India & World UpdatesAnalytics
দুটি প্রাসাদকে যুক্ত করেছে মোরবি সেতু, জেনে নিন ইতিহাস
৪ নভেম্বর ঃ গুজরাটের মোরবিতে ভয়াবহ সেতু দুর্ঘটনায় ১৪০ মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি শিশু রয়েছে। এই দুর্ঘটনায় গোটা দেশ বিস্ময়ে হতবাক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও এ ঘটনায় শোক ব্যক্ত করেছেন। এখন পর্যন্ত যা তথ্য প্রমাণ সামনে এসেছে, তাতে বোঝা গেছে, সেতুটির সংস্কার হলেও তা ঠিকভাবে হয়নি। ফীট সার্টিফিকেট না দিয়েই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। এ বারে জেনে নিই এই সেতুটির অতীত ইতিহাস।
গুজারাটের বাণিজ্যিক শহর আহমেদাবাদ থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ছোট্ট শহর মোরবি। সড়কপথে আহমেদাবাদ থেকে যেতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা। মাচ্ছু নদীর পাশে থাকা এই শহরে প্রায় দু’লক্ষ লোকের বাস। ১৮৭৭ সালে যখন মোরবি ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসনের আওতায় ছিল, তখন মোরবির শাসক স্যার ওয়াঘজি ঠাকুর ২৩০ মিটার লম্বা এই সেতুটি নির্মাণ করেন। এই সেতুটির মতো প্রায় একই রকমের দুটি সেতু রাম ঝোলা ও লক্ষ্মণ ঝোলা রয়েছে উত্তরাখণ্ডের হৃষিকেশে। ১৮৭৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সেতুটি উদ্বোধন করেছিলেন তখনকার মুম্বইয়ের গভর্ণর রিচার্ড টেম্পল।
জানা গেছে, এই সেতুটি নির্মাণে মোট সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, যা তখনকার সময়ে প্রচণ্ড ব্যয়বহুল ছিল। এতে যে সব সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে, তা ঐ সময়ের জন্য যথেষ্ট উন্নত প্রযুক্তির ছিল। সামগ্রীগুলোও ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। মোরবির জেলা কালেক্টরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ঠাকুর ১৯২২ সাল পর্যন্ত শাসনভার সামলে ছিলেন। তিনি এই সেতুটি বিশেষভাবে তৈরি করে মোরবির শাসকের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার ছাপ রাখতে চেয়েছিলেন। ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছিল রাজার আবাসস্থল নজরবাগ প্রাসাদ থেকে দরবারগড় প্রাসাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে। বর্তমানে দরবারগড় প্রাসাদটি একটি হেরিটেজ হোটেল হিসেবে রয়েছে, যা পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে। সেতুটি এখন এই হোটেলের সঙ্গে শহরের বাকি অংশের সংযোগ রক্ষা করে চলেছে।
১৯৭৯ সালে দেশের সব থেকে বড় বাঁধ বিপর্যয়ে মাচ্ছু নদী মারাত্মকভাবে প্লাবিত হয়েছিল। সে সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০০১ সালে গুজরাটে ভয়াবহ ভূমিকম্পেও এই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কম্পনের কেন্দ্রস্থল ভূজ থেকে মোরবি মাত্র ১৫০ মিটার দূরে রয়েছে। পরবর্তীতে এই সেতুটি স্থানীয় পুরসভার অধীনে চলে যায়। তখন এতে ২০ জনের বেশি ওঠার অনুমতি ছিল না। এরপরই পুরসভা সেতুটি সংস্কারের জন্য ওরেভা কোম্পানিকে সমঝে দিয়েছিল। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত ২৬ অক্টোবর এটি খুলে দেওয়া হয়। এর ঠিক ৫ দিন পরই ঘটে এই মারাত্মক দুর্ঘটনা।