Barak UpdatesBreaking News
কালীকুসুম চৌধুরী ছিলেন ষাটের দশকের সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি
-তমোজিৎ সাহা-
গত শতাব্দীর ষাটের দশকে বরাক উপত্যকায় আধুনিক কাব্য আন্দোলনের জোয়ার দেখা দিয়েছিল, শিলচর পেয়েছিল ‘কবির শহর’ অভিধা। সেই উজ্জ্বল সময়ের অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন কবি-গল্পকার কালীকুসুম চৌধুরী। গত ২৮ নভেম্বর রাতে তিনিও চলে গেলেন। মদনমোহনের পরম ভক্ত কালীকুসুম চৌধুরী বরাকের সাহিত্যজগতে নতুন কিছু করার উন্মাদনা এবং আদ্যন্ত কবিতা ও আড্ডাপাগল চরিত্র হয়ে থাকবেন।
পূর্ববঙ্গের বনেদি জমিদারবাড়ির ছেলে হয়েও তাঁকে এপারে এসে জীবনজীবিকার লড়াই করতে হয়েছে। কাছাড় হাইস্কুলে করণিকের পদে কাজ করার সঙ্গে চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা। সারাজীবন কবিতা লিখলেও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশে ছিল প্রবল অনীহা, তাই জীবদ্দশায় কোনও কবিতার বই প্রকাশিত হয়নি। তবে অশোক বার্মার চেষ্টায় কালীকুসুমের কবিতার একটি হিন্দি অনুবাদ সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। তিনটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা এবং প্রকাশ করেছেন– ১৯৬১ সালে শ্রীভূমি, ১৯৬৪ সালে লুব্ধক এবং পরে সোচ্চার। বহু কবিতা সংকলনে তাঁর কবিতা স্থান পেয়েছে। বরাক উপত্যকার প্রথম গল্প সংকলন তাঁরা চার বন্ধু মিলে প্রকাশ করেছিলেন। ‘নীলগোলাপ’ নামে সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। গল্প লিখেছিলেন গণেশ দে, কালীকুসুম চৌধুরী, কিরণশংকর মোহান্ত ও চিরঞ্জীব চৌধুরী। গল্প নিয়ে পরীক্ষা করতে ভালোবাসতেন বলে খুব ছোট আকারে নতুন ধরনের গল্প লেখা তিনিই বরাক উপত্যকায় শুরু করেছিলেন লুব্ধক পত্রিকার মাধ্যমে। তাঁর দুটি ছদ্মনাম ছিল সুপর্ণ ও শ্রীপাঠক। অনেক পরে ১৪১১ বঙ্গাব্দে তাঁর একমাত্র গল্পগ্রন্থ ‘যূপকাষ্ঠ’ প্রকাশিত হয়। মনে পড়ছে ‘যূপকাষ্ঠ’ প্রকাশের পর সাময়িক প্রসঙ্গে বইটির সমালোচনা লিখেছিলাম যা পড়ে তাঁর খুব মনে ধরেছিল। দেশ জাতি রাজনীতি সমাজ নিয়ে তাঁর মনে সবসময় চলত আলোড়ন, আড্ডা এবং সাহিত্যে দিতেন তা ছড়িয়ে। ফলে কালীকুসুমের সাহিত্যে নন্দনের চেয়ে বক্তব্যই সবসময় প্রাধান্য পেয়েছে।
শিলচরে তাঁর খুব কাছের বন্ধুরা ছিলেন দীনেশলাল রায়, গণেশ দে, জিতেন নাগ, হীরেন্দ্র ভট্টাচার্য, অতীন দাশ প্রমুখ।
তাঁর ছেলের বয়সী আমিও পেয়েছি তাঁর পরমস্নেহ। লেখা দিয়েছেন আমার সম্পাদিত উজ্জ্বল পাণ্ডুলিপি এবং মহিমালয় বইয়ে। অসুস্থ হওয়ার আগে বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে নিয়মিত ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা হত, চিঠি লিখতেন। তাঁর এই চলে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে মনটা খুব বিষণ্ণ হয়ে আছে।
|