Barak UpdatesBreaking News
বাঙালির সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, উদ্বেগ বঙ্গসাহিত্যের আর্যপট্টির সভায়
২৭ জানুয়ারি: অসম চুক্তির ৬ নং ধারা বাস্তবায়নের নামে অসমের বাঙালিদের সমস্ত ধরনের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে৷ এই অভিযোগ এনে বিষয়টি বিস্তৃত ব্যাখ্যা করলেন বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত ও শিলচর শহর আঞ্চলিক সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর৷ সঞ্জীববাবু বলেন, ওই ধারায় এমনভাবেই শব্দ চয়ন করা হয়েছে যে, বাঙালির যাতে কোনও ধরনের দাবি জানানোর সুযোগ না থাকে৷ যাদের অধিকার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে বাঙালিরা পড়েন না৷ অথচ বাঙালিরা যে এই অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকে বসবাস করছে, এর অসংখ্য প্রমাণ অসমিয়া ঐতিহাসিকদের লেখায় রয়েছে৷ অসম সরকার বা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রকাশিত বহু গ্রন্থে এর উল্লেখ রয়েছে৷ সঞ্জীববাবু ওইসব বইপত্রের কয়েকটির নামও উল্লেখ করেন৷
গৌতমবাবুর কথায়, ‘শুরু থেকেই আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থন করে এসেছি৷ দিল্লিতে গিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির সামনে হোক বা শিলচর সার্কিট হাউসের আলোচনা, সব জায়গাতেই আমরা এক অবস্থানে থেকেছি৷ কিন্তু বিনিময়ে কী মিলল? বাঙালিদের অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷’ অসম চুক্তির ৬ নং ধারা বাস্তবায়নের নামে বাঙালিদের সরকারি চাকরি পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ অসমিয়াদের জন্য একশো শতাংশ সংরক্ষণ চেয়ে বিপ্লবকুমার শর্মা নেতৃত্বাধীন কমিটি চাইছে, বাঙালিদের জনপ্রতিনিধিত্বের অধিকার কেড়ে নিতে৷ এর চেয়ে ভয়ের কথা, ওই কমিটির প্রস্তাব মেনে নিলে
জমি-বাড়ি কেনাকাটার অধিকার থাকবে না অসমের বাঙালিদের৷ এখন যে বাড়িতে রয়েছেন, শুধু ভোগ করতে পারবেন, বিক্রি করতে পারবেন না৷ নতুন জায়গাও কিনতে পারবেন না বাঙালিরা৷
গৌতমবাবু বাঙালি বিদ্বেষের উদাহরণ টেনে বলেন, কিছুদিন আগে অসম সাহিত্য সভাকে ১০ কোটি টাকা, বড়ো সাহিত্য সভাকে ৫ কোটি টাকা দিয়েছে৷ একইসঙ্গে আরও ২৩টি সংগঠনের আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু কানাকড়ি জোটেনি বঙ্গসাহিত্য বা অন্য কোনও বাঙালি সংগঠনের৷ অথচ যারা অর্থ পেয়েছে, সবাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও আইনের বিরোধিতা করেছে৷ আর বঙ্গসাহিত্য শুরু থেকে এই ইস্যুতে সরকারের পাশে রয়েছে৷
বঙ্গসাহিত্য কর্মকর্তারা আর্যপট্টির সভায় উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, বাঙালিদের অধিকারবঞ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ফারাক নেই৷ অসমিয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে কংগ্রেস নেতা, বিধানসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রণব গগৈ বাঙালিদের সম্পর্কে যে অবস্থান নিয়েছিলেন, আজকের বিজেপি সরকার ওই একই অবস্থানে রয়েছে৷ এমনকী, বামদলগুলিও ১৯৭১-১৯৭১ বলে এর পরে আসা অসহায় বাঙালি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিরোধিতা করে চলেছে৷
বঙ্গসাহিত্যের আক্ষেপ, অসমিয়া জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে সবাই জোট বেঁধে যায়৷ সেখানে কোনও রঙভেদ নেই৷ কিন্তু সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে দেখেও বাঙালিরা নানাভাবে বিভাজিত৷ এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজার জন্য সভার সভাপতি তথা সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য উপস্থিত জনতাকে আহ্বান জানান৷ সভায় আয়োজকদের পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সীমান্তকুমার ভট্টাচার্য, পরিতোষচন্দ্র দত্ত, সুশান্ত সেন, তমোজিত সাহা, অমিত সিকিদার, অমিতাভ পাল, পলাশ দাস প্রমুখ৷