Barak UpdatesAnalyticsBreaking News
কবি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য ও তাঁর মৃত্যু —লিখেছেন সমরবিজয় চক্রবর্তী
২৭ সেপ্টেম্বর : মৃত্যু তো স্বাভাবিক প্রতিটি জীবনে। কিন্তু কারও কারও মৃত্যু যখন সমাজ এবং মানুষের জন্য ক্ষতিরকারক হয়, তা কোনক্রমেও মেনে নেওয়া যায় না। কবি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য-এর মৃত্যু এরকমই কিছু।মাত্র ৬৫ বছর তাঁর বয়স। এ বয়সে তাঁর কলম থেমে যাওয়া,এ অঘটন নয় তো কী!
বিজয় সর্বান্তঃকরণে কবি এবং এই অঞ্চলের অন্যতম বলিষ্ঠ কবি। তাঁর অকালে চলে যাওয়ায় সম্ভাব্য ভালো আরো পাবার আকাঙ্ক্ষাকে রুদ্ধ করে দিল। বাংলা ভাষা আজ ২২টি ভাষার একটি অর্থাৎ ভারত সরকারের কাছে আঞ্চলিক ভাষা। এই ভাষায় লিখে অর্থ উপার্জন করা আজকের দিনে দুষ্কর। এক সময়ে বাংলায় লিখে ভালো করেই জীবন কাটিয়েছেন কেউ কেউ, এরমধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অন্যতম।আজকের দিনে এই অঞ্চলে সাংবাদিকতা করে আর লেখকের জীবন আঁকড়ে ধরে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ কোনও দিন হবার নয়, এ কথায় কারোর দ্বিমত হবার নয়। চরম আর্থিক দৈন্যতার মধ্যে বিজয় সাহিত্য সৃষ্টি করতে পেরেছেন শুধুমাত্র সাহিত্যিকতা তাঁর প্যাশন বলে।
এতো দৃপ্ত তাঁর লেখা এ অঞ্চলে মেলা ভার। তাঁর রোমান্টিক ছায়াপথের মধ্যেও পৌরুষময়তা রয়েছে এবং তা আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। বিজয়ের গদ্য লেখায়ও তাঁর নিজস্ব ছাপ রয়েছে। তিনি তাঁর লেখায় জীবনযাত্রার বিবিধ ক্রিয়াশীল দিক নিয়ে নতুন বাতায়ন সৃষ্টি করেছেন।
বিজয় উপলব্ধি করতেন এখানকার মানুষ ভেতর ভেতর গুমরে কাঁদছে। এক চরম সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা। এই সংকট ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিক তো বটেই, আত্মিক সংকটও। আমাদের সমাজ, আমাদের জীবনপ্রণালী, ঘটমান পারিপার্শ্বিক নৃশংসতা যা প্রতিদিন আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তাঁর লেখায় এসবের রেখাপাত তাঁর মতো করে স্পষ্ট। তাঁর কিছু কিছু কবিতা একান্তে পাঠ করার জন্য, নির্মম সত্যকে উপলব্ধি করা যায় একান্তে।এ রকম কবিতাতেও তাঁর সাহিত্যমূল্য এতোটুকুও ফসকে যায়নি।
যত বড় কবি-সাহিত্যিক বিজয় হন না কেন, তিনি কিন্তু সে মর্যাদা পাননি। তাঁর কবিতার চিত্রকল্পতায় যে রূপময়তা তিনি নিয়ে এসেছেন তা ব্যতিক্রমী। নিজস্বতায় ভরা তাঁর লেখা। বিজয় যথার্থ অর্থে একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে সম্ভব হয়েছেন বলে আমার ধারণা। সাহিত্যের গবেষকরা আশাকরি তাঁকে নিয়ে গবেষণা করবেন আর তখন আরো নতুন দিকের উন্মোচন হবে বলে আশাবাদী।
বিজয় হারিয়েছেন তাঁর আত্মজকে, তাঁর ছেলেকে। এই শোক তিনি সামলাতে পারেননি-কোন পিতাই বা পারে! এই শোকই বুঝি তাঁর পক্ষে বোঝা হয়েছিল এতোটাই, জীবনের শেষ যাত্রায় তুলে নিয়ে যায় তাঁকে।
শেষ করছি —বিজয়কুমার ভট্টাচার্য-এর “নরকেও সূর্যোদয় হয়”এর থেকে কয়েক কলি দিয়ে—
“এসেছেন শ্রীগৌরাঙ্গ—সর্বকালের মহাপ্রভু
যিনি, সপার্ষদ কীর্তনাঙ্গে নিয়ে হরিনাম গান, দুই হাতে ভেঙেছেন
কাঠখোট্টা কাজির বিচারের কঠিন শৃঙ্খল, আচন্ডাল-ব্রাহ্মণে
শিখিয়ে গেছেন হরে কৃষ্ণ হরে রাম নাম সংকীর্তন, ষোল নাম
বত্রিশ অক্ষরে খুলেছেন সকল স্বর্গ, নরকের রুদ্ধ দরজা”।