Barak UpdatesCulture
মুক্তকণ্ঠে প্রাণে-মনে এসো বলি, লিখেছেন অমিত সিকিদার
–অমিত সিকিদার–
২৪ এপ্রিলঃ সব মানুষই বলতে চায়। সবার মনের গভীর গোপনে থাকে সঞ্চিত অজস্র কথা। কিন্তু কীভাবে বলা যায়, বা বলার মাধ্যম নাগালের মধ্যে না থাকায় বা আয়ত্তে না থাকায় অথবা মাধ্যম অধরা থেকে যাওয়ায়, সে সব কথা বলা হয় না বেশিরভাগ মানুষেরই। বলা কি শুধু মুখে বলা? ছবিতে বলাটি কি বলা নয়? গান-কবিতা-নাচে বলাটা কি বলা নয়? বলা কি শুধু কিছু কথার পিঠে কথা? বাঙালির অতি প্রিয় আড্ডা তো নতুন নতুন চিন্তাভাবনা-দর্শন-রাজনীতির এক একটা গবেষণাগার। মগজ চাষের উর্বরভূমি। এই যে মনের অন্তস্থল থেকে উতসারিত বলার প্রবল ইচ্ছা, তাকে যদি একটা সংগঠিত মঞ্চে নিয়ে আসা যায় তা হলে কেমন হয়?
এমনটাই কি ভেবেচিন্তে ‘এসো বলি’র জন্মের কনসেপ্ট? হ্যাঁ, ‘এসো বলি’ একটা সদ্যজাত সংস্থা। এই শিলচরের মাটিতে চলতে শুরু করেছে। ষোল আনা বাঙালিয়ানার ডালি নিয়ে এই সংস্থা পালন করল নববর্ষ। ২ বৈশাখ ১৪২৬ বঙ্গাব্দে গোলদীঘি মলের বাতায়ন-এ। গোটা আয়োজনের কারিগর যুব প্রজন্মের অসাধারণ সাংস্কৃতিক সংগঠক সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত। বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন এই বলা বা ভাব প্রকাশের নানা মাধ্যমের সফল বেশ কজন —– আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, বাংলা সাহিত্যের পুরোধা ও বাগ্মী ড. তপোধীর ভট্টাচার্য, শিক্ষাবিদ কৃষ্ণরঞ্জন পাল, কবি চন্দ্রিমা দত্ত, কণ্ঠশিল্পী অধ্যাপিকা শ্যামলী কর ভাওয়াল, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা দুর্বা দেব, কবি সমরবিজয় চক্রবর্তী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষক স্বর্ণালী চৌধুরী, গায়ক বিক্রমজিত বাউলিয়া, আবৃত্তিকার সব্যসাচী পুরকায়স্থ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বাগ্মী সুপ্রিয় ভট্টাচার্য ও দীপক সেনগুপ্ত প্রমুখ।
মঞ্চসজ্জার নানা অনুষঙ্গে ছিল খাঁটি বাঙালিয়ানা। অতিথি বরণে বাংলার গামছা, পঞ্জিকা, মুখে সন্দেশ। নববর্ষ বরণে হাতে পঞ্জিকা তুলে দেওয়ার বিষয়টিতে নতুনত্ব আছে এবং চমকপ্রদও বটে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ‘বাংলায় ভালবাসি, বাংলাকে ভালবাসি’ গানের সাথে। দেবাশিস চক্রবর্তী সায়নের গ্রন্থনায় সমবেত আবৃত্তিতে অংশ নিলেন একঝাঁক নতুন প্রজন্মের আবৃত্তিকার শিবম, শ্বেতা, দেবস্মিতা, নেহা, অনির্বাণ ও পর্ণশ্রী। শিশুরা অংশ নিলো সমবেত নৃত্যে। উপহার হিসেবে হাতে পেল সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’। অনুষ্ঠানে অন্যতম আকর্ষণীয় ছিল ‘এসো বলি’র পক্ষে স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুল ইসলাম, নেতাজি সুভাষ, বিদ্যাসাগর, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যজিত রায় ও শহিদ কমলা ভট্টাচার্যকে নাচে-গানে-অঙ্কনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি। এখানে নির্বাক চিত্রশিল্পীরা তাঁদের মনের কথা বললেন তুলির আঁচড়ে। হ্যাঁ, এটাও এক ধরনের বলার মাধ্যম।
‘এসো বলি বাংলা বর্ষ সম্মান’ পেল দলছুট। অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে এই শহরের খুব চেনামুখ সংবাদপত্র হকার, প্রায় পঁচাত্তর বছর ছুঁইছুঁই জীবনসংগ্রামী সন্ধ্যা কলিতাকে সম্মাননা জ্ঞাপন করেন ‘এসো বলি’র পক্ষে সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত। বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন পম্পি চক্রবর্তী।
সবশেষে ছিল ‘ভালোবাসার আড্ডা’। একটু রাত বেড়ে যাওয়ায় আড্ডায় শ্রোতাসংখ্যা কমে যায়। তবে একটা নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফেরা গেল।