AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/১৪ঃ নাগরিকত্ব পেলেও উদ্বাস্তুরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না যোধপুরে
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর চতুর্দশ কিস্তি।)
২৫ ফেব্রুয়ারিঃ ১৬. ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে বসবাস করলেও কোনও সুযোগ-সুবিধা মিলছে না। নাগরিকত্ব মিললেও মিলছে না পানীয় জল, বিদ্যুত, গ্যাস সংযোগ, হাসপাতালের নানা সুবিধে, বিপিএল কার্ড, কাস্ট সার্টিফিকেট, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি।
১৭. উদ্বাস্তু পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাপারে একটা নীতি নির্ধারণ জরুরি। তাদের উচ্চ শিক্ষার জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
১৮. উদ্বাস্তুরা যেখানে ভাড়া থাকে, ১১ মাসের মধ্যে ঘর ফাঁকা করে দিতে হয়। তাই তারা যেন নিজস্ব বাড়ি তৈরি করতে পারে, তার একটা বিধান হোক।
১৯. ১৯৭২-৭৩ সালে সিন্ধ প্রদেশ থেকে লক্ষাধিক উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করে। তাদের প্রতি ৪-৫ পরিবার একই সম্প্রদায়ের। তাদের একটি ইউনিট ধরায় চার শতাধিক পরিবার সমস্যায় ভুগছে। বিষয়টি রাজস্থান বিধানসভায় উত্থাপিতও হয়েছিল।
২০. পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা পুনর্বাসনের সমস্যায় রয়েছেন। চার পরিবার ১৯৭৪ সালে নাগরিকত্ব পেয়েছিল, জমি পেয়েছে ১৯৮৪ সালে। একেক সম্প্রদায়ের জন্য একটি করে রেশন কার্ড মিলেছে।
২১. ভারতে প্রবেশের সময় তাদের স্বর্ণালঙ্কার জমা রাখতে হয়েছে। নাগরিকত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব স্বর্ণালঙ্কার ফিরিয়ে দেওয়ার বিধি হওয়া উচিত।
২২. পাকিস্তান থেকে এমবিবিএস পাশ করে এলেও তাঁদের ডাক্তারি করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। দীর্ঘ অপেক্ষাশেষে নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তাদের স্ক্রিনিং টেস্ট নেওয়া হয়। ফলে শুধু তারা দাতব্য হাসপাতালে নিজেদের সেবা দিতে পারেন। নইলে চিকিতসা ক্ষেত্র ছাড়া অন্যত্র তাদের কাজ করতে হয়। তাই তাঁদের জন্য স্ক্রিনিং টেস্ট প্রথা তুলে দেওয়া হোক, যাতে তারা চিকিতসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণের সুযোগ পান।
২৩. যোধপুরের মারওয়ারনগরে ৩০০ বাড়ি রয়েছে। তাদের মাত্র ৫০জন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অথচ ২০১৩ সালে ৯০ শতাংশ বাসিন্দা নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন।
২৪. আলকোসারনগরে ৮০০ বাড়ি রয়েছে, কেউ নাগরিকত্ব পাননি।
২৫. ২০০৪-২০০৫ সালে দুটি উদ্বাস্তু শিবির স্থাপিত হলেও কেউ এখনও প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়েও নাগরিকত্ব পাননি।
২৬. নাগরিকত্বের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি-টি খুব বেশি। এটি হয় প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক, নইলে কমিয়ে আনা হোক। কারণ উদ্বাস্তুদের অধিকাংশ খুব কম অর্থ উপার্জন করেন।
২৭. নাগরিকত্বের জন্য ৭ বছরের যোগ্যতামানকে কমিয়ে ৩ বছর করা হোক।
২৮. ভারতে জন্ম নেওয়া উদ্বাস্তু-সন্তানদের ভারতের সাধারণ নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
২৯. ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষমতা জেলাশাসকদের হাতে ছিল। পরে তা কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের কাছে নিয়ে নেয়। নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জটিল প্রক্রিয়া এবং কাজের বহর ভেবে, এই বিষয়টি পৃথক বিভাগের উপর দায়িত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল ক্ষমতা থাকুক জেলাশাসকের হাতে।
৩০. পরবর্তী সময়ে যেন কোনও জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য উদ্বাস্তুদের কখন কী ফর্ম পূরণ করতে হবে, সে ব্যাপারে তাদের সচেতনতা তৈরি করা হোক। এই কাজে যেন আবার ফড়ে-রা টাকা দাবি করতে না পারে।
৩১. কেন্দ্র সরকারের একটা নোডাল এজেন্সি তৈরি করা দরকার। তারা এ সংক্রান্ত সমস্ত পক্ষকে সহায়তা করবে এবং উদ্বাস্তুদের জন্য বরাদ্দ সুযোগসুবিধা তারা পাচ্ছে কিনা তা তদারকি করবে। সেই সঙ্গে বাস্তবায়ন প্র্রক্রিয়ায়ও নজরদারি করবে।
৩২. সহজে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। দীর্ঘ ৭ বছর থাকার জায়গায় ৫ বছর করতে হবে।
৩৩. ২০০৫ সালে নথিপত্র জমা করার ১ মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া গিয়েছিল। এখন ২৬০ পরিবার ২০১৫ সালে কাগজপত্র জমা করেও নাগরিকত্ব মিলছে না।
৩৪. ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এক নির্দেশে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বলেছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের যারা দীর্ঘকালীন ভিসা নিয়ে ভারতে বসবাস করছে, তাদের যেন স্বনিয়োজনের সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে যারা থাকছে, তাদের চলাফেরার ওপর যেন সুরক্ষিত, নিষিদ্ধ ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ছাড়া অন্যত্র কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকে। তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেওয়া যেতে পারে। এই নির্দেশ দ্রুত কার্যকর করার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আইনও ও বিচার বিভাগ, আঞ্চলিক পরিবহন আধিকারিক ও অন্যান্য আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হোক, যাতে উদ্বাস্তুরা তাদের জন্য ঘোষিত সুযোগগুলি গ্রহণ করতে পারে। সে জন্য রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।