AnalyticsBreaking News

নাগরিকত্ব/১৮ঃ ডান-বাম সবাই বলছিলেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর কথা
Citizenship/18: Right-Left all said about Bangladeshi immigrants

(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছেআজ এর অষ্টাদশ কিস্তি।)

২ মার্চঃ ১১. প্রস্তাবিত সংশোধনী বিল নিশ্চিতভাবে অসমের জনবিন্যাসগত চরিত্র ধ্বংস করবে। ১৯৯৭ সালে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত সংসদে তার সরকারি বিবৃতি দিয়েছিলেন, অসমে ৪০ লক্ষ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতিমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সোয়াল রাজ্যসভায় বলেছেন, অসমে ৫০ লক্ষ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, দেশে ২ কোটি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রয়েছে, অধিকাংশ অসমে বাস করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যের পর কীভাবে সরকার অসমের সকল বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে চায়! ১২. ১৯৯৮ সালে তত্কালীন রাজ্যপাল লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসকে সিনহা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জনগণনা অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে ৭৫ লক্ষ হিন্দু উধাও হয়ে গেছে। বাংলাদেশও বলেছে, অধিকাংশ হিন্দু ভারতে এসে গেছে। ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ হিন্দু অসমে ঢুকে পড়েছে। ১৩. নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি ধর্মের ভিত্তিতে প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিশ্বের কোথাও নেই। এটি ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনারও বিরোধী। অনুচ্ছেদ ১৪, ১৫, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮ সাম্যের অধিকার বলা হয়েছে। সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়াই উচিত। এসআর বুম্মাই বনাম ভারত সরকার এবং কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরল সরকার মামলার এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। ১৪. বিলটি পাস হলে অসমিয়ারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার হারাবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন জঙ্গি কার্যকলাপের রূপ নিতে পারে। এখন অসমিয়া, বাঙালি শান্তিতে সহাবস্থান করছে। তখন পরিস্থিতি পুরো বদলে যাবে। বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হলে ভূমিপুত্ররা ভূমিহীন হয়ে পড়বে। ১৫. সরকার বিদেশিদের আমন্ত্রণ করে আনছে বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই। এই বিল সমাজে বিভাজন ঘটাবে। এটি সমস্যা সৃষ্টি ছাড়া সমাধান করতে পারবে না। ১৬. অসমের মানুষের এই বিলে কোনো আপত্তি থাকবে না, যদি বিল থেকে বাংলাদেশ শব্দ সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৭. ভাষিক, ধর্মীয়, আদি বাসিন্দাদের গোষ্ঠী হিসাবে অসম ভারতের অন্য অংশ থেকে আলাদা। অসমের প্রকৃত অবস্থার পরিবর্তন কোনও কিছুতে সম্ভব হবে না। এই বিল অসমের ভাষিক ও অন্যান্য আদি বাসিন্দাদের স্বার্থের পরিপন্থী। ১৮. অনুপ্রবেশ সমস্যার সমাধানে ১৯৫০ সালে ইমিগ্রেশন এক্সপালসন অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে কয়েক লক্ষ বিদেশিকে চিহ্নিত ও বিতাড়িত করা হয়েছে। বিমলা প্রসাদ চলিহা যখন অসমের মুখ্যমন্ত্রী, তখনও অসম থেকে বহু বিদেশিকে তাড়ানো হয়। তারপর আর কোনও বিদেশিকে বিতাড়ন করা হয়নি। বরং অসমে বিদেশি অনুপ্রবেশ ঘটেই চলেছে। ১৯. যে সব বাংলাদেশি অবৈধভাবে অসমে অনুপ্রবেশ করেছে, তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংহতি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাদের উপস্থিতি এই অঞ্চলের জনবিন্যাস বদলে দিয়েছে। তাতে কয়েকটি জেলায় অসমের স্থানীয় মানুষ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সরকারের উচিত, বিদেশি আইনের চেয়ে কঠোরতর আইন অসমের জন্য প্রণয়ন করা চাই এবং বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের চিহ্নিত করার কাজ দেশের বাকি অংশেও কার্যকর হোক। এর বদলে সরকার এমন এক আইন করতে চলেছে, যার মাধ্যমে একজন বিদেশিকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না। ২০. অসমে এত বিক্ষোভের প্রধান কারণ রাজ্যটি বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁসা। যদি হিন্দুদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়, তবে প্রথম ভুগবে অসম। ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে কতজন এসেছে, সে তথ্যও সরকারের কাছে নেই। বিলে শুধু কিছু ধর্মের উল্লেখ রয়েছে, তাতে আবার মুসলিম বাদ। ফলে আইনত এই বিল টিকতে পারে না।

English text here

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker