AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/২৫ঃ আদালতের রায় ও আইনের ব্যাখ্যা মেনেই বিল, বলল মন্ত্রকCitizenship/25: Bill will be passed keeping in mind the verdict of the court & as per law, tells ministry
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ২৫-তম কিস্তি।)
৯ মার্চঃ ২.৩২ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রশংসা করে যৌথ সংসদীয় কমিটি আইন ও বিচার মন্ত্রকের কাছে জানতে চায়, প্রস্তাবিত সংশোধনী সংবিধানের ১৪ ও ২৫ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে কিনা। পরিষদীয় বিভাগ জবাবে জানায়, প্রথমে প্রস্তাবিত বিল ১৪ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে না। কারণ এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার বনাম আনোয়ার আলি সরকার মামলার (এআইআর ১৯৫২ এসসি ৭৫) সাত সদস্যের বেঞ্চের রায়ের প্রেক্ষিতে তৈরি। এখানে বিভাজনের স্পষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ মোটেও মর্জিমাফিক বিভাজন তৈরি নয়।
অনুচ্ছেদ ২৫ প্রসঙ্গে বললে, প্রস্তাবিত বিল কাউকে নিজ ধর্মমতে উপাসনা, নিত্যকর্ম বা প্রচারে বাধা সৃষ্টি করবে না।
২.৩৩ আইন বিষয়ক বিভাগের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেন। ১৪ ও ২৫ নং অনুচ্ছেদের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত বিলটিকে ভাল করে বিচার করা হয়েছে। সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে আইনি বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। এই অনুচ্ছেদে যেমন সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তেমনি সমান সুরক্ষার কথাও বলা হয়েছে। এখানে কারও প্রতি কোনও বিশেষ ব্যবস্থার প্রস্তাব রাখা হয়নি। আইনের নজরে সবাই সমান এই তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সমতার ধারণার ইতিবাচক দিকটি হল, তাতে কোনও বিভাজন ছাড়া সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন, তা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, একই প্রেক্ষাপটে, একই অবস্থায় থাকা সবাই একই ধরনের সুবিধা ভোগ করবেন। তাই একই শ্রেণিভুক্তরা যেন সমান সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য আইনে বিভাজনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
রামকৃষ্ণ ডালমিয়া বনাম বিচারপতি এস আর তেন্ডুলকর মামলায় (১৯৫৯ এসসিআর ২৭৯) অনুচ্ছেদ ১৪ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটা প্রতিষ্ঠিত যে, ১৪ নং অনুচ্ছেদে শ্রেণিভেদে আইন তৈরিতে আপত্তি করা হয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োজনে শ্রেণিভেদে আপত্তি করেনি। শ্রেণি বিভাজন করতে গেলে দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, প্রথমত, শ্রেণিবিভাজনটা করতে হবে বিভিন্ন অংশের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে। দ্বিতীয়ত, যে প্রেক্ষিতে বিভাজন, এর একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকা চাই। বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভাজন হতে পারে, যেমন ভৌগোলিক, বিষয়বস্তু বা পেশার ভিত্তিতে বিভাজন হয়েই যায়। তবে বিভাজনের ভিত্তি এবং আইনটির উদ্দেশ্যের কথা খেয়াল রাখতে হবে। এও প্রতিষ্ঠিত যে, ১৪ নং অনুচ্ছেদে বৈষম্যের নিন্দা করা হয়েছে। তা শুধু প্রচলিত আইনেই নয়, আইনি প্র্রক্রিয়াতেও একই কথা প্রযোজ্য।
এই মামলায় অন্যান্য বিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ক. কোনও আইন মাত্র এক ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য হলেও তা সংবিধানসম্মত, যদি কোনও বিশেষ পরিপ্রেক্ষিত বা কারণ তার তার ক্ষেত্রে কার্যকর হয় এবং ওই প্রেক্ষিত বা কারণ অন্য কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সে ক্ষেত্রে একজনকেও একটি শ্রেণি হিসেবে ধরা হবে। খ. সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় আইন তৈরিরই কথা বলা হয়েছে। ফলে কোনও আইন কারও কাছে সাংবিধানিক রীতির বিরোধী বলে মনে হলে, সেই অভিযোগ প্রমাণ করা তাঁরই দায়িত্ব। গ. পরিষদীয় ব্যবস্থায় এটা ধরেই নেওয়া হয় যে, জনপ্রতিনিধিরা আইন প্রণেতা হিসেবে যথেষ্ট বোঝেন। মুশকিল হল, তারা নিজের মানুষের কথাই বেশি করে ভাবেন। কিন্তু আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হয় অভিজ্ঞতার নিরিখে, উপযুক্ত যুক্তির সাহায্যে। ঘ. প্রয়োজন যেখানে স্পষ্ট, সেখানে আইন প্রণেতারা এর প্রতিকূল প্রভাব পরিমাপ করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধের পরামর্শ দিতে পারেন।