AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/১৩ঃ যোধপুরের উদ্বাস্তুরা অন্য জেলায় যেতে পারেন না
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ত্রয়োদশ কিস্তি।)
২৪ ফেব্রুয়ারিঃ ১.২১—– নয় হাজার স্মারকপত্র ছাড়াও যৌথ সংসদীয় কমিটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ-মতামত জানতে পারে। কমিটি সরাসরিও অনেকের সঙ্গে কথা বলে। তাদের কথা রিপোর্টের সপ্তম সংযোজনীতে উল্লেখ করা হল।
১.২২—— বিল পরীক্ষার অঙ্গ হিসেবে কমিটি তিন জায়গায় স্টাডি ভিজিট করে। উদ্বাস্তু জনতা, এনজিও ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ফিল্ড লেভেল তথ্য সংগ্রহ করে। প্রথম স্টাডি ভিজিট হয় ২০১৬ সালের ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর যোধপুরে। পরে ২০১৭ সালের ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল রাজকোট ও আহমেদাবাদে এবং শেষটি ছিল ২০১৮-র ৭ থেকে ১১ মে, গুয়াহাটি, শিলচর ও শিলঙে।
১.২৩——- যোধপুরে যে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কমিটির নজরে আসেঃ
১. যোধপুরে বিভিন্ন কলোনির উদ্বাস্তুরা মূলত এসেছেন পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের রহিমিয়ার খান সিটি ও সিন্ধ প্রদেশের টান্ডু আল্লার টাউন থেকে। তারা সেখানে চাষবাস করতেন। এখানে এসে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন।
২. তাদের ধর্মান্তরণের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছিল। বিশেষ করে, মেয়েদের জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হতো।
৩. পাকিস্তানে অস্পৃশ্যতাও প্রচলিত ছিল। হিন্দুদের নানাভাবে চাপে রাখা হতো। মহিলাদের মুসলমানের পোশাক পরতে হতো, পুরুষদেরও তক্কি লাগাতে বাধ্য করা হতো।
৪. পাকিস্তানের স্কুলগুলিতে হিন্দু ছেলেমেয়েদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছিল। স্কুল-কলেজে নানারকমের মানসিক হয়রানির শিকার হতে হতো তাদের। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করতে বাধ্য করা হতো। শিক্ষার মাধ্যম ছিল উর্দু।
৫. মেঘোয়াল, ভিল, আদিবাসী, রাইকা, রাজপুত, কুমার – কোনও হিন্দু নির্যাতন থেকে রেহাই পেতেন না। তারা সবাইকে বলত কাফের।
৬. ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, অপহরণের ঘটনা লেগেই ছিল। এ ছাড়া, কোনও হিন্দু সরকারি চাকরিতে ছিলেন না।
৭. মন্দির ধ্বংস করা হচ্ছিল। বিশেষ করে ভারতে বাবরি মসদিজ ভাঙার পর তা অনেক বেড়ে যায়। পূজাপাঠ, কীর্তনের কোনও সুযোগ ছিল না।
৮. কোনও শ্মশানঘাট ছিল না। কারও মৃত্যু হলে তার দাহকার্য নিয়ে মানুষ সমস্যায় পড়ে যেত।
৯. ভারতীয় দূতাবাসে যেতে পাকিস্তানি রেঞ্জারদের টাকা দিতে হতো।
১০. অধিকাংশ উদ্বাস্তু তীর্থযাত্রীর ভিসা নিয়ে এসেছিলেন। কারণ পাকিস্তানে ভিজিটরস ভিসা পাওয়া বড় কঠিন।
১১. অধিকাংশ উদ্বাস্তুর ভিসাতে জেলার নাম নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে গ্রেফতার করে জেলে পোরার আশঙ্কায় তারা ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে, এমনকী রাজ্যের অন্য জেলাতেও কৃষিকাজ করতে যেতে পারেন না। বিয়ের অনুষ্ঠান বা আত্মীয়-বন্ধুদের দেখতেও তারা অন্যত্র যান না।
১২. যেহেতু ভিজিটরস ভিসা মেলে না। তাদের তীর্থযাত্রীর ভিসার জন্যই আবেদন করতে হয়। তাতে যোধপুরে কাউকে দেখার উদ্দেশ্যে আসতে চাইলেও ভিসা মেলে হরিদ্বারের। এর দরুন পরিবারগুলিতে বিভাজন বাড়ছে।
১৩. সহজে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সহায়ক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে জন্য দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া উচিত। দীর্ঘকালীন ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির চিঠিও সময়মত ইস্যু হওয়া চাই।
১৪. বিভক্ত পরিবারের যারা দীর্ঘকালীন ভিসা নিয়ে ভারতে বসবাস করছেন, তাদের দেখার জন্য (বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা, ভাই, বোন) দীর্ঘকালীন ভিজিটিং ভিসা ইস্যু হওয়া প্রয়োজন।
১৫. ভারতে ফেরার নো অবজেকশন বা রিটার্ন ভিসা সময়মত দেওয়া চাই।