Barak UpdatesCultureBreaking News

শিকড়ের সন্ধানে শিক্ষক সংস্থার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লিখেছেন গুণাকর দাস

।।গুণাকর দাস।।

১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কিছুটা বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। আমাদের বাসার কাজের দিদি এসে খুব কাঁদছিল । এনআরসিতে নাম আসেনি। অনেকবার হাজিরা দিয়েছে। দফায় দফায় কাগজপত্র জমা করেছে। কাজ হয়নি। আমাকে বলছিল, ‘ দাদাবাবু, কিছু করুন ‘। ওকে কী করে বোঝাবো, ওর দাদাবাবুর কোনও ক্ষমতাই নেই। নিজের অক্ষমতা ঢাকতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া। লিংক রোড পয়েন্ট থেকে অটো নিয়ে দেবদূত সিনেমা হল পর্যন্ত গিয়ে নেমে পড়লাম। হঠাৎ মনে হল বঙ্গভবনে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী সংস্থার ২৩তম রাজ্য দ্বিবার্ষিক অধিবেশনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢুকে পড়লাম।

ওই সময় অনেক বক্তাই বক্তব্য রাখছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন অভিজিৎ সাহা ও দীপক সেনগুপ্ত। এই সেশনের পর শুরু হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে সরস্বতী বন্দনা। তারপর একে একে ডিমাছা নৃত্য, মনিপুরী নৃত্য, বিহু নৃত্য, ঝুমুর নৃত্য এবং অন্যান্য একক নৃত্য অনুষ্ঠান বিভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশিত হলো। মণিপুরী নৃত্যের একটি বৈশিষ্ট্য হল তার নিজস্ব শৈলী যা মনকে ভরিয়ে দেয়। অনুরূপভাবে বিহু নৃত্যটি পরিবেশিত হলো যথার্থ আঙ্গিকে।’ বিহু ‘ মানেই শরীর ও মনের আনন্দের অনুভূতি। একক অসমীয়া নৃত্যটি খুবই ভালো পরিবেশিত হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি মন ছুয়ে গেল নৃত্যালেখ্য/সঙ্গীতালেখ্য “ভাঙ্গো নিরাশার অন্ধকার “‘। রচয়িতা: পাপড়ি ভট্টাচার্য। তিনি বরাক উপত্যকার নবপ্রজন্মের একজন প্রথম সারির লেখিকা। নৃত্যালেখ্য/সঙ্গীতালেখ্য এই সময়ের আহ্বান।সময়োপযোগী লেখা। সংযোজনা ও উপস্থাপনা এককথায় দারুণ। অনেকদিন পর সমীরদার কবিতা পাঠ ও বলিষ্ঠ কণ্ঠের উচ্চারণ শুনতে পেলাম। শান্তশ্রীর সুকণ্ঠও শুনলাম অনেকদিন পর। শান্তশ্রীর কথা এখানে আলাদা করে বলার দরকার। কিছুদিন আগেও উনি এবং উনার স্বামী যেভাবে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তারপরও উনার শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। উনার মেয়েও উঁচুদরের নৃত্যশিল্পী। দীপক সেনগুপ্তের কাছ থেকে জানতে পারলাম উনার এই অনুষ্ঠানে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা। ভালো থাকুন শান্তশ্রী ও আপনার পরিবার। নৃত্যালেখ্যে/ সঙ্গীতালেখ্যে অন্যদের পরিবেশনাও ছিল অনবদ্য।

আর সেইসঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট মেয়েদের নৃত্য তো অনুষ্ঠানের অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। ওরা জীবনে আরও প্রতিষ্ঠিত হোক, এ কামনা করছি। এককথায় অসাধারণ। সবশেষে বরাক উপত্যকার বিখ্যাত ‘ধামাইল’। খুব জমে উঠেছিল অনুষ্ঠান। বিহু নৃত্যে যেমন বাঙালী প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেভাবে অসমীয়া প্রতিনিধিরা ধামাইল নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। এটাকেই বলে সত্যি কারের মেলবন্ধন। শিল্প ও সংস্কৃতি পারে সবার মধ্যে দূরত্ব গুছিয়ে কাছে টেনে নিতে। এজন্যই এই অনুষ্ঠানটি সার্বিকভাবে সাফল্যলাভ করেছে। উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই এই প্রচেষ্টার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দীপক সেনগুপ্ত ও অন্যান্যরা। দীপকের কথা আলাদা করে বলার দরকার নেই। ও একাই একশ। অন্যরাও অসাধারণ। ভালো লাগলো ‘ জগদীশদা’র নামে মঞ্চ উৎসর্গ করা।

মনে পড়ে গেল ১৯৮৮ সালে বিহাড়ায় চাকরি জীবনের শুরু। ১৯৮৯ সালে নাজিরায় কনফারেন্সে যাওয়া। সমীরদা, সুজিতদা, স্বর্গীয় জগদীশদা, স্বর্গীয় শ্যামলেন্দুদা এবং আরও অনেকে। তাই সেই অনুষ্ঠান আমার শিকড়ের সন্ধান খোঁজা। দেখা হল মানিক চক্রবর্তী, প্রদীপ দেব সহ আরও অনেকর সাথে। পুরনো বন্ধু। ঘুরে ফিরে আসলো পুরনো কথা। পুরনো স্মৃতি। সব ভালো জিনিসই একসময় শেষ করতে হয়। তাই অনুষ্ঠান শেষ হলো তার নিয়ম মেনে। রেখে গেল ভবিষ্যতের স্মৃতি। বাসায় আসতে আসতে ভাবছিলাম ‘ মানুষ মানুষের জন্যে ‘ না ‘ মানুষ হিন্দু মুসলিম বাঙালির এনআরসি ও ৬ ধারার এর জন্যে ‘ । ভবিষ্যতই এর উত্তর বলতে পারবে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker