CultureBreaking News
শিলচরে ভাষাসেনানী স্মরণ সমিতির আত্মপ্রকাশ, আন্তর্জালে উনিশ স্মরণ
২২ মে : ১৯শে মে “ভাষা শহিদ দিবস” উপলক্ষে শিলচরে আত্মপ্রকাশ করল ভাষা সেনানী স্মরণ সমিতি। সকাল ৮টায় শিলচর শ্মশানঘাট সংলগ্ন মাতৃভাষা সেনানীদের স্মৃতিফলকের পাদদেশে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করে শুরু হয় সারা দিনব্যাপী “আত্মায় ভারতমাতা, সত্তায় উনিশ” শীর্ষক ভাষা-বীর স্মৃতি তর্পন অনুষ্ঠান। যার সঞ্চালনায় ছিলেন শান্তুনু সূত্রধর, সন্দীপন দত্ত পুরকায়স্থ এব্ং বিক্রমজিৎ বাউলিয়া। অতিমারির দরুন লকডাউন এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার নিয়মাবলী কার্যকর থাকায় সাধারণ জনসমাবেশ বর্জন করে পুরো অনুষ্ঠানই সম্প্রচার হয় আন্তর্জালে সংগঠনের ফেসবুক পেজের লাইভ ব্রডকাস্টের মাধ্যমে।
এই পর্বে যোগদান করেন দেশ-বিদেশে বসবাসরত বহু খ্যাতনামা শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক এবং অধ্যাপকরা। সুইডেন, বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রথিতযশা শিল্পীরা সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশন করেন নিজেদের ফেসবুক প্রফাইল থেকে ভাষা সেনানী স্মরণ সমিতির পেজে এসে। এদের মধ্যে ছিলেন শেখর দেব, সঞ্চারী ভট্টাচার্য, ঋতুপর্ণা রায়, লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য, শতরুপা চক্রবর্তী, মনিষা রায়, সন্দীপ ভট্টাচার্য এবং নিরঞ্জন দে ও জ্যোতি ভট্টাচার্য।
স্থানীয় শিল্পীরা সামাজিক দুরত্ব মেনেই সমবেত হন শিলচরের ইলোরা ক্যাম্পাসে। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিক্রমজিৎ বাউলিয়া, সর্বাণী ভট্টাচার্য, এব্ং দেবশ্রী দত্ত। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সঙ্গীতা দত্ত চৌধুরী। সেখান থেকে সম্প্রচার হয় ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে। প্রাসঙ্গিক বক্তৃতা রাখেন বাসুদেব শর্মা। সন্ধ্যে থেকে নানাবিধ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে ইতি টানা হয় সারা দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার। এই অন্য ধরনের সামাজিক অবস্থানেও শিলচরে উনিশে মের ভাষা সংগ্রামীদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে বলাটা কোনভাবেই উচিত হবে না। ভাষা সেনানী স্মরণ সমিতির মতো অন্যান্য স্থানীয় সংগঠনও এই আন্তর্জালিক অনুষ্ঠানমালার মডেল অনুসরণ করেন।
ভাষার বিচরণ এবং মাতৃভাষার সঙ্গে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্তিত্বের গুঢ় সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই অনুষ্ঠানমালায় বক্তব্য পেশ করেন। বক্তারা ছিলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক অচিন্ত্য বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. অজিত কুমার সিংহ ও ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী, আন্তর্জালিক সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ এবং লেখক সুবিমল ভট্টাচার্য, ভাষা সেনানী কমলা ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্রী বর্ণালী ভট্টাচার্য এবং কবি সাহিত্যিক অতীন দাশ। তাতক্ষনিক চিত্রাঙ্কশ প্রদর্শন করেন সুজিত পাল এবং জয়দীপ ভট্টাচার্য৷
এখানে বলাটা প্রাসঙ্গিক যে, ভাষা সেনানী স্মরণ সমিতির সেদিনের অনুষ্ঠানের শীর্ষক “আত্মায় ভারতমাতা, সত্তায় উনিশ” এর মধ্যে রাষ্ট্রবাদী ভাবধারার সঙ্গে মাতৃভাষা আন্দোলনের এক গভীর যোগ রয়েছে বলে মনে করেন এই সংগঠনের সদস্যরা। উনিশ স্বতন্ত্র ও নিজস্ব ভাবনায় জাগ্রত এক আ্ন্দোলন। এই আন্দোলনের সুদুরপ্রসারী অনেক প্রভাব আসামবাসী বাঙালি এবং অনসমিয়া ভাষাগোষ্ঠীর জীবন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারিত করেছে। আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এক রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের ভাবনার দিকে সেই চিন্তাধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।