AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/১৯ঃ আসাম চুক্তি রাজনৈতিক বোঝাপড়া মাত্রCitizenship/19: Assam Accord is just a political understanding
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ১৯-তম কিস্তি।)
৩ মার্চঃ ২১. এই বিল দুই ধরনের মেরুকরণ তৈরি করবে। একদিকে ভাষিক মেরুকরণ, অন্যদিকে ধর্মীয় মেরুকরণ। তা সমাজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করবে। বর্তমান অবস্থায় হোক বা যে কোনও সংশোধিত চেহারায়, বিলকে কোনওভাবে সমর্থন করা যায় না।
২২. অল আসাম বেঙ্গলি পরিষদ ও ন্যাশনাল লিবারেশন ফোর্স অব বেঙ্গলি বিলের সমর্থন করে বলেন, অসমের আদি বাসিন্দাদের সঙ্গে বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অবিভক্ত ভারতের নাগরিকদের মানবিক কারণে নাগরিকত্ব প্রদান করা হোক।
২৩. হিন্দুদের ভূমি হিসেবে ভারতে বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের থাকার ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন। নাগরিকত্বের জন্য যে সব নথিপত্রের প্রয়োজন, তাতে ছাড় দেওয়া হোক। শরণার্থীদের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দুদের যে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
২৪. দেশভাগের সময় ছড়িয়ে পড়া মানুষগুলিকে মানবিক কারণেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হয়।
২৫. আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকত্বের সময়সীমা প্রস্তাবিত ৬ বছরের জায়গায় ৬ মাস করা হোক। মধ্যবর্তী সময়ে তাকে ডিমড সিটিজেন-এর মর্যাদা দেওয়া হোক।
২৬. শিলচর অসমেরই একটি অংশ। পুরো অসমিয়া সমাজ এ কথা মেনে নেবে যে, অসমে যারাই আসেন, তারা সকলের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকেন। দেশভাগের শিকার বাঙালি হিন্দুরা অসমের আদি বাসিন্দাদের কাছে মোটেও হুমকি নয়। তাই প্রয়োজনীয় আইন প্রণীত হোক।
২৭. গত নির্বাচনের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান করা হোক। আসাম চুক্তি যেহেতু একটা রাজনৈতিক বোঝাপড়া মাত্র, তাই তাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। নাগরিকত্ব আইনের ৬ নং ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৮. বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই তারা সীমান্ত পেরিয়ে এ দিকে চলে আসে। কিন্তু গত ৫ বছরে কত শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে বরাক উপত্যকায় ঢুকে বসবাস করছে, এর কোনও হিসেব কোথাও নেই।
২৯. প্রত্যর্পণের নীতি তৈরি করার জন্য এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
৩০. নতুন আইনে উপজাতিদের অধিকার সুরক্ষা করা চাই। বর্তমান বিল নানা সমস্যার সৃষ্টি করবে। উদ্বাস্তুরা সংখ্যালঘু জনজাতিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে থাবা বসাবে। তাদের অধিকাংশ জমি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদেরই দখলে।
৩১. লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশির বোঝা পুরো দেশ ভাগ করে নিক, অসম একা নয়।
৩২. মেঘালয়ের আদি জনজাতি গোষ্ঠী বিলের বিরোধিতা করছে। রাজ্যের জনজাতিরা বারবার আন্দোলন করছে, রাজ্য সরকারের কাছে উপজাতি অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য দাবি জানাচ্ছে। তারা জমি, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক পরিবেশের সুরক্ষা চাইছে। অজনজাতিদের অনুপ্রবেশের দরুন তারা খুব চিন্তিত। ভৌগোলিকভাবেও তাদের এলাকা খুব সীমিত। অন্য দেশের উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য সরকারের যে অভিপ্রায়, তাতে জনজাতি অঞ্চলে অনুপ্রবেশ সমস্যা মাথাচাড়া দেবে। এমনিতেই উত্তর-পূর্ব সহ সমগ্র ভারতে অনুপ্রেবশকারীরা ছড়িয়ে রয়েছে। এর ওপর বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এই অঞ্চলে। ফলে এই বিল ভারতের স্বার্থে কাজে আসবে না।
৩৩. উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যেও এনআরসি চালু করা হোক।
৩৪. বাংলাদেশে হিন্দুরা কোটি কোটি, আর মেঘালয়ে খাসি মাত্র কয়েক লক্ষ। তাই এই বিল থেকে মেঘালয়কে বাদ দেওয়া হোক।
৩৫. মেঘালয় ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত রাজ্য। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষাই ষষ্ঠ তফশিলের মূল কথা। উত্তর-পূর্ব যদি সুরক্ষিত না থাকে, এই বিল পাস হলে এবং মেঘালয়ে তা কার্যকর হলে এর প্রভাব ভাবনার অতীত হবে।
৩৬. আদি বাসিন্দা হয়েও গারো জনগোষ্ঠীর মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে। অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য ২০০৬ সালে তারা নিজেদের জন্য পৃথক রাজ্য দাবি করে। মুসলমানরা গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। এখন যদি হিন্দু বাংলাদেশিদেরও অনুমতি দেওয়া হয়, তবে হিন্দুদের সঙ্গে আরও মুসলমান ঢুকবে। মেঘালয়কে তাহলে আরও বোঝা বইতে হবে। বন্যার সময় মানবিক কারণে তাদের আসতে দেওয়া হয়। শরণার্থী হিসেবে ভারত সরকার তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়, কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখা যায়, তারা কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যায়। তাই মেঘালয়ে ইনার লাইন পারমিট সিস্টেম কড়াভাবে চালু হওয়া উচিত।