Barak UpdatesCulture
অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে চলছে গানমেলা
৩১ ডিসেম্বর : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বার্তা নিয়ে শিলচরে শুরু হল গান মেলা। বাঙালি সংস্কৃতির মোড়কে ইংরেজি নতুন বছর বরণের এই প্রয়াস গত ৬ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে শিলচরের দুটি সংগঠন সমকাল ও স্বরলিপি। এ বার সপ্তম বছরেও ভাল সাড়া পেয়ে যাচ্ছে গান মেলা কমিটি। আসলে ইংরেজি বছরকে স্বাগত জানানোর নামে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে এ শহরে যে বেলেল্লাপনা নতুন আমদানি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদের নামই গান মেলা। তিন দিনের এই আয়োজন শুরুর লগ্নে কথাট বলেওছেন অন্যতম উদ্যোক্তা অরিন্দম ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে কিছু সময় একানে কাটিয়ে গেলে সত্যিই এক উৎসবের আমেজ পাবেন সবাই।
প্রথমদিকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছিল গান মেলা, কিন্তু দেখতে দেখতে এই অনুষ্ঠান যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে প্রচণ্ড আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে মেলা চললেও বাংলা গান ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার কথা ভেবে তাঁরা মেলা চালিয়ে যাচ্ছেন, বলেন অরিন্দম। জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়াম চত্বরে রবিবার তিন দিনের গানমেলার উদ্বোধন করেন কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রবি কান্নান। এই মঞ্চটি বিভিন্ন মানুষকে একসূত্রে বেঁধে রাখার যথাযথ প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে তিনি বলেন, শরীর ও মন সুস্থ রাখতে সঙ্গীত চর্চার এক বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে মিউজিক থেরাপির কথাও বলেছেন। পাশাপাশি এই মেলাকে তামাক সেবনের কু-অভ্যেস থেকে দূরে রাখতে তিনি সবাইকে আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি শিক্ষাবিদ সঞ্জীব দেবলস্কর বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে গানের মাধ্যমে বাঙালি তার প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজও প্রতি মুহূর্তে সেই গানের সুর-তাল-লয় সবার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন প্রদীপ পাল, ড. বিভাস দেব, দীপক ভট্টাচার্য, বাবুল হোড় প্রমুখ। গান মেলা কমিটির পক্ষে সভাপতি শিবব্রত দত্ত, কার্যকরী সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য, গোরা চক্রবর্তী, অরুন্ধতী দত্তরায় প্রমুখও বক্তব্য রাখেন।
এর আগে অবশ্য এ দিন সকালে এক প্রভাতফেরি আয়োজন করে গান মেলার সূচনা করে কমিটি। প্রথম দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নতুন ও পুরনো বহু শিল্পী তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। অসিত চৌধুরী ও বিশ্বজিত করের স্মৃতিতে মঞ্চে যেমন গান চলেছে, তেমনি সঙ্গে গোটা চত্বরে চলতে থাকে শিল্পরসিকদের আড্ডা। আবার পরিবেশটাকে সাজিয়ে তুলতে বিভিন্ন স্টল রাখা হয়। এতে খাবার দাবারের আইটেম যেমন থাকে, তেমনি ফটোগ্রাফির স্টল, কাপড় বা হাতে তৈরি বিভিন্ন সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন হাজির হয়। ফলে গানমেলার প্রতি সন্ধ্যায় এক নান্দনিক পরিবেশই উপহার দেন আয়োজকরা।
এদিকে, ৩০ ডিসেম্বর শিশুমেলার আয়োজন করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ত্রিপুরার পিন্টু বাউল ও সঞ্জয় বাউলের সঙ্গীতানুষ্ঠান থাকবে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ শিল্পী তিন দিনে অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা। উদ্যোক্তারা বলেন, ইংরেজি নতুন বছরকে বরণের বিশেষ মুহুর্তটি বাংলা গানের মাধ্যমে উদযাপন করবেন। এই গানই হবে অপ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাদের অন্যফম হাতিয়ার।