Barak UpdatesBreaking News
জীর্ণকে মুছে ফেলে নতুনকে আঁকড়ে ধরাই তো রবীন্দ্র দর্শন
ভাস্করজ্যোতি দাস
আমাদের একটা ভাঙা জীর্ণ ট্যাপ রেকর্ডার ছিল। সকালে উঠেই বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত চালিয়ে দিতেন। তখন যে সব গানের অর্থ বুঝতাম, এমন তো নয়, তবুও একধরনের ভালো লাগা কাজ করতো। একরকম অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম আমরা দুই ভাই। গানগুলো অনেকটা কবিতার মতো মনে রাখতে পারতাম। মাঝে মাঝেই একা একা আওড়াতাম, গানের কলিগুলো। এভাবেই রবি ঠাকুরকে নিজের জীবন প্রভাতে পেয়েছিলাম। ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে, সকালটা হয়েও যেন হতো না। তারপর তো প্রতি ক্লাসে ক্লাসে রবি ঠাকুরকে পেয়েছি। প্রার্থনা দিয়ে শুরু, এখনও শেষ হয়নি, ক্যামিলিয়া যতো পড়ি, ততোই নতুন মনে হয়। “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।”.. এই কবিতার এই পংক্তিটি হিসেবহীন ভাবে পথে ঘাটে বলে বলে হাঁটতাম।
যখন আমি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ২৫ বৈশাখে প্রবন্ধ পাঠ প্রতিযোগিতা হয়েছিল। আমার ছোট মাসির বান্ধবী বর্ণালী মাসি, আমাকে প্রবন্ধ লিখে দিয়েছিল, দুই একবার প্র্যাক্টিস করেছিলাম তাঁর বাড়িতে। সেই আমার প্রথমবারের মতো স্টেজে ওঠা। প্রথম পুরষ্কার পেয়েছিলাম, “রামের সুমতি” বইটি। এভাবেই জীবনের প্রতিটি মোড়ে রবি ঠাকুরের ছাপ রয়ে গেছে। আসলে বাঙালি মাত্রেই সেই ছাপের প্রতিলিপি নিয়ে বহমান। একদিন কলেজ লাইব্রেরিতে বসে, ‘মুক্তধারা’ একশ্বাসে পড়ে ফেলেছিলাম। তারপর পড়াশোনার স্বার্থে, মুক্তধারা, ডাকঘর, রক্তকরবী পড়তে হয়েছিল। স্বপ্ন দেখেছিলাম প্রথাবিরোধী, প্রচলিত প্রতিষ্ঠান বিরোধী হবার। সামাজিক সংস্কার ও বিপ্লবকে ভালোবাসার।
এভাবেই মানবতার পাঠ ও যুক্তিবাদী মননে আশ্রয় রবি ঠাকুর আমাদের ঘিরে রেখেছেন। তিনি নিজেও তো একটা “প্রতিষ্ঠান” হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তবুও এ প্রতিষ্ঠান আমাদের আশ্রয়স্থল। আমাদের বেঁচে থাকা কিংবা হয়ে ওঠা, এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই। আবার উল্টো করলে বললে, এ কথাও নিশ্চিতে বলতেই পারি, এই প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে নতুনের আহবানকে স্বীকার করে, এগিয়ে যাওয়া.. জীর্ণকে মুছে ফেলে নতুনকে আঁকড়ে ধরা সেটাও রবীন্দ্র জীবন দর্শন। কবিতা, ছোট গল্প, বড় গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান, নৃত্যনাট্য, কবিতায় আমরা পাই মানবতার অনিন্দ্য সুন্দর চেতনা। আজ পঁচিশে বৈশাখের পূণ্য তিথিতে এই অন্ধকার সময়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সবার সংকল্প হোক, নিজেকে আরও বেশি রাবীন্দ্রিক করার , আরও বেশি মানবিক হবার।