Barak UpdatesCultureBreaking News

লকডাউন জামাইষষ্ঠী! কবজি ডুবিয়ে খেতে না পারলে আবার আয়োজন কীসের?

২৮  মে : বৃহস্পতিবার জামাইষষ্ঠী। গৃহস্থ বাঙালির এক পারিবারিক উৎসব। কিন্ত এ বার লকডাউন এই উৎসবের আনন্দটাই যেন কেড়ে নিয়েছে। বুধবারও তা নিয়ে কোথাও তেমন কোনও উত্তাপ ছিল না। শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য জামাইদের ব্যস্ততা নেই, অফিসে ছুটির আবেদন নেই। শ্বশুরদের ব্যাগ হাতে বাজারে দৌড়ঝাঁপ নেই। হোটেল, রেস্তোরাঁয় স্পেশাল ডিশের অর্ডার দেওয়া তো এখন অনেকের কাছে স্বপ্নের মতোই।

আসলে করোনা ভাইরাস পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়ার আয়োজন যেমন ভুলিয়ে দিয়েছে, তেমনি জামাইষষ্ঠীও। এর পাশাপাশি ঈদের আনন্দেও রাশ টেনেছে এই লকডাউন। ২৫শে বৈশাখ ও নজরুল জয়ন্তী পালন করার ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল লকডাউন। কিছু কিছু আয়োজন সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অনলাইনে হয়েছে। এই যেমন ঘরে বসে একান্তে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে কবি স্মরণ বা নমো নমো করে অক্ষয় তৃতীয়ার পূজাপাঠ। জামাইষষ্ঠীও সে পথ ধরেই হাঁটছে। টেলিফোনে জামাইকে আশিস দেওয়া, বিপরীতে জামাই দূরভাষেই প্রণাম সেরে নিলেন শ্বশুর-শাশুড়িকে। উপহার দেওয়া-নেওয়াও আপাতত শিকেয়।

কিন্তু খাওয়া-দাওয়া! লকডাউনের বাজারে আয়োজন কোথায়? মাছ-মাংসের দোকান নেই। ভাল, পছন্দমতো মাছের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরলেও লকডাউনে তা জোগাড় করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। আর শ্বশুরবাড়িতে কষ্ট করে আয়োজন না হয় হলো, কিন্তু জামাই বাবাজি যাবেন কী করে? ট্রেন নেই, বাস নেই, এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য হলে তো আর কথাই নেই। চার চাকার গাড়িতে ফুল ফ্যামিলিকে তোলা যাবে না। তাই মাছের মুড়োটি, কাঁসার বাটিতে আমের আঁটিটি আর এই বছরে জুটছে না। কব্জি ডুবিয়ে খেতে না পেলে সেটা আবার কীসের জামাইষষ্ঠী। ফলে ঘরে বসে আফশোস করা ছাড়া অন্তত এ বার জামাইদের আর কিছু করার জো নেই। তবে সাইকেল, বাইক, রিকশা নিয়ে যারা শ্বশুরবাড়ি যেতে পারেন, তাঁরা অবশ্য কিছুটা ছাড় পাবেন। কিন্তু যদি শ্বশুরবাড়ি কনটেনমেন্ট জোনে পড়ে যায়, তাহলে? এখানে তো আর মুখ মাস্কে ঢেকে বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও লাভ হবে না।

তবু জামাই আদরের কোনও কমতি নেই বাঙালি জীবনে। সেটা বারোমাস। নতুন পাখার উপরে আমের পল্লব এবং আম-সহ পাঁচ রকমের ফল সাজিয়ে জামাই-এর মঙ্গল কামনায় শাশুড়ির দল ব্রত পালন করেন এই দিনটায়। ১০৮টি দুর্বার আঁটি দিয়ে উপকরণ সাজাতে হয়। করমচা-সহ পাঁচ থেকে সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার উপর সাজিয়ে রাখতে হয় শাশুড়িকে। সেই সঙ্গে নতুন পোশাক তো আছেই। বিনিময়ে অবশ্য শ্বশুর, শাশুড়িদেরও প্রাপ্তি ঘটে। এই বাজারে কপাল ভাল শুধু ঘরজামাইদের। সেই সব জামাইরাই এবার বাঁচিয়ে রাখবেন বাঙালির ঐতিহ্য। শুভ হোক লকডাউন জামাইষষ্ঠী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker