাদেশের অ্যাসিস্টেন্ট হাই কমিশনার রুহুল আমিনের মারফৎ বাংলা সাহিত্য সভা একটি প্রতিবাদপত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের কাছে প্রেরণ করে। সভার সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “রবীন্দ্রনাথকে কেউ ব্রাহ্মকবি ভেবে আস্বাদন করে না। কাজী নজরুলকে আমরা মুসলিম ভেবে গাই না বা পড়ি না। তেমনি মাইকেল মধুসূদনকে কেউ খ্রিস্টান ভেবে পড়ে না। পল্লিকবি জসিমুদ্দিনকে মুসলমান আর জীবনানন্দকে হিন্দু ভেবে ভাগাভাগি করে না। অথচ বাংলাদেশটা বাঙালির দেশ না হয়ে মুসলমান বা মোল্লার দেশ হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখের কথা আর কী হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আলাদা দেশ হলেও এটা আমাদেরই অঙ্গ ছিল। ভাষা-সংস্কৃতি এক। ওখানকার সিংহভাগ মুসলমানের পূর্বপুরুষ হিন্দু বা বৌদ্ধ। আমাদের সাহায্যেই সে-দেশ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয়েছিল। অথচ তার পঞ্চাশ বছর পরে তীব্র ভারত বিরোধিতাই দেখা যায়। আবার ভারতীয় পণ্য, চিকিৎসা ছাড়া ওদের চলে না। এ কী বৈপরীত্য। পুরোটাই হিন্দুর দেশ ছিল। এখন সেখানে মাত্র আট শতাংশ হিন্দু অবশিষ্ট। বাকিদের ওপরও হত্যা হামলা ধর্ষণ নির্যাতন হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস বলেন, “বাংলাদেশ সুস্থির হলে সকলেরই মঙ্গল। আমরা চাই হিন্দু নিধন ও অন্যান্য মানুষদের ওপর এই পাশবিক নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ হোক।” সভার তরফে রবিশংকর দত্ত, তুষারকান্তি সাহা, জয়া নাথ সহ সকলেই দোষীদের শাস্তি ও হিন্দুদের নিরাপত্তার দাবি জানান।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে প্রেরিত এই প্রতিবাদপত্রে লেখা হয়েছে :”বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত খুনোখুনি, সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য সংবাদ ও গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে সম্প্রচারিত হচ্ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আপনাদের আভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় সমস্যা হলেও বাঙালি হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, নিধন অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সে-বিষয়ে বাঙালি হিসেবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, সেই কামনা করি। মহোদয়, এই সুযোগে এক সংগঠিত মৌলবাদী শক্তি পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজের যে সীমাহীন, নির্মম ও নজিরবিহীন আক্রমণ চালাচ্ছে আমরা তার তীব্র ভাষায় নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে এই নারকীয় ঘটনাবলির অবসান ঘটিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রাণ ও সম্পত্তির সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য আমরা বাংলা সাহিত্য সভা অসম-এর পক্ষ থেকে গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশের সহকারী উচ্চায়ুক্তের মাধ্যমে আপনাকে দাবি জানাচ্ছি।” বাংলাদেশের হয়ে প্রতিবাদপত্রটি গ্রহণ করেন সহকারী রাষ্ট্রদূত রুহুল আমিন। তিনি আশ্বাস দেন, প্রতিবাদপত্রটি তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠাবেন এবং আশা ব্যক্ত করেন, অচিরেই পরিস্থিতি শান্ত সুস্থির হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker