Barak Updates

বিজয় দিবসে ইউনুসের ভাষণে নেই মুজিবুর রহমানের নাম

ওয়েটুবরাক, ১৭ ডিসেম্বর: ঢাকার পল্টন ময়দান দাপিয়ে সোমবার বিজয় দিবসে জনসভা করল জামায়াতে ইসলামী। ভারতের বিরুদ্ধে দফায় দফায় জিগির তুলল। তার পরে মোটরবাইক মিছিল সামনে রেখে রাজপথ কাঁপিয়ে শোভাযাত্রা করে জামায়াত ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলি। হাতে হাতে ছিল ধর্মীয় পতাকা।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের ‘লাখ লাখ শহিদ’কে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করেননি তিনি। এমনকি, যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে যে বাংলাদেশের জন্ম, তার উল্লেখও করেননি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ইউনূসের ‘বিজয় দিবস’-এর বক্তৃতা জুড়ে ছিল চলতি বছরের জুলাইয়ের হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের জয়গান। সঙ্গে আওয়ামী লীগকে আক্রমণ। তবে এই বক্তৃতায় সাড়ে চার মাসে এই প্রথম নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ক্ষণের একটা ধারণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ইউনূস জানান, কেউ কেউ  চাইছেন নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারটুকু করে নির্বাচনের বন্দোবস্ত করা হোক। আবার অনেকে চান, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার করে, তার পরে নির্বাচন করা হোক। প্রথম ক্ষেত্রে, নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে পারে এবং ভোটার তালিকা যদি সম্পূর্ণ রূপে সংশোধন করে সব নাগরিকের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা যায়, তবে ২০২৫-এর শেষ অথবা ২০২৬-এর প্রথম দিকে ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে’। আর ‘এর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সার্বিক সংস্কার যোগ’ করলে আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় ‘লাগতে পারে’। ইউনূস বলেছেন, ‘২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন করা যায়।’

‘বিজয় দিবস’ উপলক্ষে এ দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে নতুন সংঘাত শুরু হল। মোদি ফেসবুকে লেখেন, ‘আজ, বিজয় দিবসে আমরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে সাহসী সৈন্যদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই। তাঁদের নিঃস্বার্থ উৎসর্গ এবং অটল সংকল্প আমাদের দেশকে রক্ষা করেছে এবং গৌরব এনে দিয়েছে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা মোদির বার্তার প্রতিবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাও মোদির ফেসবুক বার্তার বিরোধিতায় সরব হন।

এ দিন ‘বিজয় দিবস’ উপলক্ষে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের নিজের বাসভবনে নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবশ্য রাষ্ট্রপতির এই আমন্ত্রণ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাদের কোনও নেতা এই অনুষ্ঠানে না গেলেও বাকিরা রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।

এ দিকে, কড়া নজরদারি, মারধরের আতঙ্ক জয় করে ‘বিজয় দিবস’-এ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে  দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সবুজ পাতায় মোড়া রক্তগোলাপের স্তবক দিয়ে এলেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

দিনের বিভিন্ন সময়ে জনস্রোতে ভেসে বারে বারে দলের বিভিন্ন শাখা ও সংগঠনের কর্মীরা পৌঁছে গিয়েছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধের চত্বরে। শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছেন। চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা বা খুলনা— সর্বত্র শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সবার আগে পৌঁছে গিয়ে দলের নাম লেখা ফুলের স্তবক রেখে ‘বিজয় দিবস’-এর শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন আওয়ামী কর্মীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker