Barak Updates
মৌলবীদের আপত্তি উড়িয়ে হজ সেরে ফিরলেন কাছাড়ের ৪ মহিলা
১১ সেপ্টেম্বর: পুরুষ সঙ্গী ছাড়া হজ সেরে ফিরলেন কাছাড়ের চার মহিলা। তারাই অসমের প্রথম মহিলা দল। ২০১৮ সালে ভারত ও সৌদি সরকার এ ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয় । পুরুষ সঙ্গী ছাড়া যাওয়ার ব্যাপারে দুটিই শর্ত। বয়স হতে হবে ৪৫-র বেশি এবং দল গড়তে হবে ৪ মহিলা মিলে। এমন শর্ত পূরণ কঠিন কিছু নয় । তার পরেও প্রথম বছর অসম থেকে কোনও মহিলা দল যায়নি। তবে সে বার সরকারি প্রতিনিধি বা খাদিমূল হজ্জা হিসেবে গিয়েছিলেন কাছাড় জেলার রংপুরের বাসিন্দা মিনারা বেগম মজুমদার । সারা দেশ থেকে ১৪০০ মহিলা গেলেও অসমের কোনও দল না থাকাটা তাকে পীড়িত করে। সেখান থেকে ফিরেই তিনি দল গঠনে উদ্যোগী হলেন। টের পেলেন, নিরাপত্তার অভাব বা অর্থ জোগানো মূল সমস্যা নয় । মৌলবীরাই প্রধান বাধা। কোথাও কোনও মহিলা রাজি হলেই রাস্তায় নেমে পড়েন মৌলবীরা। তাদের বক্তব্য, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া হজ করতে যাওয়া শরিয়ত বিরোধী। কিছু জায়গায় মসজিদের মাইক থেকেও সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়। মিনারা বেগম জানান, এক সময় এমন হয় যে, একাংশ অর্থ জমা দেওয়ার পরও এক-দুইজন না যাওয়ার মনস্থ করে নিয়েছিলেন। তিনি তাদের দফায় দফায় বোঝান। শেষপর্যন্ত মৌলবীদের বিরুদ্ধে জয় হাসিল করেই ছাড়েন তিনি। সক্ষম হলেন চার মহিলার দলটিকে হজে পাঠাতে। তাঁরা হলেন আয়েষা বেগম মজুমদার, কমলা খাতুন, আয়ারুন্নেসা এবং জিয়াতুন্নেসা বড়ভুইয়া। মিনারা বেগম জানান, প্রচুর মহিলা আগ্রহী। মৌলবীদের জন্য সাহস পান না। তাঁর কথায়, সবারই ইচ্ছে থাকে, একবার মক্কা ঘুরে আসবে। কিন্তু প্রচুর খরচ। একেকজনের সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। ফলে কে কাকে নিয়ে যাবে! শরিয়ত মেনে আবার পুরুষ সঙ্গী পেলেই যাওয়া যাবে না। নিজের স্বামী, ভাই, ছেলে বা অতি ঘনিষ্ট আত্মীয় হওয়া চাই। ফলে শুধু মহিলারা দল বেঁধে যেতে পারলে সমস্যা নেই।
নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় একই কথা বললেন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী আয়েষা বেগম মজুমদার। জানিয়েছেন, মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছেতেই ২০১৪ সালে পাসপোর্ট বানান। তিনি বিধবা। ২ ছেলেই কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকেন। তাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৮-র সরকারি ঘোষণা তাকে ফের আগ্রহী করে তোলে। যোগাযোগ হয় মিনারা বেগমের সঙ্গে। তিনিই চারজনের দল গড়ে দেন। আয়েষা বেগমের অভিজ্ঞতা, পুরুষ ছাড়া বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয়নি। মোট ৪১ দিনের সফরে মদিনা-মক্কা ঘুরে এসেছেন। সর্বত্র সুন্দর ব্যবস্থাপনা।
আয়েষা বেগমদের কথায় উজ্জীবিত হন মিনারা বেগম মজুমদার। বললেন, মৌলভীদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আগামী বছর তিনি মহিলা দল পাঠানোর চেষ্টা করে চলেছেন।