Barak UpdatesBreaking News
এক পশলা বৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত গুমড়া ডাকবাংলো টইটম্বুর
২৬ জুনঃ এক পশলা বৃষ্টি পড়তেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত গুমড়া ডাকবাংলো জলে টইটম্বুর। গুটি গুটি পায়ে সাত দশকের দোরগোড়ায় দাঁড়ালেও পূর্ত বিভাগের চরম গাফিলতির জন্য গুমড়া ডাকবাংলো ইতিহাসের পাতায় চলে যাওয়ার প্রহর গুনছে। আশেপাশের সব বাড়িঘর সহ ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক উঁচু হয়ে যাওয়ার ফলে ডাকবাংলোর জায়গাটি নীচে পড়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জল থইথই করে। ওখানে থাকা রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জির এনএসকে-তে আসতে সমস্যায় পড়ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সহ সাধারণ জনগণ। গত দশ বছরে ডাকবাংলোর কোনও মেরামতি হয়নি। ভেতরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ডাকবাংলোটি অসম সরকারের পূর্ত বিভাগের হলেও বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের বিমাতৃসুলভ আচরণের জন্য ক্রমে ধংসের দিকে এগোচ্ছে, যেভাবে ধ্বংস হয়েছে কাটিগড়া চৌরঙ্গীস্থিত বিভাগীয় ডাকবাংলোটি।
গুমড়া ডাকবাংলোর এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আসামের রাজধানী যখন মেঘালয়ের শিলংয়ে ছিল, তখন এই ডাকবাংলো তৈরি করা হয়েছিল গুমড়া নদীর পাশে। নদীতে তখন কোনও সেতু ছিল না। যাত্রী ও দ্রব্যসামগ্রী পারাপারের জন্য দুটি বড় নৌকাকে পাশাপাশি লাগিয়ে জুড়িন্দা ব্যবহার করা হতো। তৎকালীন অবিভক্ত কাছাড়ের অনেক ব্যাক্তি সহ জনপ্রতিনিধিদেরকে অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল বদরপুর-জোয়াই সড়ক ধরে নানা কাজে রাজধানী শিলংয়ে যেতে হতো। ১৯৫০ সালে তৎকালীন আসাম সরকার জনপ্রতিনিধি ও সরকারি আমলাদের পথের ক্লান্তি লাঘব করার জন্য গুমড়া নদীর পাশে এই ডাকবাংলো তৈরি করে। কারণ অত্যন্ত কঠিন সড়ক দিয়ে শিলং থেকে গুমড়াতে আসার পর নদী পার হতে হতে রাত নেমে আসায় উপত্যকার অন্যত্র যাওয়ার জন্য গাড়ি পাওয়া যেত না। অন্যদিকে যারা শিলং যেতেন তারা সন্ধ্যায় এসে গুমড়া ডাকবাংলোতে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরের গাড়ি ধরতেন। প্রথমে এই ডাকবাংলোটি বাঁশ, কাঠ, ছন ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হয়েছিল।
পশ্চিম কাটিগড়ার প্রবীণ নাগরিক অনিলবাবু সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ১৯৬৬ সালে গুমড়া নদীর উপর আরসিসি সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৬৭ সালে। নদীর উপর সেতু তৈরি হলেও ডাকবাংলোর গুরুত্ব কমেনি। অনেক নেতা-মন্ত্রীদের এখানে আসা-যাওয়া চলতে থাকে। সত্তরের দশকে গুমড়া ডাকবাংলোর গুরুত্ব বেড়ে যায় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা অধুনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। ভারতীয় সেনার গোয়েন্দা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেক গোপন সভা হয়েছে এখানে। ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে তৎকালীন সময়ে ভারতীয় সেনা কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের কুচকাওয়াজ করাবার দৃশ্য দেখেছেন এমন মানুষ এখনও জীবিত রয়েছেন।
এই ডাকবাংলোয় বসে পরিকল্পনা এঁটে বাংলাদেশের মাটিতে অনেক সফল অপারেশন চালানো হয়েছিল। কাটিগড়ার তৎকালীন বিধায়ক প্রয়াত আব্দুল হামিদ মজুমদার থেকে প্রয়াত বিধায়ক কালীরঞ্জন দেবের আমল পর্যন্ত এর দেখভাল ভালই ছিল। ২০০৬ সালে আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া বিধায়ক হবার পর থেকেই শুরু হয় ডাকবাংলোটির অন্তর্জলি যাত্রা। বিধায়কের নিস্ক্রিয়তায় ও পূর্তবিভাগের চরম গাফিলতিতে বর্তমানে এটি অস্বাস্থ্যকর ডোবায় পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে ডাকবাংলোর কোয়ার্টারে পূর্ত বিভাগের এক চৌকিদার রয়েছেন। তিনি যতটা সম্ভব ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিভাগীয় তরফে কোনও সাহায্য না পাওয়ায় তার দ্বারাও কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। পূর্ত বিভাগের এক সূত্র জানাচ্ছেন, আপাতত গুমড়া ডাকবাংলোতে কাজ করাবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নেই এবং আগামীতে এটির সংস্কার করাবার জন্য কোনও প্ল্যান-এস্টিমেটও তৈরি নেই। তাহলে কি কাটিগড়া চৌরঙ্গী ডাকবাংলোর মত এটিও ধংসের প্রহর গুনছে? অনেক ঘটনার সাক্ষী গুমড়া ডাকবাংলোকে রক্ষা করতে স্থানীয় বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন ও আসাম সরকারের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার জনগণ।