India & World UpdatesAnalytics

কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব, বিতর্কে মোদি!

২৪ জুলাইঃ কাশ্মীর নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ নিয়ে এখন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ভারত জুড়ে। আন্তর্জাতিক স্তরেও ট্রাম্পের প্রস্তাব বিভিন্ন ধরনের চর্চা চলছে। বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। কারণ সোমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মোদিও তাঁকে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে অনুরোধ করেছেন। মধ্যস্থতা করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান ইমরান। কিন্তু ভারতের তরফে বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট জানানো হয়, এমন কোনও অনুরোধ মোদি করেননি। কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান করতে হবে। বিরোধী নেতা, প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও ট্রাম্প ‘বাড়াবাড়ি করছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনই বিষয়টি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্তরে নতুন করে আলোচনা শুরু করা উচিত।

প্রবীণ সিপিএম নেতা এম ওয়াই তারিগামির বক্তব্য, ‘‘বিদেশ মন্ত্রক ব্যাখ্যা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর এ নিয়ে মুখ খোলা উচিত। কারণ, আমেরিকা কাশ্মীরে নাক গলালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আফগানিস্তান-সহ যে দেশেই ওয়াশিংটন নাক গলিয়েছে সে দেশই বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। দ্বিপাক্ষিক স্তরে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাশ্মীর সমস্যা মেটাতে হবে।’’

কূটনীতিকদের মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পকে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে বলেছিলেন? নাকি, দু’জনের বাক্যালাপের সময় কোনও ভাষাগত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল? জেনে বুঝেই কি এমন অসত্য বললেন ট্রাম্প? এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।

মার্কিন বিদেশ দফতরের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তানের ‘দ্বিপাক্ষিক’ বিষয়। তবে উপমহাদেশে উত্তেজনা কমাতে যে কোনও উদ্যোগকে সমর্থন করতে তৈরি আমেরিকা। ট্রাম্প সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। এই সমস্যা মেটাতে গেলে পাকিস্তানকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করে ওয়াশিং‌টন। কিন্তু পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ দিনও স্পষ্ট জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক স্তরে এই সমস্যা মেটানো অসম্ভব।

এ দিকে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রথমে রাজ্যসভা এবং পরে লোকসভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন, মোদী ট্রাম্পকে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার কথা কখনও বলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সুনির্দিষ্টভাবে সংসদকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এই ধরনের কোনও অনুরোধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে যায়নি। আমি আবারও আমাদের ধারাবাহিক অবস্থানকেই স্পষ্ট করে দিতে চাইছি।  ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বকেয়া সমস্ত বিষয় নিয়ে একমাত্র দ্বিপাক্ষিক স্তরেই আলোচনা সম্ভব।’ তবে বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতিতে সন্তুষ্ট নন  বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলুন।

আমেরিকায় প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রণেন সেনের কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই আমেরিকা আমাদের বিদেশনীতির জটিলতার তারতম্য ও সূক্ষ তফাত বোঝে না। তবে এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয় কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’’ তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো জঙ্গি-দমন প্রসঙ্গে কাশ্মীরের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। সেটার ভুল ব্যাখ্যা করেছে হোয়াইট হাউস।

কূটনীতিকদের একাংশ এ-ও মনে করিয়েছেন, যে কাতারকে জঙ্গিবাদের উৎস বলে চিহ্নিত করেছিলেন ট্রাম্প, সেই কাতার পরে আমেরিকার থেকে অস্ত্র কেনার জন্য বিরাট অঙ্কের চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে।

ও দিকে, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়া কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে ভারতের প্রতিক্রিয়ায় তিনি ‘বিস্মিত’ বলে টুইট করেছেন। ইমরান এ-ও জানিয়েছেন, ভারত যদি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ করে, পাকিস্তানও সেই পথে হাঁটবে। তাঁর কথায়, পরমাণু যুদ্ধ কখনও বিকল্প হতে পারে না। এটা আত্মহননের পথ।

হোয়াইট হাউসে ইমরানের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প গত কাল দাবি করেছিলেন, তাঁকে কাশ্মীরে মধ্যস্থ হতে বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের এক ঘণ্টার মধ্যেই আমেরিকার একটি সংবাদমাধ্যমকে ইমরান বলছেন, ‘‘দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’’ ইসলামাবাদ বরাবরই কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে দেখাতে চায়। ট্রাম্পের বক্তব্যে সেই সুর প্রতিধ্বনিত্ব হওয়ায় স্বভাবতই খুশি পাকিস্তান। এ নিয়ে ইমরানের মন্তব্য, ‘‘জেনারেল মুশারফ এবং প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর আমলে আমরা এক বার কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম। কিন্তু আমরা এখন বিপরীত মেরুতে। আমি মনে করি, ভারতের আলোচনার টেবিলে আসা উচিত। এ ব্যাপারে আমেরিকা বড় ভূমিকা নিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।’’

ইমরানের টুইট, ‘‘কাশ্মীর সমস্যা উপমহাদেশের পরিস্থিতি গত ৭০ বছর ধরে জটিল করে রেখেছে। তার সমাধানে ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে ভারতের প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হলাম। কাশ্মীরের প্রজন্মের পর প্রজন্মের ক্ষতি হয়েছে, প্রতিদিন তারা কষ্ট পাচ্ছেন, এই সংঘাতের সমাধান প্রয়োজন।’’ একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের ১৩০ কোটি মানুষের কথা বলছি। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হলে তাঁরা উপকৃত হবেন।’’ পাক প্রধানমন্ত্রীর মতে, ট্রাম্প যদি মধ্যস্থতা করে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তা হলে ১০০ কোটির বেশি মানুষ তাঁকে শুভেচ্ছা জানাবেন।

English text here

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker