Barak UpdatesAnalytics
পৃথক বরাক চেয়ে ভোটের লড়াইয়ে নিঃসঙ্গ শুভদীপ
১৭ এপ্রিলঃ ভোরে পত্রিকা কেনার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা। একাই দাঁড়িয়ে। সেই পোশাক — দক্ষিণী কায়দায় ধুতি, ওপরে ধবধবে সাদা গেঞ্জি। হকাররা পত্রিকার ভেতরে তাঁর লিফলেট ঢোকাচ্ছেন। এরই তদারকি করছিলেন শুভদীপ দত্ত। লিফলেট কি! এ তো পত্রিকার পুরো দুই পাতা। প্রথম পাতায় নিজের আপাদমস্তক ছবি, সঙ্গে দুটো লেখা। একটির শিরোনাম, ভোটভিক্ষা। অন্যটিতে বক্স করে লিখেছেন, ভোট কেন দেবেন। পরের আধা পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন, বাকিটা পুরনো সংবাদের কোলাজ। বিস্ময়ের জায়গাটা বুঝতে পেরে বললেন, দুই পাতা বিজ্ঞাপন ছাপাতে একেক পত্রিকায় কত খরচ, বলুন তো! এত টাকা কোথায় পাবো! তাই বুদ্ধি করে ছাপাখানায় গিয়ে একেবারে পত্রিকার ঢঙে দুই পাতা ছাপিয়ে নিয়েছেন। পরে হকারদের জলখাবারের টাকা দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকার ভেতরে তা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
নিজেই বললেন, প্রায় একা লড়তে হচ্ছে। কী আর করব বলুন। প্রচার বলতে তাঁর ওইটুকুই। আর করেছেন একটা দেওয়াল লিখন। কোনও বাড়ি বা রাস্তার মোড়ের দেওয়াল নয়। নিজের গাড়ির চতুর্দিকে পেইন্ট করে নিয়েছেন। সবদিকে লেখা, পৃথক বরাক ডিমান্ড কমিটির প্রার্থী শুভদীপ দত্তকে নৌকো চিহ্নে ভোট দিন। ওই গাড়ির ভেতরে রয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। যেখানে যান, উপযুক্ত জায়গা পেলে নেমে বক্তৃতা শুরু করেন।
পৃথক বরাকের দাবি দেশভাগের পর বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হয়েছে। ভাষাসংগ্রামী পরিতোষ পালচৌধুরী আট-নয়ের দশকে ইউনিয়ন টেরিটরি ডিমান্ড কমিটি (ইউটিইউসি) গড়ে সাড়া ফেলেছিলেন। সভা-সমিতিও করেছিলেন প্রচুর। শুভদীপ ওরফে মলয়বাবুর কথায়, আমি তাঁরই অনুসারী। তাঁর অফিসে গিয়ে দেখা গেল, সামনেই ঠাকুরের ছবির সঙ্গে রয়েছেন ফ্রেমবন্দি পরিতোষবাবুও।
এনআরসি, নাগরিকত্ব বিল ইত্যাদি ইস্যুতে অসমের বাঙালির দুর্ভোগের সময় অনেকেই বলেন, বরাক পৃথক হলেই বাঁচি। বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের বিভিন্ন স্তরের অধিবেশনে সদস্যরা এই ইস্যু উত্থাপন করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত পৃথক হওয়ার দাবিপ্রস্তাব গৃহীত হয়নি। একইভাবে বিজেপির রাজদীপ রায় বা কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব পৃথক বরাক শব্দবন্ধকে একবারের জন্য মুখে আনেন না। আর সাধারণ জনতার কথা যে বিক্ষিপ্তভাবে কোনও বিশেষ মুহূর্তের আক্ষেপ, তা ভোরে শুভদীপ দত্তকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বোঝা গিয়েছে।
তবে শুভদীপবাবু নিরাশ নন। হিসেব টেনে দেখান, পাঁচ বছর আগেই তিনি ৮ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়েছিলেন। তখন সেইভাবে কাজেরও সুযোগ পাননি। বিধানসভা ভোটেও ৬৭৬ জন তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। পাঁচ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন, দাবি করে শুভদীপবাবু আশাবাদী, পৃথক বরাকের দাবিতে মানুষের সমর্থন এ বার অনেকটাই বাড়বে। তাঁর আশার জায়গাটাও অবশ্য সীমিত। পত্রিকার চেহারার লিফলেটটিতে নিজেই বলেছেন, জিতলে কী করব, জানি না। কারণ সে সম্ভাবনা খুবই কম। তাই সে নিয়ে মাথাব্যথাও নেই। তাঁর একটাই আর্জি, একটু যদি আপনাদের ভালবাসা ও সমর্থন পাই, তবে প্রাণ দিয়ে বরাকবাসীর কল্যাণের চেষ্টা চালিয়ে যাব।
তাঁর কথায়, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক দিক থেকে যেমন বরাক উপত্যকাকে পৃথক করা প্রয়োজন। তেমনি বাঙালি ও অসমিয়া উভয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থে তা চাই। যতদিন এই দাবি না মেটে, ততদিন প্যান্ট-শার্ট পরবেন না বলে প্রতিজ্ঞা তাঁর। কিন্তু বেঁচে থাকতে কি আর প্যান্ট-শার্ট পরা হবে আপনার। সোজাসুজি উত্তর না দিয়ে গাড়ির চালকের আসনে বসতে বসতে বললেন, যে ক-দিন বেঁচে আছি, মানুষের মঙ্গলে নিজেকে উতসর্গ করতে চাই, এই আমার মনোবাসনা।