Barak UpdatesAnalytics
সীমান্ত ইস্যুতে মিজোরামের কাছে আসামের আত্মসমর্পণে ক্ষুব্ধ বিডিএফ
৬ আগস্ট : সীমান্ত ইস্যুতে কেন্দ্রের চাপে মিজোরাম সরকারের কাছে আসাম সরকার নির্লজ্জভাবে আত্মসমর্পণ করেছে বলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। এর পাশাপাশি বিডিএফ আগের ছ’দফা দাবিতে অনড় রইল। সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার আইজলে অনুষ্ঠিত ১৫ মিনিটের বৈঠকের পর যেভাবে যৌথ প্রেসবিবৃতি দেওয়া হল তাকে ‘লোকদেখানো নাটক’ অভিহিত করে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল ফ্রন্ট।
বিডিএফ আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ করে আসছে আসাম সরকার এবং অবশ্যই সবকিছু কেন্দ্রের নির্দেশে হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যখন সীমান্ত এলাকা সেনার অধীনে তখনও যতটা এগিয়ে মিজো প্রশাসন আসামের জমিতে পোস্ট বানিয়েছিল তা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। গতকালের বৈঠকের নির্যাস থেকে বোঝা গেল, মিজোরাম সরকারের এই অবৈধ দখলদারিকে মেনে নিয়েছে আসাম সরকার। প্রদীপবাবু বলেন, এটা মেনে নেবার সিদ্ধান্তই যখন নেওয়া হল, তখন গত ২৬ জুলাই এই পোস্ট মুক্ত করার জন্য কেন পুলিশ বাহিনীকে পাঠানো হয়েছিল ? তিনি বলেন, অতুল বরার মতো মন্ত্রীদের যদি সামান্য স্বাভিমানও থাকত, তাহলে তিনি ৬ জন পুলিশকর্মীর নির্মম হত্যার পর বলতে পারতেন না যে এসব ‘অতীতকে ভুলে যেতে হবে।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বলেন, প্রথম থেকেই বৈঠকের ব্যাপারে ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসাম সরকার। প্রথমত যেখানে আসামের জমি বেদখল হল, আসামের পুলিশ জওয়ানদের হত্যা করা হল তারপরও কোন যুক্তিতে মিজোরামে বৈঠকের কথা মেনে নিল দিসপুর ? এই বৈঠক তো গুয়াহাটি বা দিল্লিতে হওয়ার দাবিতে অনড় থাকা উচিত ছিল সরকারের। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক এবং সাংসদ যারা এই সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ওয়াকিবহাল তাদের বাদ দিয়ে এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত কিভাবে নেওয়া হল ? মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী আসামের মন্ত্রীদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎও করেননি। প্রদীপবাবু বলেন, ‘আমরা জানতে চাই তিনি এতো সাহস পান কি করে ? কেনই বা এই আত্মসমর্পণ ? এ ব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কি বাধ্যবাধকতা রয়েছে ? সবটাই কি মিজোরামের আগামী নির্বাচনে এনডিএ যাতে রাজনৈতিক ক্ষতি না হয় তার স্বার্থে ? নাকি বৈদেশিক যোগাযোগের জন্য জোরামথাঙ্গাকে ঘাটাতে ভয় পায় কেন্দ্র সরকার ?
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এ দিন বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক অবরোধের পক্ষপাতী নই। কিন্ত যারা এতদিন ধরে নিজেদের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে শুধু রাজ্যের স্বাভিমান রক্ষার্থে অবরোধ করছেন সরকারের এরকম আত্মসমর্পণের পর তারা যদি অবরোধ না ওঠান তাহলে কিছু বলার নেই। অন্ততঃ বিডিএফ-এর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়। এবং এই ব্যাপারে সরকার বল প্রয়োগ করলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কাজেই সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক।
এ দিনের সভায় উপস্থিত বিডিএফ এর অপর দুই আহ্বায়ক পার্থ দাস ও জহর তারণ বলেন, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিডিএফ তাদের আগেকার দাবিতেই অনড় থাকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দাবিগুলো হচ্ছে ১) মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীকে আসামের মাটিতে দাড়িয়ে পুরো ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। ২) আসামের ১৭০০ হেক্টর জমি রাজ্যকে ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩) গৃহমন্ত্রকের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে অবিলম্বে সীমান্ত চূড়ান্ত করে ফেন্সিং এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং ড্রোন বা উপগ্রহ মারফত এই নির্ধারিত সীমান্তে প্রতিনিয়ত নজরদারি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ৪) আসামের নির্দোষ পুলিশ ও নাগরিকদের যারা আহত ও হত্যা করেছে তাদের অবিলম্বে শনাক্ত করে যথাযোগ্য শাস্তি দিতে হবে। ৫) সীমান্তে বসবাসকারীদের বরাকের নাগরিকদের আত্মরক্ষার্থে অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে হবে। ৬) আসাম সরকারের তরফে সমস্ত মিজোরাম সীমান্ত ‘ ইনারলাইন পারমিট’ ব্যাবস্থা চালু করতে। অন্যথায় এই ইস্যুতে বিডিএফ এর আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।