NE UpdatesBarak UpdatesIndia & World UpdatesBreaking News
শিলচরের পৌর নির্বাচন নিয়ে আসাম সরকার টালবাহানা করছে, অভিযোগ নাগরিক মঞ্চের
ওয়েটুবরাক, ২৭ সেপ্টেম্বর : শিলচরের পৌর নির্বাচন নিয়ে আসাম সরকার টালবাহানা করছে৷ প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ, শিলচর এর পক্ষ থেকে শুক্রবার সিটিভিওএ কমপ্লেক্সের সভাঘরে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে এই কথা বলা হয়। মঞ্চের সভাপতি ধ্রুব কুমার সাহা বলেন, শিলচর শহরের নাগরিকদের আসাম সরকার দীর্ঘ বছর ধরে প্রতারণা ও অবিচার করছে। তিনি বলেন শিলচর পৌরসভার সরকারি আধিকারিক কর্তৃক বেআইনি ও অন্যায়ভাবে ২৭৮ ধরনের পৌরকর, বিশেষ করে জলকর, জমি ক্রয় ও ঘর তৈরির ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর ইত্যাদি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৪ জুলাই শিলচরে গণ অভিবর্তনের মাধ্যমে গঠিত প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ, শিলচর পৌর আধিকারিক, জেলা শাসক, আরবান ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার সহ আসামের মুখ্যমন্ত্রীর নিকট দাবি জানানো হয় যে, পৌর নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরনের কর বৃদ্ধি করা চলবে না। উক্ত দাবিতে ২৯ জুলাই পৌরসভার সামনে গণধর্ণা, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ধর্ণা, বিক্ষোভ এবং গত ৯ সেপ্টেম্বর গণ মিছিল আয়োজন করে একই দাবি বার বার তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিলচরে মুখ্যমন্ত্রী এলেও পৌর কর সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কথা বলেননি, শুধু পৌর নির্বাচন সম্পর্কে বলেছিলেন যে পৌর কর্পোরেশন নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে, তাই পৌর নির্বাচন করানো সম্ভব হয়নি। শিলচরের নাগরিক এ নিয়ে হাইকোর্টে পিআইএল করলেই পৌর নির্বাচন করা হবে।
ধ্রুব কুমার সাহা বলেন এই সফরের আগেও শিলচর এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে স্থানীয় সাংসদ, বিধায়করা চাইলেই পৌর নির্বাচন করানো হবে। সম্প্রতি শিলচরের মাননীয় বিধায়ক সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেন যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় হাইকোর্টে দায়ের করা পিআইএল প্রত্যাহার হয়ে গেছে। অথচ হাইকোর্টে কোনো পিআইএল করা হয়নি, বিধায়কের দেওয়া তথ্য সঠিক নয়। শহরতলী সংলগ্ন কিছু এলাকার জনগণ তাদের এলাকাকে পৌর কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন, আইনি ভাষায় যাকে ‘রিট’ বলা হয়। তা খারিজ হওয়ার সাথে নির্বাচন করানো বা না করানোর কোন সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত, এই ‘রিট পিটিশন’ জমা পড়েছিল ২০২৩ সালে, আসামের শিলচর ছাড়া বাকি পৌরসভার নির্বাচন করানো হয় ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে। অর্থাৎ সরকার চাইলে তখনই ডিব্রুগড় পৌরসভার মতো শিলচর পৌরসভার নির্বাচন করিয়ে তা পরবর্তীতে পৌর নিগমে উন্নীত করাতে পারত। তা না করে বিগত চার বছর পৌর নির্বাচন আটকে রেখে আসাম সরকার শিলচরের জনগণকে দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করতে বাধ্য করিয়েছে। শুধু তাই নয়, পৌর নির্বাচন আটকে রেখে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত পৌর প্রতিনিধিদের আলোচনার মধ্য দিয়ে পৌর কর নির্ধারিত করার আইনি বিধি লঙ্ঘন করে আধিকারিকের মাধ্যমে নির্দেশ জারি করে অন্যায় ভাবে পৌরকর বৃদ্ধি করা হয়েছে। মঞ্চের পক্ষ থেকে এও বলা হয় যে হাইকোর্টে ‘রিট’ করার জন্য নির্বাচন করানো যায় নি বলে যে আষাঢ়ে গল্প তৈরি করে ছড়ানো হচ্ছে তা কোন ভাবেই সত্য নয়। কারণ ২০২০ সালের ১ এপ্রিল শিলচর পৌর সভার মেয়াদ উত্তীর্ণের পর আজ অবধি আসাম সরকার কখনও পৌর নির্বাচনের জন্য কোনো নোটিশই জারি করেনি যা হাইকোর্ট আটকে দিয়েছিল। হাইকোর্টে শুধু মাত্র নতুন কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্ত করানোর নির্দেশে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করা হয়, তাও ২০২৩ সালে। আসাম সরকার তখনও হাইকোর্টে নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে জারি করা স্থগিতাদেশ রেখে নির্বাচন করানো সম্ভব কি না? তা’ও হলফনামা দিয়ে জিজ্ঞেস করে নি। তাই আমাদের স্পষ্ট অভিমত যে, হাইকোর্টে রিট আবেদন খারিজ হয়ে গেছে বলেই যারা নির্বাচন করানো হবে বলে গুজব ছড়াতে শুরু করেছেন, তারা সত্যের অপলাপ করছেন এবং শহরের নাগরিক পৌর নির্বাচন না করানো পর্যন্ত বর্ধিত পৌর কর না দেওয়ার যে অঙ্গীকার করেছেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তা স্তিমিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ, শিলচর এর পক্ষ থেকে আসাম সরকারের নিকট স্পষ্ট করে পুনরায় দাবি জানানো হয় যে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌর নির্বাচন কোন টালবাহানা না করেই অনুষ্ঠিত করতে হবে এবং পৌর নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের বর্দ্ধিত কর সংগ্রহ বন্ধ রাখতে হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, সীমান্ত ভট্টাচার্য, মলয় দত্ত, রামেন্দ্র ভট্টাচার্য, সঞ্জীব রায়, রঞ্জিত চৌধুরী, হিল্লোল ভট্টাচার্য, অরিন্দম দেব, পাভলভ লস্কর, অভিজিৎ দাম, আশু পাল প্রমুখ।