Barak Updates

শুরু হল ছোট দুধপাতিল হাই স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ

ওয়েটুবরাক, ২ এপ্রিল : শিলচর শহর থেকে খানিকটা দূরে ছোটদুধপাতিল গ্রাম, যার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এই শহর গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। মাত্র একটি সেতুর অভাবে যেখানে গোটা এলাকা এখনও উন্নতি থেকে বঞ্চিত, সেই এলাকার সব থেকে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছোটদুধপাতিল হাইস্কুল পা দিয়েছে তার সফলতার ৫০ বছরে। শনিবার শুরু হয়েছে বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উদযাপন। প্রথম দিন শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছে।

ছোটদুধপাতিলের রংটিলা এলাকায় বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এদিন সকালে পতাকা উত্তোলন হয়। পরে বেরোয় শোভাযাত্রা৷ তাতে যোগ দেন বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী সহ এলাকার প্রচুর মানুষ৷ যেহেতু এলাকায় এটি প্রধান বিদ্যালয়, ফলে প্রায় প্রতিটি ঘরেই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা রয়েছে। প্রত্যেকের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শোভাযাত্রা এক অন্য মাত্রা পায়। শোভাযাত্রা শেষে শুরু হয় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অনন্ত চক্রবর্তী সহ প্রাক্তন শিক্ষক বৃন্দাবন দাস, হরেকৃষ্ণ রাহা, স্থানীয় সমাজসেবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অমলেন্দু দাস, ডা. অমিত কালোয়ার সহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

বিদ্যালয়ে বহুবছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা অনন্ত চক্রবর্তী তুলে ধরেন ৫০ বছরের যাত্রার বহু ইতিহাস। তার কথায় উঠে আসে একেবারে প্রথম দিকে বিদ্যালয়ের স্থাপন নিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জ তারা অতিক্রম করে এসেছিলেন তার ইতিহাস। তিনি বলেন, ‘গ্রামের আর্থসামাজিক পরিবেশ এবং রাস্তাঘাটের অভাব এসব বহু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও শিক্ষকরা হাল ছাড়েননি। বর্ষার মরশুমে প্রচণ্ড কাদামাখা রাস্তা দিয়েও সাইকেল চালিয়ে শিক্ষকরা শহর থেকে এসেছেন, ছাত্রদের পাঠদান করেছেন। বিদ্যালয়ের খাতিরে বহু শিক্ষক শহর ছেড়ে গ্রামে এসে থাকতেও শুরু করেছিলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থার প্রভাব বহুবার পড়েছে বিদ্যালয়ের পারফরমেন্সে। শিক্ষকরা অতিরিক্ত পাঠ দান করে মাধ্যমিকে প্রতিবছর রেজাল্ট উন্নত করার চেষ্টা করেছেন। শহরের বহু বিদ্যালয় থেকে  রেজাল্ট তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষকরা কখনও হাল ছাড়েননি। গ্রামাঞ্চলে ছাত্রছাত্রীরা যে কঠিন জীবন কাটিয়ে এসে শিক্ষার আলো দেখতে চায়, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক।

অন্যান্য অতিথিরা বিদ্যালয়ের বহু ইতিহাস তুলে ধরেন। কীভাবে এতটা বছর ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ছোটদুধপাতিল হাই স্কুল, বারবার উঠে আসে আলোচনায়। বিদ্যালয়ের ইতিহাস  লিপিবদ্ধ করে রাখতে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে৷ সম্পাদনা করেছেন শিক্ষক শৈলেন দাস। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা যতটা পেরেছি বিদ্যালয়ের ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করেছি এই স্মরণিকায়। এছাড়া প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের লেখার মাধ্যমে একে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছেন।’ এদিন অনুষ্ঠানের অতিথিদের হাত ধরেই স্মরণিকাটির আবরণ উন্মোচন হয়।

মূল অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ প্রথম দিন স্থানীয় শিল্পীরা লোকগীতি, কীর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলেন। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে যেন এক উৎসবে মেতে ওঠেন। প্রাক্তন ছাত্র আনন্দ ঘোষ, তন্ময় পুরকায়স্থরা  জানিয়েছেন, তাদের ছোটবেলার প্রতিটি স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই বিদ্যালয়। তাঁরা বলেন, ‘মূলত আর্থিক দিকে পিছিয়ে পড়া সমাজকে পাঁচটি দশক ধরে শিক্ষার আলো দেখিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে শিক্ষা পেয়ে বহু ছাত্র-ছাত্রী জীবনে উন্নতি করেছেন এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আমাদের কাছে এই উৎসবটি এজন্যই আরও বেশি মনের কাছের।’

সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে একটি কমিটি গড়ে তোলা হয়েছে৷ সদস্যরা প্রায় সকলে মূলত প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী। তারা জানিয়েছেন, দুদিনের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ রবিবার রয়েছে প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রয়েছে সাহিত্য আসর, মত বিনিময় এবং মাধ্যমিকে ভালো ফল করা প্রথম পাঁচ ছাত্রছাত্রীকে সংবর্ধনা। এছাড়া প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদানও করা হবে এদিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker