AnalyticsBreaking News

নাগরিকত্ব/৩০ঃ ভারতীয় মূলের বিদেশিদের নিয়েও সংশোধনী ছিল বিলে

(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছেআজ এর ৩০-তম কিস্তি।)

১৫ মার্চঃ ৩. মূল আইনের ৭(ডি) নং ধারার সংশোধন

৩.১ মূল আইনের ৭(ডি) ধারায় সরকার নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদ সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছেঃ ভারতীয় মূলের বিদেশি যারা এই দেশে অনির্দিষ্টকাল ধরে বসবাসের জন্য ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই আইন বা ভারতে কার্যকর কোনও আইন ভঙ্গ করলে…

৩.২ বর্তমানে ভারতীয় মূলের বিদেশি যারা এই দেশে বসবাস করছেন, তারা কোনও ভারতীয় আইন ভঙ্গ করলে এই আইনের ৭(ডি) ধারায় ওসিআই রেজিস্ট্রেশন বাতিলের কোনও বিধান নেই। সরকার তাই ৭(ডি) ধারায় সংশোধনী এনেছে, এই আইন বা অন্য কোনও ভারতীয় আইন ওসিআই-রা ভঙ্গ করলে তাদের রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র সরকার বাতিল করে দেবে।

৩.৩ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, মূল আইনের ৭(ডি) ধারায় আইন লঙ্ঘন করলে ওসিআই কার্ডহোল্ডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের যে উল্লেখ নেই, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সেটাই করা হচ্ছে।

৩.৪ কত ওসিআই কার্ডহোল্ডার রয়েছে এই সময়ে এবং এই কার্ড প্রাপ্তির কী কী শর্ত, তা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল যৌথ সংসদীয় কমিটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬ লক্ষ ওসিআই কার্ড ইস্যু হয়েছে। যারাই আইনের ৭ নং ধারার শর্তগুলি পূরণ করতে পারে, তাদেরই এই কার্ড দেওয়া হয়।

৩.৫ জালিয়াতির সাহায্যে কার্ড পাওয়ার কোনও ঘটনা কি গোয়েন্দা বা নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ধরা পড়েছে, এমন প্রশ্নে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর জবাব, জালিয়াতির সাহায্যে ওসিআই কার্ড বা পিআইও কার্ড পাওয়ার কিছু ঘটনা ধরা পড়েছে। সেগুলি বাতিল করা হয়েছে এবং ওই ব্যক্তিদেরও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

৩.৬ কোনও ওসিআই কার্ড জালিয়াতির সাহায্যে পেল কিনা, তা জানার কী কৌশল রয়েছে, তাও জানতে চেয়েছিল যৌথ সংসদীয় কমিটি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানায়, বর্তমান বিধিতে ওসিআই কার্ডহোল্ডার হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন এলেই ভারতীয় দূতাবাস বা ডাক ব্যবস্থা বা ফরেনার্স রিজিয়নাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার তা খুব ভালো করে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। পরে অনলাইন সিস্টেমে আবেদনটি গ্রহণ করা হলে সমস্ত মূল নথিপত্র যাচাই করা হয়।

৩.৭ ওসিআই কার্ডের অপব্যবহার প্রসঙ্গে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো জানায়, প্রকৃত অর্থে বলতে গেলে অপব্যবহারের সুযোগ অতি সামান্যই। কিন্তু বিদেশে আমাদের দূতাবাসের অফিসাররা বললেন, কিছু মানুষের ওসিআই কার্ড পেতে যে সমস্যা হচ্ছিল, তা কাটানোর ব্যবস্থা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পাক মূলের কোনও ব্যক্তি এই ভেবে বহু চেষ্টা করতে পারেন যে, কার্ড নিয়ে ভারতে থাকলে বিরাট সুবিধা মিলবে। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হল, যত চেষ্টাই করুক, শেষপর্যন্ত কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কম।

৩.৮ এই ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলে, অপব্যবহারের সংখ্যাটি স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৭(বি) ধারায় ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল ইস্যু করা  এই মন্ত্রকের ৫৪২(ই) নং বিজ্ঞপ্তি লঙ্ঘন করে কিছু ওসিআই কার্ডহোল্ডার কৃষিজমি বা বাগিচা সম্পত্তির মালিক হওয়ার উদাহরণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে রয়েছে।

৩.৯ অন্য আরেক সুনির্দিষ্ট প্রশ্নে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর জানান, ৭(ডি)-র সংশোধনী সকল ওসিআই কার্ডহোল্ডারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

৩.১০ সংশ্লিষ্ট পক্ষ এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা প্রস্তাবিত সংশোধনীতে যে ‘অন্য যে কোনও আইন’ বলে লেখা হয়েছে, সেগুলি কী কী বলে প্রশ্ন তুললে কমিটিও তা জানতে চেয়েছিল। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো জানায়, ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধি, অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন প্রভৃতির কথাই বলা হয়েছে।

৩.১১ বিভিন্ন পক্ষের উতকণ্ঠার কথা শুনে কমিটি এ কথাও জানতে চেয়েছিল, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মতো ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সংশোধনী কি ভোগান্তি বাড়াবে না? পরিষদীয় বিভাগকে উদ্ধৃত করে আইন বিষয়ক বিভাগ জানায়, সুনির্দিষ্ট কিছু অপরাধেই প্রস্তাবিত ৭(ডি) ধারার সংশোধনী মেনে ওসিআই কার্ড বাতিল করা হবে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মতো ছোটখাটো অপরাধকে কি প্রস্তাবিত সংশোধনীর বাইরে রাখা যায় না, এমন প্রস্তাবেও বিভাগ ওই একই কথা শোনায়।

চোখ রাখুন———নাগরিকত্ব/৩১ঃ ১২ নয়, আবেদনের পর ৬ বছরের অপেক্ষা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker