NE UpdatesBarak UpdatesCulture
নৃত্য-গীতে গুয়াহাটিতে বাংলা সাহিত্য সভার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি পালন
ওয়ে টু বরাক, ২৩ জুলাই ঃ বাংলা সাহিত্য সভা অসম-এর তৃতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস তথা দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান গত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা অসমে সভার বিভিন্ন শাখায় দিবসটি পালিত হয়। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজ্যস্তরের মূল অনুষ্ঠান পালিত হয় গুয়াহাটিতে। এ দিন বর্ষাপাড়ার ঐতিহ্যমণ্ডিত সাউথ পয়েন্ট স্কুল ছিল আক্ষরিক অর্থেই আনন্দের হাট। সারা রাজ্য থেকে বিভিন্ন শাখার শতাধিক প্রতিনিধি এই সমারোহে যোগ দিয়েছিলেন।
এ দিন প্রথম পর্ব শুরু হয় সভার গুয়াহাটি শাখার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মৌসুমী শিকদারের মঙ্গলাচরণের মধ্য দিয়ে। এরপর শাশ্বতী চক্রবর্তী সংগীত পরিবেশন করেন। সূচনালগ্নে সুকণ্ঠী শিল্পী মিতা সেনের গলায় লতাজির একটি গান সমস্ত পরিবেশকে আনন্দমুখর করে তোলে। এরপর মৌসুমী শিকদারের পরিচালনায় সভার থিম সং তথা উদ্বোধনী সংগীত ‘ও আমার দেশের মাটি’ পরিবেশন করেন জয়া নাথ, সংঘমিত্রা দেব, মামণি বিশ্বাস, নবনীতা দত্ত এবং মোনালিসা ভট্টাচার্য।
এ দিন একটি অভিনব কার্যসূচির মধ্য দিয়ে সভার জন্মদিবসটি উদযাপন করা হয়। পরম্পরাগত পায়েস বা মিষ্টান্নের বাটি প্রত্যেক অতিথির হাতে তুলে দেয়া হয়। বাংলা সাহিত্য সভার সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস অতিথিবর্গের মুখে পায়েস তুলে দিয়ে সভার জন্মলগ্ন উদযাপন করেন। এই বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, বিদেশের উচ্ছিষ্ট আর কত কাল বহন করব আমরা? আমাদের ঘরে ঘরে মায়েরা জন্মদিনে পায়েস বানাতেন, পারিবারিক মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা হতো। এখন সন্তানের জন্মদিন মানে কয়েকটি মুর্গির মৃত্যুদিন। তিনি আরও বলেন, বাংলা সাহিত্য সভা তাই সমস্ত জন্মদিনে পায়েস বা মিষ্টান্ন কালচার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ দিন পারিবারিক-সামাজিক জন্মদিনগুলোতে একটি করে গাছের চারা লাগানোর আহ্বানও জানানো হয়। তা ছাড়া প্রত্যেক অতিথির হাতে স্বামী বিবেকানন্দের বই উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় অসাধারণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন এই অঞ্চলের বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী তথা সভার অন্যতম কর্ণধার অজিতকুমার সেন, নিম্ন অসমের জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী তথা সভার বঙাইগাঁও শাখার সহকারী সাধারণ সম্পাদক পলাশ দে, সভার ওয়েব ডিজাইনার কবি ও বাচিক শিল্পী মধুমিতা দত্ত এবং কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের গবেষক সুস্মিতা সাহা। মনোমোহিনী নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী শ্রেয়া ঘোষ। কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অসমিয়া ছাত্রী সুকণ্ঠী জয়ত্রী বরঠাকুরের নজরুলগীতি শুনে গোটা প্রেক্ষাগৃহ সাধু সাধু রবে ফেটে পড়ে। এ দিন বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের বিদ্যার্থীরা। তার মধ্যে ছিল মণিপুরি ও রবীন্দ্রনৃত্য। মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করেন দেবাংশী সিংহ ও রাজেশ্রেয়া বড়ো। রবীন্দ্রনৃত্যে ছিলেন সাউথ পয়েন্টের ছাত্রী প্রীতিকা নাথ ও কুসুমিতা নাথ। অনুষ্ঠানের মধ্যপর্বে মাউথ অর্গানে রবীন্দ্রসংগীত বাজিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন সভার অন্যতম রাজ্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক তথা উত্তরপূর্বের বিশিষ্ট তবলিয়া দেবাশিস ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে লোকসংগীত পরিবেশন করেন সৌরজিৎ ভট্টাচার্য এবং মৌসুমী দে।
অনুষ্ঠানের মধ্য পর্বে জলখাবার হিসেবে নিজেদের বানানো ঝাল মুড়ির ঠোঙা সমস্ত অতিথি, প্রতিনিধি ও দর্শকশ্রোতাদের হাতে তুলে দিয়ে চমকে দেন উদ্যোক্তারা। এমন অভিনব বাঙালিয়ানা গুয়াহাটিতে এই প্রথম। অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লোকসংগীত ও ধামাইল গানে আসর মাত করে দেন তিনসুকিয়া থেকে আসা উজান অসমের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী তথা সভার অন্যতম সাংস্কৃতিক সম্পাদক শীলা দেব দে সরকার।
এর আগে করিমগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট চিন্তাশীল সাহসী লেখক শুভ্রাংশুপ্রকাশ দে শ্রীহট্টের একটি লোকসংগীত গেয়ে সকলকে মোহিত করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ে সংগীতে অংশগ্রহণ করেন চন্দন ভাদুড়ি, শর্মিলা পাল প্রমুখ। বহুদিন পর দরাজ কণ্ঠে লোকসংগীত নিয়ে মঞ্চে এলেন সভার তথ্য ও সংযোগ সম্পাদক অনন্যা মজুমদার। নানা পর্যায়ে নৃত্য পরিবেশন করেন সোহিনি রায়, রজিতা বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এই অঞ্চলের পরিচিত লোকসংগীতের দল “মাটির গান”-এর দুই শিল্পী মধু গোস্বামী ও প্রমিথিউস চক্রবর্তী শচিন কর্তার গান আর “গৌরী এল দেখে যা লো” গেয়ে আসরকে চরমে নিয়ে যান। দলে দলে শ্রোতা-দর্শকেরা গানের তালে তালে নেচে ওঠেন। আর কথায় বলে মধুরেণ সমাপয়েৎ। তাই সমবেত শ্রোতা-দর্শকেরা ঝাঁপ দেন গুয়াহাটির প্রসিদ্ধ ধামাইল-নাচ-গোষ্ঠী “শ্যামের বাঁশি”র ধামাইল নৃত্যে। অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্রী হিসেবে ছিলেন দেবাশিস ভট্টাচার্য (তবলা), তুষারকান্তি (লাকি) চক্রবর্তী (তবলা ও পারকাসন) সঞ্জয় রায়, মুন গগৈ (গিটার) এবং ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী (হারমোনিয়াম ও জয়ঢাক)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন এই অঞ্চলের বিশিষ্ট অভিনেতা অমল চক্রবর্তী এবং বাচিক শিল্পী মৌসুমী দে দাস। সব শেষে সভার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক গুয়াহাটির স্বনামধন্য ক্যাটারার সোনা দত্তের ব্যবস্থাপনায় ছিল তেলে-ঝালে-ঝোলে-অম্বলে বিশাল নৈশ ভোজ।