NE UpdatesBarak UpdatesIndia & World UpdatesBreaking News

ডা. বিজয় আনন্দের ‘মাকুন্দা মথে’র আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

ওয়েটুবরাক, ২৫ এপ্রিল: কেউ কেউ বলেন, নামে কী আসে যায়! ডা. বিজয় আনন্দ ইসমাভেল প্রমাণ করলেন, নামে অনেককিছুই আসে-যায়৷ তাঁর আবিষ্কৃত ‘মাকুন্দা মথ’ বা ‘এনডকলাইটা মাকুন্দা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতেই করিমগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত মাকুন্দা এলাকার মানুষ যারপরনাই খুশি৷ আনন্দিত মাকুন্দা হাসপাতালের প্রত্যেক মেডিক্যাল-ননমেডিক্যাল কর্মীবৃন্দ৷

১৯৯২ সালে বিয়ের ঠিক পরেই মাকুন্দা খ্রিস্টান মিশনারি লেপ্রসি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে কাজে যোগ দেন ডা.বিজয় আনন্দ ও ডা. অ্যান৷ করিমগঞ্জ জেলার একেবারে প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালটি তখন বন্ধের পথে ছিল৷ ৩০ বছরের চুক্তিতে স্বামী-স্ত্রী দুই চিকিৎসক তামিলনাড়ু থেকে করিমগঞ্জ জেলার মাকুন্দায় চলে আসেন৷

২০১৭ সালে বিজয় আনন্দ এক বিরল প্রজাতির মথ মাকুন্দায় দেখতে পান৷ মাকুন্দায় আবিষ্কৃত বলে এর নাম দিয়েছিলেন মাকুন্দা মথ বা এনডকলাইটা মাকুন্দা৷ ‘জুনুভা’ নামের এক আন্তর্জাতিক জার্নাল এই নামেই মথটিকে সকলের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে৷ ব্রিটেনের গ্রিনফোর্ড থেকে প্রকাশিত এই প্রাণীবিদ্যা বিষয়ক জার্নালে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, ৬০ বছর পরে কোনও নতুন প্রজাতির মথ কেউ দেখতে পেয়েছেন৷ এ ভাবেই এরা তাঁর গবেষণাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে৷
জৈব বৈচিত্র্য তাঁর কোনও কালের বিষয় নয়৷ নন তিনি বিজ্ঞানীও৷ কিন্তু করিমগঞ্জ জেলার মাকুন্দায় ডাক্তারি করতে এসে বিজয় আনন্দ ইসমাভেল গত তিন দশকে জৈব বৈচিত্র্যে যেমন বিশারদ হয়ে উঠেছেন, তেমনি বিভিন্ন জার্নাল তাঁর নামের আগে উল্লেখ করে ‘সিটিজেন সায়েন্টিস্ট’বলে৷

মাস চারেক আগে খ্রিস্টান মিশনারি পরিচালিত মাকুন্দা হাসপাতাল ছেড়ে শিশুরোগের শল্য চিকিৎসক বিজয় আনন্দ ভেলোরের খ্রিস্টান মিশনারি কলেজ হাসপাতালে (সিএমসিএইচ) যোগ দিয়েছেন৷ তবে বিজয় আনন্দ জানিয়েছেন, তাঁকে এই গবেষণার কাজে সহায়তা করেছেন দেশ-বিদেশের ছয় বিজ্ঞানী৷ তাঁরা হলেন জন আর গ্রেহান, কার্লোস জিসি মিয়েলকে, দীপেন্দ্রনাথ বসু, উজ্জ্বলা পাওয়ার, জন ই রৌলিনস এবং ক্রুশনামেঘ কুন্তে৷ তাঁদের সাহায্যেই বিজয় প্রমাণ করেছেন, ঠিক এই প্রজাতির মথ এর আগে কেউ দেখতে পাননি৷ এ পর্যন্ত যে কয়টি প্রজাতির মথের বিজ্ঞানসম্মত স্বীকৃতি মিলেছে, সেগুলির সঙ্গে এর বেশ ফারাক রয়েছে৷ বিশেষ করে এর পাখার ধরন এবং প্রজননতন্ত্র সম্পূর্ণ আলাদা৷

বিজয় জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালে বিয়ের ঠিক পরেই তাঁরা কোনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কথা ভাবছিলেন৷ তখনই মাকুন্দা খ্রিস্টান মিশনারি লেপ্রসি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে কাজের সুযোগ পান৷ করিমগঞ্জ জেলার একেবারে প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালটি প্রায় বন্ধের পথে ছিল৷ ৩০ বছরের চুক্তিতে স্বামী-স্ত্রী দুই চিকিৎসক তামিলনাড়ু থেকে করিমগঞ্জ জেলার মাকুন্দায় চলে আসেন৷ ২০০৮ সালে আসে তাঁর জীবনের আর এক পর্ব৷ তিনি আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন৷ একটু সুস্থ হতেই শুরু করেন প্রাতর্ভ্রমণ৷ সে সুযোগে ৩৫০ একর জঙ্গলঘেরা জমিতে তৈরি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে থাকেন৷ বিজয় বললেন, “তখনই আমার চোখ খুলে গেল৷ পৃথিবীর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম৷ কত ধরনের উদ্ভিদ-প্রাণীর যে দেখা মিলল! শখ হল তাদের ক্যামেরাবন্দি করার৷”

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেরিয়ে পড়তেন ক্যামেরা নিয়ে৷ এ ভাবেই একদিন সন্ধান মেলে এক মথের৷ প্রথম দর্শনেই তাঁর মনে হয়েছে, এ ভিন্ন প্রজাতির৷ বিজ্ঞানীদের কাছে এর ফোটো পাঠিয়ে শুরু করলেন গবেষণা৷ দেশ-বিদেশের ছয় বিজ্ঞানীও ঘাঁটাঘাটি করে দেখেন, এমন মথ এর আগে দেখা যায়নি৷ তাঁদের মতামত দেখেই ‘জুনুভা’ বিজয় আনন্দের মথ আবিষ্কারের কথা বিশ্ববাসীকে জানান৷ মাকুন্দা মথ বা এনডকলাইটা মাকুন্দাকে ‘জুনুভা’র স্বীকৃতি বিশেষ প্রাপ্তি বলেই উল্লেখ করেন সিটিজেন সায়েন্টিস্ট বিজয় আনন্দ৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker