Barak UpdatesBreaking News
ভিসা হলই না, ছেলেকে খুইয়ে বাড়ি ফিরলেন আব্দুর-মায়ারুন্নেসা
৮ আগস্টঃ শেষমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন ভিসার জন্য। কিন্তু সোমবার সকালে হজযাত্রীদের নিয়ে কলকাতা থেকে শেষ বিমান আকাশে ওড়ে। তাঁরাও বাধ্য হয়েই শিলচরের বিমান ধরেন। প্রতারক ট্র্যাভেল এজেন্সির পাল্লায় পড়েছেন অসমের মোট ৯৫ জন। সবার আক্ষেপ, এতদিনের স্বপ্ন, প্রস্তুতি! সব শেষ হয়ে গেল। অন্য ৯৩ জনের চেয়ে গুমড়া পাইকানের আব্দুর রহমান-মায়ারুন্নেসার যন্ত্রণার জায়গাটা পৃথক। তাঁদের দ্বিতীয় ছেলে কাজিমউদ্দিনই মা-বাবার হজযাত্রার সবকিছু দেখভাল করছিলেন। মা-বাবাকে কলকাতায় বিমানে তুলে দিতে কাজিমও গিয়েছিলেন কলকাতায়। কিন্তু সেখানে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ৩৫ বছরের ছেলের।
এ বার কী করবেন তাঁরা! সবাই বললেন, ছেলের আত্মার শান্তির প্রার্থনা করতেও তাদের হজে যাওয়া উচিত। পরিবারের অন্যান্য সদস্য কলকাতা গিয়ে কাজিমের মৃতদেহ নিয়ে আসে। আব্দুর-মায়ারুন্নেসা কলকাতায় অস্থিরতার সঙ্গে বসেই রইলেন। এজেন্সি প্রতিনিয়ত বলে গিয়েছে, ভিসা আসবেই। শেষ বিমানে যাওয়া নিশ্চিত। ডেপুটি স্পিকার আমিনুল হক লস্কর কলকাতা গিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, আলহাবিব ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল এজেন্সির হজযাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও রেজিস্ট্রেশনই নেই।
উমরাহ হজে কখনও এক-দুইকে নিয়ে যেতে অনুমতি প্রদান করা হয়। সে কথা স্বীকার করে নেন আলহাবিবের কর্ণধার সবরেজ আসলম। সমস্ত টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তাঁরা। মাথা পিছু ৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন সবাই। ওই টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় থানা বা আদালতে যাননি কেউ। আব্দুর রহমান জানান, দুটো গাড়ি বিক্রি করে হজের টাকা জোগাড় করেছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন মায়ারুন্নেসা। বারবার বলতে থাকেন, হজ তো হলই না। মাঝে আমার ছেলেটাকে হারালাম।
গুমড়া থেকে তাঁরা তিন পরিবারের ছয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হজে যাওয়ার জন্য বেসরকারি সংস্থাটির খপ্পড়ে পড়েন। এরমধ্যে বাড়ি থেকে রওয়ানা হওয়ার একদিন আগে মসজিদ থেকে বেরিয়েই হোঁচট খেয়ে পড়ে যান সামসুল হক বড়ভুইয়া। পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পাওয়ায় তাঁরা স্বামী-স্ত্রী হজযাত্রা বাতিল করেন। আব্দুর রহমান আশাবাদী, আগামী বছর সবাই মিলে হজে যাবেন। তবে সে বার আর বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নয়। যাবেন রাজ্য সরকারের হজযাত্রী দলের এক সদস্য হিসেবে।